বিদায়ের সুর বাজছে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের। ৩৭ দিনে ৪৬ ম্যাচ শেষে কাল সমাপ্তি ঘটছে এবারের বিপিএল-উৎসবের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে হওয়া বিশেষ এ বিপিএলে জমজমাট ম্যাচের সংখ্যা কম হলেও পয়েন্ট তালিকায় দলগুলোর মধ্যে ছিল দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, টুর্নামেন্টে নিজেদের দারুণভাবে মেলে ধরেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
ধারাবাহিক ভালো খেলা খেলোয়াড়ের সংখ্যাটা নেহাত কম নয় বলেই এবার টুর্নামেন্ট সেরা কে হচ্ছেন, সেটি চট করে অনুমান করা কঠিন! ম্যাচ সেরার পুরস্কার কার হাতে উঠবে, টুর্নামেন্ট সেরা কে হবেন—এটি ঠিক করার দায়িত্ব সম্প্রচার কর্তৃপক্ষের। আর সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের দায়িত্ব দিয়ে থাকে ধারাভাষ্যকরদের। ধারাভাষ্যকর আতহার আলী খান কাল জানালেন, টুর্নামেন্ট সেরার নাম জানতে অপেক্ষা করতে হবে ফাইনাল পর্যন্ত।
বিপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান। ছয়বারের তিনবারই টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জিতেছেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার। বিপিএলে টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার জয়ে অবশ্য অলরাউন্ডারদেরই জয়জয়কর অবস্থা! আগের ছয় বিপিএলের পাঁচবারই ‘ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট’ হয়েছেন কোনো না কোনো অলরাউন্ডার। সাকিবের কথা তো বলাই হলো। একবার হয়েছেন আসার জাইদি, আরেকবার মাহমুদউল্লাহ। শুধু ব্যাটিং কিংবা বোলিং—একটি দিয়ে মাত্র একজনই টুর্নামেন্টসেরা হয়েছেন, ক্রিস গেইল। ২০১৭ বিপিএলে ৪৮৫ রান করে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন ক্যারিবীয় ওপেনার।
টুর্নামেন্টসেরা করতে এবারও বিপিএল যদি ‘অলরাউন্ডার’ বেছে নেওয়ার রীতিতে এগোয়, তবে কার হাতে উঠতে পারে পুরস্কার? সংক্ষিপ্ত তালিকা করলে যে তিনজনকে রাখতেই হবে—সৌম্য সরকার, মেহেদী হাসান আর লুইস গ্রেগরিকে।
কুমিল্লার হয়ে সৌম্য ১২ ম্যাচে দুই ফিফটিতে করেছেন ৩৩১ রান। বাঁহাতি টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান তুলনামূলক বেশি নজর কেড়েছেন তাঁর মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে, নিয়েছেন ১২ উইকেট। যদিও তাঁর দল কুমিল্লা শেষ চারে উঠতে পারেনি। ঢাকা এবার চমকে দিয়েছে মেহেদী হাসানকে টপ অর্ডারে খেলিয়ে। মেহেদী আস্থার প্রতিদানও দিয়েছেন—৩ ফিফটিতে করেছেন ২৫৩ রান, অফ স্পিন বোলিংয়ে নিয়েছেন ১২ উইকেট। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সবচেয়ে বড় চমকটা দিয়েছেন লুইস গ্রেগরি। রংপুরের এ ইংলিশ অলরাউন্ডার ১ ফিফটিতে করেছেন ২৬২ রান, উইকেট নিয়েছেন ১৫টি।
২০১৭ বিপিএলের মতো এবারও যদি ব্যাটসম্যান বেছে নেওয়া হয়, মুশফিকুর রহিম থাকবেন সবচেয়ে এগিয়ে। ১৩ ম্যাচে ৪৭০ রান করে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক তিনি। খুলনা অধিনায়কের স্ট্রাইকরেট ১৪৭.৩৩, গড় ৭৮.৩৩! দুবার ৯০–এর ঘরে গেছেন। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে খুলনাকে নিয়েছেন ফাইনালে। ১৩ ম্যাচে ৪ ফিফটিতে ৪৫৮ রান করা মুশফিকের খুলনা–সতীর্থ রাইলি রুশোকেও রাখতে হবে ব্যাটসম্যানদের সংক্ষিপ্ত তালিকায়। টুর্নামেন্টে নিজেকে নতুন করে চেনানো ইমরুল কায়েসকেও উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।
বিপিএলে কখনো কোনো পেসার পাননি টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার। এবারও কোনো পেসারের হাতে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার ওঠার সম্ভাবনা ক্ষীণই বলতে হয়। এ দৌড়ে যে আছেন পাঁচের অধিক পেসার! মোস্তাফিজুর রহমান (২০), রুবেল হোসেন (২০), রবি ফ্রাইলিঙ্ক (১৯), মেহেদী হাসান রানা (১৮), মোহাম্মদ আমির (১৮) এমনকি শহিদুল ইসলামকেও (১৮) হিসাবের বাইরে রাখার উপায় নেই! তাহলে কাকে বেছে নেবে বিচারক প্যানেল?
বিপিএলের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট
মৌসুম | খেলোয়াড় | পারফরম্যান্স |
২০১১/১২ | সাকিব | ২৮০ রান ও ১৫ উইকেট |
২০১২/১৩ | সাকিব | ৩২৯ রান ও ১৫ উইকেট |
২০১৫/১৬ | জাইদি | ২১৫ রান ও ১৭ উইকেট |
২০১৬/১৭ | মাহমুদউল্লাহ | ৩৯৬ রান ও ১০ উইকেট |
২০১৭/১৮ | গেইল | ৪৮৫ রান |
২০১৮/১৯ | সাকিব | ৩০১ রান ও ২৩ উইকেট |