ক্যাচ জেতায় ম্যাচ। ক্রিকেটরসিক মাত্রই এ কথার সঙ্গে পরিচিত। একটি ক্যাচ যেমন ম্যাচ জিতিয়ে দিতে যথেষ্ট, তেমনি একটি ক্যাচ মিসের আক্ষেপ কুঁকড়ে খায় অনন্তকাল। ক্যাচের মূল্য ক্রিকেট মাঠে বেশ চড়া। আর বিশ্বকাপে গুরুত্বপূর্ণ এবং চোখধাঁধানো ক্যাচগুলো তো ক্রিকেটপ্রেমীদের স্মৃতিতে অমর হয়ে থাকে। এই যেমন জন্টি রোডস, ডোয়াইন লেভেরক, ভাসবার্ট ড্রেক্সদের ক্রিকেট দুনিয়া মনে রাখবে বিশ্বমঞ্চে দারুণ সব ক্যাচের জন্য। তেমনি এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপেও অবিশ্বাস্য, অতিমানবীয় কিছু ক্যাচের দেখা মিলেছে, যে ক্যাচগুলো মানুষ ফিরে ফিরে দেখবে, বিস্মিত হবে। এবারের বিশ্বকাপে তেমন মনে রাখার মতো পাঁচটি ক্যাচ নিয়েই এই প্রতিবেদন:
জিমি নিশাম (নিউজিল্যান্ড)
ভারতীয়দের ব্যাটসম্যানদের কাল শুরু থেকেই নড়বড়ে অবস্থা ছিল। ৩.১ ওভারের মধ্যেই তাদের তিন তারকা ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নের পথ চিনিয়েছেন কিউই পেসাররা। শুরুর ধকল কাটিয়ে উঠতে ঋষভ পন্তকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন দিনেশ কার্তিক। কিন্তু দশম ওভারের শেষ ডেলিভারিতে ম্যাট হেনরির অফ স্টাম্পের বাইরে গুড লেংথে পড়া বলটিকে হাওয়ায় ভাসিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে পাঠিয়ে দেন দিনেশ। তবে পয়েন্টে ফিল্ডিং করতে থাকা জিমি নিশামকে ফাঁকি দিতে পারেননি তিনি। নিজের বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হাতে মাটির দু-এক ইঞ্চি দূরত্ব থেকে বলটিকে তালুবন্দী করেন নিশাম।
কুইন্টন ডি কক (দক্ষিণ আফ্রিকা)
দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারত ম্যাচে ভারতীয় ইনিংসের ১৬ তম ওভারে আন্দিলে ফিকোয়াওয়ের সোজা লাইনের লাফিয়ে ওঠা বলটিকে সজোরে খেলার চেষ্টা করেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। কিন্তু ব্যাটের কানায় লেগে বলটি প্রথম স্লিপের দিকে ধেয়ে যায়। প্রোটিয়া অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি আমলাকে স্লিপ রেখেছিলেন, তাও প্রায় দ্বিতীয় স্লিপ ঘেঁষে; তাই উইকেট রক্ষক ডি কক নিজেই ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হাতে বলটি তালুবন্দী করেন। দুর্দান্ত এই ক্যাচ নিশ্চিতভাবেই এবারের বিশ্বকাপে উইকেটরক্ষকদের নেওয়া ক্যাচগুলোর মাঝে অন্যতম সেরা।
বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড)
এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই আন্দিলে ফিকোয়াওকে ফেরাতে বেন স্টোকসের অতিমানবীয় ক্যাচটির কথা উল্লেখ না করলে তালিকাটি অপূর্ণই থেকে যাবে। দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের ৩৫তম ওভারের প্রথম বলে ফিকোয়াও স্লগ সুইপ করে বল পাঠিয়ে দেন ডিপ মিড উইকেটে, শূন্যে ভাসতে থাকা বলটিকে এক হাতে ছোঁ মেরে তালুবন্দী করেন বেন স্টোকস। সাবেক ইংলিশ স্পিনার ফিল টাফনেল তো বিবিসিতে এসে দাবিও করে ফেললেন, এটিই নাকি ‘শতাব্দীর সেরা ক্যাচ’!
মার্টিন গাপটিল (নিউজিল্যান্ড)
অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের ১২তম ওভারে কিউই পেসার লকি ফার্গুসনের শর্ট লেংথের বলটিকে সজোরে হুক করেছিলেন স্টিভ স্মিথ। কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ঠিক এই শটটি ঠেকানোর জন্যই মার্টিন গাপটিলকে লেগ গালি পজিশনে রেখেছিলেন। তবে ফার্গুসনের ৮৮ মাইল গতিতে করা বাউন্সার স্মিথের ব্যাটের ছোঁয়া পেয়ে যেন আরও গতিময় হয়ে ওঠে। কিন্তু ম্যাচে এর আগে দুটি ক্যাচ ফেলা গাপটিল এবার নিজেকে শূন্যে ভাসিয়ে এক হাতে দুর্দান্ত ভঙ্গিতে বলটি তালুবদ্ধ করেন। ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে লর্ডসের গ্যালারি সমস্বরে গর্জে উঠল, গাপটিলের ক্যাচটির মহিমা এমনই।
শেলডন কটরেল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেদিন অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানরা খুব একটা কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না। তবে স্টিভ স্মিথের দৃঢ়তায় লড়াকু সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। ৭৩ রান করা স্মিথকে ফেরানোটাই তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ। শুরুর দিকে কিছুটা ধীরলয়ে খেলতে থাকলেও ৪৫ তম ওভারে এসে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলেন স্মিথ। ওশান থমাসের অফ স্টাম্পের বাইরে ফেলা বলটিকে শাফল করে কবজির মোচড়ে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়িয়ে মারেন তিনি। কিন্তু ফাইন লেগ থেকে দৌড়ে এসে শেলডন কটরেল বাউন্ডারির সঙ্গে লুকোচুরি খেলে এক হাতে যে ক্যাচটি নিলেন সেটি নির্দ্বিধায় এই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ক্যাচ।