তিন বছর আগে এভাবেই দায় নিয়ে ফিরেছিলেন তিনজন।
তিন বছর আগে এভাবেই দায় নিয়ে ফিরেছিলেন তিনজন।

ওয়ার্নারদের জায়গায় চ্যাপেল থাকলে জড়িত সবার নাম বলে দিতেন

মাঠের পারফরম্যান্সে বহুদিন নিজেদের সেরাটা দেখাতে পারছে না অস্ট্রেলিয়া। তবে গত কয়েক দিনে অন্তত আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে দলটি। প্রথমে আইপিএল খেলতে যাওয়া ক্রিকেটার ও কোচিং করাতে যাওয়া কোচদের দেশে ফেরানো নিয়ে নানা কাহিনি করে খবরের শিরোনাম হয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। ভারত থেকে অন্য কোনো দেশে ১৪ দিন কাটিয়ে যখন ফেরা শুরু করলেন সেই ক্রিকেটাররা, তখনই আবার নতুন করে আলোচনার জন্ম হলো। এবার সেই শুরুটা হলো ক্যামেরন ব্যানক্রফটের একটি স্বীকারোক্তির পথ ধরে।

২০১৮ সালে মার্চে কেপটাউন টেস্টে ভয়ংকর লজ্জায় পড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সিরিজজুড়ে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার দাপট দেখে আর সহ্য হচ্ছিল না ডেভিড ওয়ার্নারের। নিজের ওপেনিং–সঙ্গী ব্যানক্রফটকে সিরিশ কাগজ দিয়ে বল টেম্পারিং (বিকৃত) করার পরামর্শ দিলেন। সেটা জেনেও না জানার ভান করলেন স্টিভ স্মিথ। ওদিকে মাঠে সে কাজ করতে গিয়ে টিভি পর্দায় ধরা পড়লেন ব্যানক্রফট। শোরগোলের মধ্যে নয় মাসের নিষেধাজ্ঞা জুটেছিল ব্যানক্রফটের। আর বাকি দুজন নিষিদ্ধ ছিলেন এক বছর।

তিন বছর পর কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে গিয়ে হঠাৎই মুখ খুললেন ব্যানক্রফট। দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, বল টেম্পারিং যে হচ্ছে, সেটা দলের অন্যদেরও জানা ছিল। কারণ, সেটা বোঝাই যায়। ইয়ান চ্যাপেল সে সূত্র ধরেই বলেছেন, ওই তিন ক্রিকেটারের জায়গায় তিনি থাকলে জড়িত সবার নাম জানিয়ে দিতেন।

ড্যারেন লেম্যান দায়িত্ব থেকে সরে গিয়েছিলেন।

২০১৮ সালের সে ঘটনায় অনেক রদবদল এসেছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে। দলের অধিনায়ক ও সহ–অধিনায়ক এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। কোচ ড্যারেন লেম্যান দলকে সঠিক পথে রাখতে পারেননি, এ কষ্টে অশ্রুভেজা চোখে চাকরি ছেড়েছেন। যেকোনোভাবেই হোক জিততে হবে, এই মানসিকতা থেকে সরে আসার চেষ্টা শুরু হয়েছে, মাঠে স্লেজিং কমে এসেছে। কিন্তু বল বিকৃতির দায়টা শুধু ব্যানক্রফট, স্মিথ ও ওয়ার্নারের কাঁধেই ছিল।

গার্ডিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ব্যানক্রফট বলেছেন, শুধু তাঁরা তিনজন নন, বল যে বিকৃত হচ্ছে, এটা দলের আরও অনেকেই জানতেন বলেই তাঁর ধারণা। কারণ, ব্যাপারটা খুব সহজেই বোঝা যায়। এ ব্যাপারে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছে ব্যানক্রফটের কাছে নতুন কোনো তথ্য থাকলে তাদের জানাতে। তাহলে নতুন করে তদন্ত করবে বোর্ড। ক্রিকেট বোর্ডের এমন কথায় মজা পেয়েছেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও মাইকেল ক্লার্কের মতো সাবেক ক্রিকেটাররা। তাঁদের দাবি, বল টেম্পারিং যে হচ্ছে, সেটা মাঠে থাকা যেকোনো ক্রিকেটারই বুঝতে পারেন এবং সেটা তখনই জানত ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে যাওয়ার ভয়ে তারা সে পথে এগোয়নি বলেই ধারণা এ দুই ক্রিকেটারের।

স্মিথদের মুখ খোলার পরামর্শ দিলেন চ্যাপেল।

ইয়ান চ্যাপেলেরও ধারণা তা–ই। সাবেক অধিনায়কের দাবি, এ ঘটনার পেছনে শুধু ক্রিকেটার নন, বোর্ডের শীর্ষস্থানীয় কর্তারাও জড়িত ছিলেন। আর সে কারণেই ২০১৮ সালে এত তাড়াহুড়া করে তদন্ত শেষ করেছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া নতুন করে তদন্ত করতে আগ্রহী, এমন মন্তব্যকে উড়িয়ে দিয়েছেন চ্যাপেল। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড অব স্পোর্টসকে বলেছেন, ‘সেই চিরায়ত পিঠ-বাঁচানো বিবৃতি এটা। এটাই চলতে থাকে। যখনই কোনো বিতর্ক দেখা দেয়, তখনই দ্রুত নিজের পিঠ বাঁচানোর চেষ্টা শুরু হয়।’

সে ঘটনায় বোর্ডের কারও শাস্তি হয়নি, এটা মানতে পারছেন না চ্যাপেল। তাই তিন ক্রিকেটারের কাছে আহ্বান করছেন, এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের নামও প্রকাশ্যে আনতে, ‘ওপরের দিকে কেউ যে কোনো শাস্তি পায়নি, এতেই বোঝা যায়, ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমি যদি স্মিথ, ওয়ার্নার বা ব্যানক্রফটের জায়গায় থাকতাম, আমি এর সঙ্গে অন্যদের ভূমিকা সবার সামনে খুলে বলতাম। নিউল্যান্ডসে বল বিকৃত হয়েছে, এটাই মূল বিষয় না। বরং এর আগে কী ঘটেছে, কী কারণে এমন বোকামি হলো, সেটাও জানা দরকার। এটা এত দূর (বল বিকৃতি করার মতো ঘটনা) গড়ানোর মানে হলো, এতে আরও অনেকেই জড়িত ছিল, শুধু দলের আশপাশে থাকা লোকজন নয়। এর সঙ্গে শীর্ষে থাকা মানুষ জড়িত এবং এদের কারও নাম কখনো প্রকাশ্যে আসেনি। আমাকে যদি ঘটনার দায় নেওয়াদের একজন বানানো হতো, আমি খুবই রাগান্বিত হতাম।’