নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শুরু না হতেই বাংলাদেশ দলে একের পর এক চোটাঘাতের দুঃসংবাদ। কঠিন কন্ডিশনে খেলতে গেলেই কেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা এত চোটে পড়েন?
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ২ ফিফটিতে ১১৯ রান করেছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। চোটের কারণে ছন্দে থাকা এই ব্যাটসম্যানকে ছাড়াই সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। এমনকি টেস্ট সিরিজের আগে আজ শুরু হওয়া প্রস্তুতি ম্যাচেও খেলেননি মিঠুন। এখানেই শেষ নয়। ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে পাঁজরে চোট নিয়েই খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। তবে এবার আর পারলেন না। এই চোটের কারণেই খেলেননি প্রস্তুতি ম্যাচে, খেলতে পারছেন না প্রথম টেস্টেও।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যাটিংয়ের সময় হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়েছিলেন মিঠুন। তাঁকে নিয়ে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট আশা ছেড়ে দিয়েছে সেদিনই। এর মধ্যে আরেক খবর এল, পাঁজরের একপাশে ব্যথা অনুভব করেছেন মুশফিকুর রহিম। টেস্ট সিরিজের আগেও চোট মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় চিন্তা একটা থেকেই যাচ্ছে। সেই চিন্তার জায়গা হলো চোট, যেটি যেকোনো দলের কাছেই বড় ‘শত্রু’ হিসেবে বিবেচিত!
এই সফরের আগে আঙুলের চোটে পড়ে নিউজিল্যান্ডে যেতেই পারেননি সাকিব আল হাসান। আর এখন সিরিজ শুরু না হতেই একের পর এক চোটাঘাতের দুঃসংবাদ। প্রশ্ন হচ্ছে, নিউজিল্যান্ডে, আরও নির্দিষ্ট করে বললে কঠিন কন্ডিশনে খেলতে গেলেই কেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা এত চোটে পড়েন?
২০১৬-১৭ সালে নিউজিল্যান্ড সফরেই মুশফিকুর রহিম চোটে পড়েন দুবার। ওয়েলিংটন টেস্ট চলার সময় হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে হয়েছে তাঁকে। পরে খেলতে পারেননি ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের শেষ টেস্টটি। যে টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। ওয়েলিংটন টেস্টে চোটে পড়ায় হাসপাতালে যেতে হয় ইমরুল কায়েসকেও। খেলা আর হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে গিয়ে ভীষণ হিমশিম খেতে হয় টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্যদের। চোটে পড়ায় সফর অসমাপ্ত রেখেই দেশে ফিরে এসেছিলেন ইমরুল কায়েস, সঙ্গে মুমিনুল হকও। ওই সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে বল লেগে ডান হাত ফেটে গিয়েছিল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার! আর চোট নিয়ে অস্বস্তি থাকায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মোস্তাফিজুর রহমান খেলেন বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে।
গতবারের মতো এবারও সেই চোট পিছু নিয়েছে বাংলাদেশ দলের। এমনিতে টানা ম্যাচ হারের হতাশা আর যোগ হওয়া চোট যেন দুর্বিষহ করে তোলে পুরো সফরটা। ছবির মতো সুন্দর নিউজিল্যান্ড তখন সবচেয়ে অসুন্দর লাগে, এখান থেকে দেশে ফিরলেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন ক্রিকেটাররা! চোটের মিছিল শুধু নিউজিল্যান্ডেই না, কঠিন কন্ডিশনে খেলতে গেলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের একটু বেশি পড়তে দেখা যায়। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেই যেমন টানা হারের মধ্যে যোগ হলো গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের চোটে পড়ার দুঃসংবাদ। বাঁ ঊরুর চোটে পড়ে সফর অসমাপ্ত রেখে দেশে ফিরলেন তামিম। গোড়ালির চোট খেলতে দেয়নি মোস্তাফিজকেও। তামিমের সঙ্গে তিনিও দেশে ফেরেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ অসমাপ্ত রেখে।
চোটের মিছিল দেখা গেল গত সেপ্টেম্বরে আরব আমিরাতে হওয়া এশিয়া কাপে। তামিম আঙুলে চোট পেলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচে। দলীয় ইনিংসের শেষ দিকে ভাঙা হাত নিয়ে তামিমের ব্যাটিং করতে নেমে যাওয়ার দৃশ্য অবশ্য বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক অনন্য বীরত্বগাথা। বাঁহাতি ওপেনারকে হারানোর পর বাংলাদেশ দলের আরেক ধাক্কা হয়ে আসে সাকিবের আঙুলের চোট। মুশফিক পুরো টুর্নামেন্ট খেলেছেন পাঁজরের ব্যথা নিয়ে। চোটমুক্ত ছিলেন না মাশরাফিও। চোট নিয়ে খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ।
চোটে কারও হাত নেই। কখন কে কীভাবে চোটে পড়েন, সেটি কেউ বলতে পারে না। বিপিএলে দুর্দান্ত বোলিং করা তাসকিন আহমেদ এভাবে চোটে পড়ে ছিটকে যাবেন, কেউ কি ভেবেছিল? কিন্তু কঠিন কন্ডিশনে খেলতে গেলেই কেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এটি বেশি চোটে পড়েন? নেহাতই দুর্ভাগ্য না কি টেকনিকে ঘাটতি, প্রশ্ন জাগতেই পারে।