এবারের ঈদে মা-বাবা, স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গেই সময় কাটাতে চান তাসকিন।
এবারের ঈদে মা-বাবা, স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গেই সময় কাটাতে চান তাসকিন।

করোনায় ক্রিকেটারেরা কে কীভাবে ঈদ করবেন?

গত বছরও ঈদ কেটেছে করোনার ভীতিকর আবহে। এবারও করোনা পরিস্থিতি পাল্টায়নি। পরপর দুই বছর ঘরবন্দী ঈদ যেন আগের সেই ঈদ আনন্দকেই ফিকে করে দিচ্ছে। ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এর মধ্যেও অন্য সবার মতো ক্রিকেটাররাও ছোট পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদ্‌যাপন করার পরিকল্পনা করছেন।

শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ শেষে দেশে ফেরার পর থেকেই পরিবার নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে পেসার তাসকিন আহমেদের। জৈব সুরক্ষাবলয়ের কারণে প্রতি সিরিজেই অনেকটা সময় পরিবার থেকে থাকতে হচ্ছে দূরে। সিরিজ শেষে বাড়ি ফিরলেই দেখছেন দেড় বছরের ছেলে তাশফিন আহমেদ যেন আরেকটু করে বড় হয়ে গেছে। এবারের ঈদে মা-বাবা, স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গেই সময় কাটাতে চান তাসকিন। ঈদ শেষ হতে না হতেই যে শ্রীলঙ্কা সিরিজের জৈব সুরক্ষাবলয়ে প্রবেশ করতে হবে।

ঈদ নিয়ে তাসকিন বলছিলেন, ‘করোনার মধ্যে এ নিয়ে তৃতীয় ঈদ। নতুন বাস্তবতার ঈদ, আমার মনে হয় সবারই জানা কী করতে হবে, কীভাবে সুস্থ থাকতে হবে। এখন যা করণীয় তা মেনে ঈদ করাই হবে আমাদের সবার দায়িত্ব। ঈদ তো আনন্দের বিষয়। সেটা পরিবারের মধ্যেই ভাগাভাগি করব।’

ঈদে পরিবারের জন্য রান্না করবেন রুমানা আহমেদ।

মেয়েদের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক রুমানা আহমেদের ঈদ পরিকল্পনাটা ভিন্ন। ঈদের দিনে পুরো পরিবারের জন্য রান্না করে কাটাতে চান তিনি। নিজের রান্নার ওপর খুব বেশি আস্থা না থাকলেও এবার রুমানা একটু ঝুঁকিই নিতে চান, ‘প্রতি ঈদে আমার মা রান্না করেন। আমি নিজে রান্না করব ভাবছি। আমি সব সময় মায়ের রান্নাই পছন্দ করি। এবার একটু ঝুঁকিই নিচ্ছি। দেখি কেমন হয়।’

করোনা পরিস্থিতি খারাপ থাকায় বাইরে এবার আরও সতর্ক থাকতে হচ্ছে সবাইকে। ঈদে দেশের মানুষের চলাফেরা বাড়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার ভয়ও আছে। রুমানা তাই নিজের পরিবারের ছোট্ট বলয়ের বাইরে যাওয়ার ঝুঁকিটাও এড়াতে চাইছেন, ‘গতবারের চেয়েও এবার আরও খারাপ অবস্থা। আমাদের সবারই খুব সতর্ক থাকা উচিত। সতর্ক না থাকলে কী হয়, তা তো আমাদের পাশের দেশে তাকালেই বোঝা যায়। ঈদে তাই বাসাতেই নিজের পরিবারের সবার সঙ্গে যা আনন্দ ভাগাভাগি করা যায়, তা-ই করব।’

এই পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকা ছাড়া তো উপায় নেই। আর আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকা উচিত। কারণ আমাদের দেখে কিন্তু আশপাশের মানুষ প্রভাবিত হয়।
আবু জায়েদ

