অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ নিশ্চিত হতেই মার্শকে (বাঁয়ে) জড়িয়ে উদ্‌যাপন সতীর্থদের
অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ নিশ্চিত হতেই মার্শকে (বাঁয়ে) জড়িয়ে উদ্‌যাপন সতীর্থদের

এবার সবাই মার্শের গুরুত্বটা বুঝতে পারবে

নিউজিল্যান্ডের ছুড়ে দেওয়া লক্ষ্যটা মোটেও ছোট ছিল না। টি-টোয়েন্টিতে ১৭৩ রান যেকোনো দিনই লড়াই করার মতোই একটা সংগ্রহ। বিশ্বকাপের ফাইনাল হিসেবে তো পাহাড়সম। আগের ছয়টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে গতকালের আগে এত রান কোনো দল করতে পারেনি।

তার ওপর প্রথম ইনিংসে মিচেল স্টার্কের বলে জশ হ্যাজলউড কিউই অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসনের ক্যাচ ফেলে দেন। মাত্র ১৭ রানে জীবন পেয়ে উইলিয়ামসন দুর্দান্ত সব ক্রিকেটিং শটের পসরা সাজিয়ে উপহার দেন ৪৮ বলে ৮৫ রানের ঝকঝকে ইনিংস। ফলে রান তাড়া করতে নামার সময়ই বেশ চাপে ছিল অস্ট্রেলিয়া।

উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান এবং অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ খুব দ্রুত বিদায় নিলে ফাইনাল হারের শঙ্কাটা জেঁকে বসে অস্ট্রেলিয়ান ভক্ত-সমর্থকদের মনে। কিন্তু সবার আশঙ্কা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন ৩ নম্বরে নামা অলরাউন্ডার মিচেল মার্শ। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন এই মার্শকে দেখে মুগ্ধ।

চাপের মুখে কাল ফাইনালে দারুণ খেলেছেন মার্শ

চোটের কারণে মিচেল মার্শকে ক্যারিয়ারজুড়ে অনেক ভুগতে হয়েছে। দলে ফিরলেও নিয়মিত পারফর্ম করতে পারতেন না। দুই বছর আগে তো স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন, অস্ট্রেলিয়ার বেশির ভাগ মানুষই তাঁকে ঘৃণা করে। সেই মার্শই অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক।

মার্শ যখন ক্রিজে আসেন, অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ২.৩ ওভারে ১ উইকেটে ১৫। রান তোলার গতি ছিল ওভারপ্রতি মাত্র ৬। ইনিংসের শুরুতেই ব্যাকফুটে দলটি। তাদের ম্যাচে ফেরাতে মার্শ খরচ করেন মাত্র ৩ বল। নিজের প্রথম বলেই নিউজিল্যান্ডের ফাস্ট বোলার অ্যাডাম মিলনেকে স্কয়ার লেগ দিয়ে হাঁকান বিশাল এক ছক্কা। স্লিপে কোনো ফিল্ডার না থাকায় দ্বিতীয় বলে সেখান দিয়ে মারেন চার। তৃতীয় বলে স্কয়ারের সামনে দিয়ে পুল করে মারেন আরেকটি চার। এই তিন বলই ম্যাচের গতিপথ ঠিক করে দিয়েছে।

কাগজে–কলমে জয় থেকে অস্ট্রেলিয়া তখন অনেক দূরে থাকলেও মূলত মার্শের খেলা প্রথম তিন বলই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। ক্রিজে নেমেই নিউজিল্যান্ডের বোলারদের কোনো সম্মান না দিয়ে তাঁর পাল্টা আক্রমণে সবাই বুঝে গিয়েছে, যে যা-ই বলুক না কেন, ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া অন্য দল। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া আসে জেতার জন্য।

শিরোপা নিশ্চিত হতেই সে কী দৌড় মার্শের, পেছনে সঙ্গী ম্যাক্সওয়েল

মার্শ আরেকবার ঝড় তোলেন টুর্নামেন্টজুড়ে অসাধারণ বোলিং করে আসা ইশ সোধির করা ১৪তম ওভারে। আগের ওভারেই ওয়ার্নারের বিদায়ে অস্ট্রেলিয়া যে খোলসে ঢুকবে না সেটা বোঝাতেই হয়তো পরের ওভারে আক্রমণে গেছেন মার্শ। সোধিকে বেধড়ক পিটিয়ে ওই ওভারে তোলেন ১৬ রান, ফলে লক্ষ্য নেমে আসে ৩৬ বলে ৪৮ রানে। ৫০ বলে ৭৭ রান করার পথে অর্ধশতক পূরণ করেন ৩১ বলে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে দ্রুততম অর্ধশতকের রেকর্ড এটি।

মার্শের মতো ক্যারিয়ারজুড়েই চোটের সঙ্গে লড়াই করেছেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন। ফলে মার্শের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে খুব একটা কষ্ট হয় না তাঁর। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একজন পরিপূর্ণ অলরাউন্ডারের সফল হওয়াটা যে কত কঠিন, সেটাও বোঝেন তিনি।

ফাইনালে মার্শের ইনিংসের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন ওয়াটসন, ‘এটা আমার দেখা অন্যতম সেরা টি-টোয়েন্টি ইনিংস। ও ছয় মাস ধরেই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দারুণ পারফর্ম করছে, কিন্তু এ ইনিংসটায় সে নতুন করে তার জাত চিনিয়েছে।’

ফাইনালের ম্যাচ সেরা হয়েছেন মার্শ

মার্শকে নিয়ে যে সমর্থকেরা দুই ভাগে বিভক্ত ছিল, তা উল্লেখ করলেন তিনি, ‘সমর্থকদের এক অংশ ছিল মার্শের পক্ষে, আরেক দল ছিল বিপক্ষে। এর প্রধান কারণটা হলো ওর চোট, যার জন্য ও একাদশে কখনোই থিতু হতে পারেনি। মানুষের আসলে মার্শের দক্ষতা সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। কিন্তু এখন তাঁরা অবশ্যই বুঝবে।’

ব্যাটিং অর্ডারে রদবদল করে এ বছরের জুলাইয়ে মার্শকে তিনে নিয়ে আসা হয়। দলের ফলাফল খুব বেশি ভালো না হওয়ায় এ পজিশনে মার্শ আদৌ টিকতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু বিশ্বকাপে পারফরম্যান্স দিয়েই সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি।

ম্যাচ শেষে মার্শ জানান এ রকম একটা ইনিংস খুবই দরকার ছিল, ‘আমি কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমি আপনাকে সত্যিটা বলি, আমি ক্রিজে নামার সময় এত কিছু ভাবিনি। আমি শুধু মাঠে নেমে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে চেয়েছিলাম। মার্কাস স্টয়নিস সব সময় আমাকে মাঠে নেমে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে এবং প্রতিযোগিতায় ঢুকে যেতে বলত। আমি সেটাই করার চেষ্টা করেছি এবং নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পেরেছি।’