পন্ত এনে দিলেন ঐতিহাসিক জয়।
পন্ত এনে দিলেন ঐতিহাসিক জয়।

ঐতিহাসিক জয়ে অস্ট্রেলিয়াকে মাটিতে নামাল ভারত

চকচকে নতুন বলটা নেওয়া হলো। নতুন বল নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটাও নিশ্চিত হওয়া গেল, জমজমাট ম্যাচটা হলে আর সর্বোচ্চ ২০ ওভার। ২০ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার দরকার আরও ৭ উইকেট। ওদিকে ভারতের দরকার ১০০ রান।

চাইলেই একে আরেকটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ বলে ধরে নেওয়া যায়। তবে ২০ ওভারে ১০০ রানকে টি-টোয়েন্টি তো বটেই, বর্তমানের ওয়ানডে ম্যাচ বলেও ধরা কঠিন। বরং গ্যাবার বাড়তি বাউন্স ও অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘদেহী পেস আক্রমণ বিবেচনায় নিয়ে সর্বোচ্চ নব্বই দশকের ওয়ানডের সঙ্গেই হয়তো তুলনা চলে। যা-ই হোক না কেন, দুর্দান্ত এক সিরিজের সর্বোচ্চ সুন্দর এক সমাপ্তির সব মালমসলা মজুত ছিল।

নাটক জমাতে মাত্র ২ বল দরকার হলো প্যাট কামিন্সে। গোটা সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং জ্বালিয়ে মারা চেতেশ্বর পূজারা ২১১ বলের ইনিংসটা থামালেন। যার কারণে মাথা কুটে মরছে অস্ট্রেলিয়ার সব পরিকল্পনা, সেই পূজারা ফিরলেন। তবে কি জেতার আশা জাগল অস্ট্রেলিয়ার? নাকি আবারও শেষ চাপটা সয়ে নিয়ে টেস্ট ড্র করবে ভারত। কারণ, এই ড্রতেই যে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিটা ধরে রাখতে পারবে ভারত।

ঋষভ পন্ত ওসব নিয়ে মাথা ঘামালে তো! ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়ার ৩২ বছরের অপরাজিত থাকার রেকর্ড দুমড়েমুচড়ে দিয়ে এনে দিলেন ৩ উইকেটের জয়। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে দেশে ফিরছে ভারত।

সিরাজের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে এ জয়ের মূল্য কত।

পূজারা আউট হওয়ার পরের ১৫ বলেই ২০ রান এনে দিলেন দলকে। একপর্যায়ে ভারতের লক্ষ্য দাঁড়াল, ১০০ বলে ৮০। এ বাক্য লেখাটাও কত বিস্ময়কর। একটি টেস্ট ম্যাচে একটি ম্যাচের সমীকরণ বোঝাতে কত রান বা কত উইকেট দরকার না বলে বলা হচ্ছে, কত বলে কত রান দরকার! সে সমীকরণ যখন ৮১ বলে ৬৩, তখন মরিয়া অস্ট্রেলিয়া মায়াঙ্ক আগারওয়ালকে আউট করতে রিভিউ নিয়ে নিল। কিন্তু হট স্পট কিংবা স্নিকো—কোনো কিছুই অস্ট্রেলিয়াকে আকাঙ্ক্ষিত কিছু দেখাতে পারল না।

সেটা আগারওয়াল নিজেই দেখালেন। এতক্ষণ চমৎকার কিছু শট খেলা এই ব্যাটসম্যান কামিন্সের পরের বলেই কভার অঞ্চলের দৈর্ঘ্য মাপতে চাইলেন। ধরা পরলেন শর্ট কভারে থাকা ওয়েডের কাছে। বেশ কিছুক্ষণ পর মনে হলো ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ারও তাহলে সুযোগ আছে। তাদের যে আর ৫ উইকেট দরকার।