ঈদে চাইলেও বের হতে পারছেন না পেসার আবু জায়েদ। শ্রীলঙ্কা থেকে আসায় হোম কোয়ারেন্টিন করতে হচ্ছে তাঁদের। সরকার মাঠে অনুশীলনের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু ১৮ মে পর্যন্ত মাঠ ও বাসার বাইরে যাওয়া সাফ মানা, ‘আমাদের তো হোম কোয়ারেন্টিনেই থাকতে হচ্ছে। শ্রীলঙ্কা থেকে আসায় আমাদের বাইরে ঘোরার অনুমতি নেই। আমাদের শুধু মাঠে অনুশীলনের অনুমতি দিয়েছে। তবে আসা-যাওয়া করতে হবে নিজের গাড়িতে। মাঠে গিয়ে শুধু অনুশীলনটা করছি, মাঠকর্মীরা মাঠ প্রস্তুত করে চলে যায়। আশপাশে কেউ থাকে না। এভাবেই চলবে ১৮ তারিখ পর্যন্ত। কোয়ারেন্টিন শেষে আমি ঢাকায় ফিরব ১৯ তারিখ।’

সিলেটে ঈদ করছেন আবু জায়েদ।

পরিস্থিতির কারণে জায়েদের ঈদও করতে হবে ছোট্ট গণ্ডির মধ্যে থেকে, ‘ঈদ এভাবেই কাটবে। কেনাকাটার হইচই নেই। ছোট করে যেভাবে ঈদ করা যায়, সেভাবেই করব। আমার স্ত্রী আমার জন্য আর আমার ভাইয়ের জন্য একটা করে পাঞ্জাবি কিনেছে। এতেই চলে যাবে। এই পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকা ছাড়া তো উপায় নেই। আর আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকা উচিত। কারণ আমাদের দেখে কিন্তু আশপাশের মানুষ প্রভাবিত হয়।’

ওয়ানডে দলের নিয়মিত সদস্য মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন অবশ্য বন্ধুদের সঙ্গে ঈদ আড্ডা দেওয়ার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চান না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ পড়ে বাড়িতেই ছোট করে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে ঈদ করার পরিকল্পনা তাঁর। তবে ঈদের আনন্দে গা ভাসানোর সুযোগটা পাচ্ছেন না ২৩ মে থেকে অনুষ্ঠেয় শ্রীলঙ্কা সিরিজের কারণে। নিউজিল্যান্ডে সফরটা ভালো না যাওয়ায় ঘরের মাঠের ওয়ানডে সিরিজটা কাজে লাগানোর জন্য মরিয়া হয়ে আছেন সাইফউদ্দিন।

ঈদে বাসা থেকে বের হবেন না মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

তাই দিনের একটা ঈদের আনন্দ করলেও অনুশীলনের জন্য আরেকটা সময় বেঁধে রেখেছেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার, ‘ঈদে বাসাতেই থাকব। বাসাতেই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেব। ছাদে সবার সঙ্গে সময় কাটাব। আমাদের আবার জৈব সুরক্ষাবলয়ে যেতে হবে শ্রীলঙ্কা সিরিজের জন্য। সেটা ঈদের পরেই। সে জন্য সতর্কও থাকতে হবে। যা-ই করি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে করতে হবে। আর ঈদের সময়টাতেও ট্রেনিং চালু রাখব। যেহেতু আমার নিউজিল্যান্ড সিরিজটা খুব একটা ভালো যায়নি, তাই ছন্দে ফিরতে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি শ্রীলঙ্কা সিরিজটা ভালো যাবে।’

জাতীয় দলের আরেক ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন আবার ঈদ নিয়ে খুব সতর্ক। নিজের ঈদ আনন্দ যেন করোনায় আরেকজনের ক্ষতি না বয়ে আনে, সেই ঝুঁকি নিতে চান না, ‘প্রত্যেকেই চায় পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে। এখন দেশের পরিস্থিতি ভালো না কিন্তু তবুও যতটা সম্ভব সতর্ক থেকে ঈদ করার চেষ্টা করতে হবে। আমিও পরিবারের সঙ্গে ছোট করে ঈদ করতে চাই। তবে আমি নিজে আনন্দ করতে গিয়ে আরেকজনের ক্ষতি করতে চাই না। এটা আমাদের সবার মাথায় রাখা উচিত।’

ঈদে পরিবারের সঙ্গেই থাকবেন মোহাম্মদ মিঠুন।