বাংলাদেশ এখন থেকে পেসার খেলাবে তিনজন করে। ব্যাটসম্যান কমিয়ে বোলার বেশি খেলাবে। টেস্ট খেলবে জেতার জন্য। কঠিন কন্ডিশনে আগে ব্যাট করবে। ইনিংস ঘোষণার ক্ষেত্রে সাহসী হবে। টেস্টে উন্নতি করতে হলে বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে এই পথেই এগোতে হবে। শ্রীলঙ্কায় গত এপ্রিলে বাংলাদেশের সর্বশেষ টেস্ট সিরিজের সময় প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর এই কথাগুলোই কি মধুর শোনাচ্ছিল। কথাগুলোর প্রতিফলনও কিছুটা দেখা গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা সিরিজে।
মাঝে দুই মাসের বিরতির পর আবার টেস্ট ক্রিকেটে ফিরল বাংলাদেশ। এবার প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। খেলা হারারেতে। যেখানকার উইকেট গতি ও বাউন্সের জন্য পরিচিত। এমন উইকেটে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার সেই আগ্রাসী মানসিকতা ধরে রাখবে, শ্রীলঙ্কা সফরের ধারাবাহিকতায় টেস্ট দল আরেকটু এগিয়ে যাবে, এমনটাই ভাবা হচ্ছিল।
টেস্ট শুরুর দুই দিন আগে কোচ ডমিঙ্গোর কথাতেও সেই ইঙ্গিতই ছিল, ‘পেসারদের উন্নতি নিয়ে খুবই খুশি। তারা পরিশ্রম করতে পিছপা হয় না। টেস্ট ম্যাচের সংখ্যার দিক দিয়ে তারা অনভিজ্ঞ হতে পারে, তবে তারা কঠোর পরিশ্রম করেছে। সেদিন খুব বেশি দূর নয়, যখন একজন ফাস্ট বোলার আমাদের টেস্ট ম্যাচ জেতাবে।’
অথচ গতকাল হারারে টেস্টের প্রথম সকালে দেখা গেল উল্টো চেহারার বাংলাদেশ দল। একাদশে ৮ জন নিখাদ ব্যাটসম্যান, মেহেদী হাসান মিরাজকে ধরলে সংখ্যাটা হয়ে যায় ৯। ব্যাটসম্যানদের জায়গা দিতে দলে রাখা হয়নি টেস্ট দলের সফল পেসার আবু জায়েদকে। সুযোগ পেয়েছেন তাসকিন আহমেদ ও ইবাদত হোসেন, কিন্তু দুজনের কেউই সুইং বোলার নন। গতি কম থাকলেও নিয়ন্ত্রণ ও সুইংয়ে দক্ষ জায়েদকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ একাদশে সুযোগ দেওয়া হয় ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহকে।
এসব সিদ্ধান্তের পেছনে একটাই কারণ, টপ অর্ডারে তামিম ইকবালের শূন্যতা ও বাংলাদেশের নেতিবাচক মানসিকতা। চোটের কারণে তামিম খেলছেন না হারারে টেস্টে। তামিমের না থাকা মানেই টপ অর্ডার নড়বড়ে হয়ে পড়া। মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান থাকায় বাংলাদেশি মিডল অর্ডারে যথেষ্ট অভিজ্ঞ বলতেই হয়। কিন্তু টপ অর্ডার থেকে তামিমকে সরিয়ে দিলেই মাত্র ৫ টেস্ট খেলা সাইফ হাসান, ৭ টেস্ট খেলা সাদমান ইসলাম ও ৮ টেস্ট খেলা নাজমুল হোসেন একেবারেই পথহারা।
তারুণ্যনির্ভর এই টপ অর্ডার ব্যর্থ হবে, তাই বাড়তি নিরাপত্তার জন্য একজন ব্যাটসম্যান বেশি খেলানো হবে। আর সেই ব্যাটসম্যান হবেন মাহমুদউল্লাহ। এই তত্ত্ব যেন বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে সফরের জন্য দেশ ছাড়ার আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়। টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্য মাহমুদউল্লাহকে টেস্ট দলে নেওয়ার পরেই বলেছিলেন, ‘মাহমুদউল্লাহ খেলবে। তাঁকে খেলানোর জন্যই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’ এই বার্তা নিশ্চয়ই সাইফ-সাদমানদের কানেও পৌঁছেছে। তাঁদের ওপর যে টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থা নেই, সেটা আঁচ করতে পারা খুব কঠিন না।
আর টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থা না থাকলে নিজের ওপর আস্থা রাখাও যে কঠিন।