কখনো না হারার শহরে মাশরাফিরা

>কার্ডিফে শনিবার বিশ্বকাপের স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা বাংলাদেশের। ওয়েলসের রাজধানী মাশরাফিদের জন্য খুবই পয়া। এখানে এখনো পর্যন্ত খেলা দুটি ওয়ানডের একটিতেও হারেনি বাংলাদেশ। প্রথম জয়টি ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, দ্বিতীয়টি ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।

ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্কটা তাঁর রাজনীতিতে জড়ানোর আগে থেকেই। ঢাকার করপোরেট ক্রিকেটে একসময় আরাফ অ্যাপারেলস নামে তাঁরও ছিল একটা দল। এখন তো তিনি বিপিএলের দল রাজশাহী কিংসের মালিক। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাই ক্রিকেটীয় পরিমণ্ডলে নতুন কেউ নন।

কাল কার্ডিফ বে’র ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ফর ওয়েলসে এসে শাহরিয়ার আলম ফিরে গেলেন আরও পেছনে। ২০০৫ সালের ১৮ জুন এই শহরেরই মাঠ সোফিয়া গার্ডেনে দর্শক হিসেবে ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছিলেন তিনি। ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাওয়া বাংলাদেশ দলের দুর্দান্ত জয়টা যেন এখনো চোখে ভাসে এই ‘তরুণ’ মন্ত্রীর! আরেকবার কার্ডিফে এসে, বাংলাদেশ হাইকমিশন অফিসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ক্রিকেটারদের সামনে পেয়ে সেই কথাটাই মনে পড়ে গেল তাঁর।

২০০৫ সালে কার্ডিফেই এসেছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই ঐতিহাসিক জয়। ফাইল ছবি

লন্ডন থেকে সড়কপথে গতকাল দুপুরে কার্ডিফে এসে পৌঁছেছে বাংলাদেশ দল। সন্ধ্যায় কোচ, খেলোয়াড়, কর্মকর্তা সবাই যোগ দেন ইংল্যান্ডে বাংলাদেশ হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিমের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। আগামীকাল বিশ্বকাপের স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সোফিয়া গার্ডেনেই ম্যাচ খেলবেন মাশরাফিরা।

প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে বিশ্বকাপের আগেও তাঁরা ঘুরে গেছেন ওয়েলসের এই ছোট্ট শহরে। ২০১৯ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম দুটি ম্যাচ খেলতে এখান থেকেই হয়েছিল লন্ডনযাত্রা। সে যাত্রায় প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের কাছে হারের হতাশা মিশে থাকলেও কার্ডিফে তাঁদের এবারের আসাটা অন্য রকম। যে আসার পেছনে আশা—বড় ম্যাচে কার্ডিফে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করা।

বাংলাদেশ দলের জন্য সোফিয়া গার্ডেনের ইতিহাস এক শ ভাগ সুখস্মৃতির ইতিহাস। এখন পর্যন্ত এ মাঠে দুটি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ জিতেছে দুটিতেই। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও ৫ উইকেটের জয়। লক্ষ করেছেন নিশ্চয়ই, কার্ডিফে বাংলাদেশ দলের সবকিছুতেই বেশ একটা মিল। দুটো জয়ের দুটোই যেমন ৫ উইকেটে, তেমনি এখানে দুটি ম্যাচই তারা খেলেছে জুন মাসে।

২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব-মাহমুদউল্লাহর রেকর্ড জুটি আর দুর্দান্ত জয়ের সাক্ষীও কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন। ফাইল ছবি

এবারও বাংলাদেশ দল কার্ডিফে এল আরেকটি জুনে। প্রতিপক্ষ যদিও স্বাগতিক ইংল্যান্ড, সোফিয়া গার্ডেনের সুখস্মৃতি বাংলাদেশ দলকে কিছুটা তো অনুপ্রেরণা দেবেই। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া শুভেচ্ছা বক্তব্যে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার কথায় ফুটে উঠেছে সেটিই। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও বাংলাদেশ হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিমও বারবার বলেছেন সে প্রত্যাশার কথাই।
লন্ডনের তুলনায় কার্ডিফে বাংলাদেশের মানুষ অনেক কম। তবে সন্দেহ নেই বিশ্বকাপের ম্যাচ এখানেও দূরদূরান্ত থেকে টেনে আনবে বাংলাদেশের সমর্থকদের। কার্ডিফ শহরও যেন প্রস্তুত বাংলাদেশকে বরণ করে নিতে। লন্ডনে বিশ্বকাপের আমেজ শুধু ওভালের আশপাশেই টের পাওয়া গেছে। এখানে তা নয়। কার্ডিফ ক্যাসেল থেকে সিটি সেন্টারের দিকে যাওয়া সড়কের দুই পাশে বিশ্বকাপের ব্যানার-ফেস্টুনই বলে দিচ্ছে বিশ্বের ‘গ্রেটেস্ট ক্রিকেট সেলিব্রেশন’কে স্বাগত জানাতে এই শহর কতটা প্রস্তুত।

এই সড়ক দিয়ে একটু এগিয়ে ডানে উঁকি দিলেই দেখা যায় মিলেনিয়াম স্টেডিয়াম, ২০১৭ সালের উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল হয়েছিল এ মাঠে। এরপর গত ২৭ মে কার্ডিফ কেঁপে উঠেছিল আরেকটি বড় উৎসবে। স্পাইস গালর্সের কনসার্ট উপলক্ষে মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার নেমেছিল রাস্তায়। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ম্যাচ নিয়ে যে কার্ডিফবাসী অতটা উদ্বেলিত হবে না, তা জানা কথাই। তবে লন্ডনের পাতাল রেলের মতো ম্যাচের দিন এই শহরেও লাল-সবুজের বন্যা কম বইবে না। বুকে থাকবে ‘বাংলাদেশ’, যার প্রতিটি হৃৎস্পন্দন কেবলই চাইবে কখনো না হারার শহরে মাশরাফিদের আরেকটি জয়।