কিন্তু জেতার জন্য উইকেট দরকার। সে উইকেট নেওয়ার জন্য যে বোলারও দরকার। অস্ট্রেলিয়া দলে যে কামিন্স ছাড়া অন্য কোনো বোলার উইকেট নিতে পারেন, সেটা বোঝার যে কোনো জো নেই। শুধু শুবমান গিলকে সেঞ্চুরি বঞ্চিত করেছিলেন লায়ন। সেই লায়ন শেষ ঘণ্টায় ভয়ংকর সব বাঁক আদায় করছিলেন কিন্তু উইকেট আদায় করা হচ্ছিল না। জশ হ্যাজলউড বা মিচেল স্টার্ক তো আজ রান আটকানোর কাজটাও করতে পারেননি। এর মধ্যেই ভারতের জয়ের লক্ষ্যটা ৫৩-তে নেমে এসেছে। আর ওভারের সংখ্যা নেমে এসেছে ১০-এ।

পূজারাকে আউট করার পর কামিন্সের এই উল্লাস স্থায়ী হয়নি।

১০ ওভার। ৫ উইকেট। ৫৩ রান।

দুর্দান্ত সিরিজ নেমে এল এই তিন সংখ্যায়।

টানা দুই দারুণ ওভারে একটু চাপ বেড়েছিল। কিন্তু কামিন্সের দুই বলে দুটি ‘যা থাকে কপালে’ শটে ১০ রান তুলে নিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ৮ ওভারে ভারতের দরকার ৩৯ রান। গ্যালারিতে তখন গর্জন উঠছে ‘ইন্ডিয়া’, ‘ইন্ডিয়া’। লায়নের বলে টানা দুই বলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ফেরালেন পন্ত। প্রথমে প্যাডল সুইপ, তারপরই স্লগ সুইপ। অস্ট্রেলিয়ার যন্ত্রণা বাড়াতেই পঞ্চম বলে চার বাই রান পেল ভারত। ৬ ওভারে মাত্র ২৪ রান দরকার ভারতের!

পরের ৯ বলে ১৪ রান তুলে ম্যাচটা শেষ করে দিয়েছেন পন্ত ও সুন্দর। এরপরই ভাগ্য ফুরোল সুন্দরের। লায়নকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হলেন প্রথম ইনিংসের নায়ক। ভারতের দরকার ১০ রান, আর অস্ট্রেলিয়ার জয়ের স্বপ্ন যদি কেউ তখনো দেখে থাকেন, স্বাগতিকদের দরকার ৪ উইকেট।

পন্ত নিজেই বলেছেন, এটা তাঁর সেরা ইনিংস।

৫ বলে প্রয়োজনীয় উইকেটসংখ্যা তিনে নামল। কিন্তু ততক্ষণে ভারতের রানও কমে এসেছে ৩-এ। এক বল বিরতি। পরের বলেই চার মেরেই ঝামেলা চুকালেন পন্ত। ৮৯ রানে অপরাজিত থেকে বীর বেশেই মাঠ ছাড়লেন পন্ত। ৩২৮ রানের লক্ষ্য ৩ ওভার আগেই মিলিয়ে দিলেন পন্ত। ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টির মতো শোনাতে পারে, কিন্তু ম্যাচ জেতানো ইনিংসের শেষটা যে এমনই ছিল।

১৬ রানেই জীবন পেয়েছেন পন্ত। এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়া দলে নিজের জায়গা যতটা সম্ভব দুর্বল করার লক্ষ্যেই যেন নেমেছেন টিম পেইন। দলের অধিনায়কের দুর্বল অধিনায়কত্ব, ব্যাটিংয়ে ভরসার অভাবের চেয়েও উইকেট রক্ষণে একের পর এক ভুল বেশি চোখে লেগেছে। আজও লায়নের বলে পন্তকে স্টাম্পিং করার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু পন্তের মতো লায়নের বাউন্সে বিভ্রান্ত হয়েছেন পেইনও। ১৬ রানে পাওয়া জীবনটাকে কী দুর্দান্তভাবেই না কাজে লাগালেন। দলকে এনে দিলেন ঐতিহাসিক এক জয়।