৬০৩ মিনিট, ৪২৫ বল, ১৯৬ রান—করাচি টেস্টে বাবর আজমের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ের চিত্র এটা। এই ইনিংসের রেশ এখনো কাটছে না। করাচি টেস্ট শেষ হয়েছে গত বুধবার। আগামী পরশু লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে শুরু হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্ট। কিন্তু লাহোর টেস্ট নিয়ে এখনো সেভাবে কথা হচ্ছে কই! সবাই যে এখনো মেতে আছে করাচিতে বাবরের ম্যাচ বাঁচানো ইনিংসটি নিয়ে।
৪ রানের জন্য ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতক পাননি বাবর। কিন্তু বাবরেরও সেটা নিয়ে অতটা আক্ষেপ আছে বলে মনে হয় না। করাচিতে ১৭১.৪ ওভার ব্যাটিংয়ে টিকে থেকে পাকিস্তানের বিখ্যাত এক ড্র আর সেটা এনে দেওয়ার আনন্দেই যে ভাসছেন তিনি। পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে শতক পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান, ৪ রানের জন্য শতক পাননি আবদুল্লাহ শফিক। কিন্তু বাবর যদি ওই ইনিংসটি না খেলতেন, তাহলে রিজওয়ান ও শফিকের ইনিংসে আর কী হতো! তাই তো পাকিস্তান অধিনায়ককে এখনো প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন সবাই।
বাবর এই ইনিংসের জন্য অন্য রকম এক স্বীকৃতি পেলেন উইজডেন ইন্ডিয়ার। ২১ শতকে খেলা টেস্ট বাঁচানো ইনিংসগুলোর মধ্যে এটিকে তারা আখ্যা দিয়েছে তৃতীয় সেরা হিসেবে। করাচি টেস্টের ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা বাবরের ইনিংসটিকে কেন এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তার ব্যাখ্যা উইজডেন ইন্ডিয়া এভাবে দিয়েছে, ‘দেশের মহাবিপদে বাবর আজম তাঁর নামের প্রতি সুবিচার করেছেন। ২০২০ সালের পর টেস্টে প্রথম শতক করেছেন তিনি।’
৯ উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার ৫৫৬ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া। এর জবাবে পাকিস্তান অলআউট হয়ে যায় ১৪৮ রানে। অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ২ উইকেটে ৯৭ রান তুলে। জয়ের জন্য পাকিস্তানের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫০৬ রান। ম্যাচ বাঁচাতে তাদের খেলতে হতো ১৭২ ওভার। ১৭১.৪ ওভারে পাকিস্তান ৭ উইকেটে ৪৪৩ রান তোলার পর আম্পায়ার ড্র ঘোষণা করেন ম্যাচ।
২১ শতকে ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস খেলার দিক থেকে উইজডেন ইন্ডিয়ার চোখে বাবরের চেয়ে এগিয়ে ফাফ ডু প্লেসি ও রিকি পন্টিং। উইজডেন ইন্ডিয়ার চোখে দ্বিতীয় সেরা ডু প্লেসির ইনিংসটি তাঁর অভিষেক টেস্টে, ২০১২ সালে। অ্যাডিলেডে দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যান অপরাজিত ছিলেন ১১০ রান করে। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ৫৫০ রানের জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা করেছিল ৩৮৮ রান। অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে ২৬৭ রান তুলে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে। ৪৩০ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৪৮ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪৮ রান তোলার পর ড্র হয়ে যায় ম্যাচ। ৬ নম্বরে ব্যাট করতে নামা ডু প্লেসি তখন ৪৬৬ মিনিট ও ৩৭৬ বল খেলে ১১০ রানে অপরাজিত। অভিষেক টেস্টেই ম্যাচসেরার পুরস্কারও জেতেন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান।
উইজডেনের চোখে ২১ শতকে ম্যাচ বাঁচানোর ইনিংসগুলোর মধ্যে সেরা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০৫ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক পন্টিংয়ের ১৫৬ রান। অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টে জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়াকে ৪১৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল ইংল্যান্ড। ১০৮ ওভার ব্যাটিং করে অস্ট্রেলিয়া ৯ উইকেটে ৩৭১ রান তোলার পর ম্যাচ ড্র হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়া এই রান করতে পেরেছে বা ১০৮ ওভার টিকে থাকতে পেরেছে ২৭৫ বলে পন্টিংয়ের ১৫৬ রানের ইনিংসটির কারণেই।