>কাল থেকেই আলোচনায় ডেভিড ওয়ার্নার। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তো আছেই। আজ সকালে যোগ হয়েছে কনুইয়ের চোট। চোটে পড়া ওয়ার্নারকে নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। আজ দিনভর এ নিয়ে অনেক নাটক। অবশেষে ওয়ার্নারের মুখ থেকেই জানা গেল আসল ঘটনা
আজ দুপুর ১২টার দিকে হোটেল নির্ভানা ইনের সুইমিং পুলে ঢুঁ মারতেই দেখা গেল তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। পরনে শর্টস। হাতের মুঠোফোনটা রেখে ঝটপট নেমে পড়লেন জলকেলিতে। কাল দর্শকদের খুব বিনোদিত করেছেন। কখনো বাঁহাতি থেকে ডানহাতি হয়ে। কখনো কোমর দুলিয়ে নেচে। কখনো দুর্দান্ত ফিল্ডিং করে। সবচেয়ে বড় কথা, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সিলেট সিক্সার্সকে জয়ের ধারায় ফিরিয়েছেন। স্থানীয় দর্শকদের সুযোগ করে দিয়েছেন সিলেট সিলেট স্লোগান তোলার।
ম্যাচের পর থেকেই আলোচনায় ওয়ার্নার। পারফরম্যান্সের সঙ্গে যোগ হয়েছে কনুইয়ের চোটের খবর। চোটে পড়া ওয়ার্নারকে নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। অসাধারণ খেলা ওয়ার্নারের সিলেট সিক্সার্সে খেলা মানে শুধু নিজের দলেরই নয়, এতে উপকার পুরো বিপিএলেরই। স্থানীয় ক্রিকেটাররা খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন একজন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার খেলাটার প্রতি কতটা পেশাদার, কতটা আক্রমণাত্মক, কতটা মানসিকভাবে শক্ত। মস্তিষ্কের ব্যবহার আর দক্ষতার মিশেলে কীভাবে তাঁরা মুহূর্তেই পার্থক্য গড়ে দেন ম্যাচ। দর্শকদের জন্যও তো ওয়ার্নার বাড়তি পাওয়া।
কুমিল্লার স্টিভ স্মিথ আগেই চলে গেছেন। এখন ওয়ার্নারও চলে যাবেন? সকাল থেকেই সংবাদমাধ্যমের জিজ্ঞাসা।
সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজি অবশ্য মুখে তালা মেরে রেখেছে এ নিয়ে। বিকেল সাড়ে ৫টায় সংবাদ সম্মেলন করার কথা বললেও পরে সেটি বাতিল করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। কেন বাতিল করেছে, সেটির সুনির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া গেল না। নাটক যখন বেশ জমে উঠেছে তখনই পাওয়া গেল স্বয়ং ওয়ার্নারকেই! ওয়ার্নারের সাক্ষাৎকারের জন্য অবশ্য কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে বিস্তর। অবশেষে ওয়ার্নার সময়টা দিলেন। মোক্ষম দিনে, মোক্ষম সময়েই পাওয়া গেল অস্ট্রেলিয়ান তারকাকে।
শুরুতেই চোট নয়, জানতে চাওয়া হলো কালকের আলোচিত ব্যাটিং স্ট্যান্স পরিবর্তন করা প্রসঙ্গে। ওয়ার্নার জন্মগতভাবে ডানহাতি। রহস্যটা খুলেই বললেন, ‘আসলে ব্যাপারটা হয়েছে কী, আমি তো ডান হাতে ব্যাট করতে পারি। ডান হাতে গলফ খেলি। “ন্যাচারাল সুইং” বলে একটা ব্যাপার আছে না! আর সে সময় (কালকের ম্যাচে) আমার মাথায় ছিল, আগের তিন বল ডট গেছে। আসলে ও ( ক্রিস গেইল) এমন একটা লেংথে বল করছিল, আমি সুবিধা করতে পারছিলাম না। তো আমাকে কিছু করতে হবে। ডান হাতে স্ট্যান্সটা নিলাম, আশা করছিলাম ও ফুল লেংথে বল করবে। ঠিক সেটাই হলো। ওই বলে এবং তার পরের দুই বলে। ডান হাতে ব্যাট করাটা কাজে লেগে গেল।’
দর্শক ভীষণ আমোদিত হয়েছেন ওয়ার্নারের এই ব্যাটিং দেখে। কিন্তু একটা আফসোসও হচ্ছে তাদের, দুর্দান্ত খেলা সিলেট অধিনায়ক ফিরে যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ায়। যদিও তিনি সিলেট পর্বের বাকি দুটি ম্যাচ খেলবেন। কিন্তু টুর্নামেন্টে কি আর ফেরা হবে?
‘চোট আমার আগেই ছিল। (কনুইয়ের) সন্ধিতে তরল জমেছে আমাকে এটা পরীক্ষা করতে হবে। অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাচ্ছি, সেখানে চিকিৎসককে দেখাব। এর পর বুঝতে পারব কী করতে হবে। এটাতে আমি অনেক কিছু করিয়েছি। ব্যথানাশক ওষুধ খেয়েছি। কিন্তু ফোলা কমছে না। আগামী দুইটা ম্যাচ খেলে আমি বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। দেখি সেখানে কী হয়। তারা পরীক্ষার পর বুঝতে পারব কত দিন বাইরে থাকব। নাকি খেলায় ফিরতে পারব। এখনো নিশ্চিত না’, প্রথম আলোকে বলছিলেন ওয়ার্নার।
ওয়ার্নার যদি না-ই ফেরেন, আর কখনো বিপিএলে তাঁকে দেখা যাবে কি না নিশ্চিত নয়। বল টেম্পারিংয়ের অপরাধে ওয়ার্নারের নিষেধাজ্ঞার ‘সুফল’ই পেয়েছে বিপিএল। বিপিএল যে সময়ে সাধারণত হয়ে থাকে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া তখন ভীষণ ব্যস্ত থাকে। জাতীয় দলেও যদি না থাকেন, একই সময়ে বিগ ব্যাশে খেলার সুযোগ থাকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কিংবা বিগ ব্যাশ রেখে কি ওয়ার্নার আর বিপিএল খেলতে আসবেন?
সেই শঙ্কা মাথায় রেখে দুই ম্যাচে ওয়ার্নারকে মন ভরে দেখে নিন।