>বিকেল সাড়ে তিনটায় শুরু হতে যাচ্ছে ইংল্যান্ড-ভারত ম্যাচ। সেমিফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখতে ইংল্যান্ডের জন্য ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম পাঁচ ম্যাচের চারটিতে দাপুটে জয়। ফেবারিটের মতোই শুরু ছিল বিশ্বকাপ-স্বাগতিকদের। কিন্তু সেই ইংল্যান্ডই কিনা এখন সেমিফাইনালে ওঠার পথে খোঁড়াচ্ছে! সর্বশেষ দুটি ম্যাচেই হেরে এর মধ্যেই সরিষায় ভূত খুঁজতে শুরু করেছে দলটা। উইকেটে নাকি ঝামেলা, কেউ তাদের ভালো চায় না—আরও কত যে অনুযোগ!
এজবাস্টনে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে নিজেদের মধ্যে কথার লড়াইয়ে জড়িয়ে গেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটাররা। সমালোচনা শুনে দুদিন আগে জনি বেয়ারস্টো ক্ষোভ ঝেড়েছেন, সবাই নাকি বিশ্বকাপে তাদের ব্যর্থতা দেখার অপেক্ষায় আছে। সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভনের পাল্টাটা বেশ আক্রমণাত্মকই হয়েছে। বেয়ারস্টোর মন্তব্য তাঁর ভাষায় ‘নেতিবাচক ও দুঃখজনক’।
ভারতের মুখোমুখি হওয়ার আগে এই যখন স্বাগতিকদের অবস্থা, তখন বিরাট কোহলির দলে সুখী পরিবারের বাতাবরণ। সেটির পরিধি হায়াত রিজেন্সিতে থাকা ভারতীয় দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বার্মিংহামের মোট জনসংখ্যার অন্তত ২৫ শতাংশ মানুষও আপাতত সময় কাটাচ্ছে একই পারিবারিক আবহে। শহরের এক-চতুর্থাংশ মানুষ উপমহাদেশের, তাদের বেশির ভাগই আবার ভারতীয়। কোহলি-ধোনিদের দেশের মানুষেরা এজবাস্টনের গ্যালারিতে উদ্বাহু সমর্থন পেতেই পারেন প্রবাসজীবনের সুখ-দুঃখের সাথি বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বন্ধুদের।
উপমহাদেশের চার দেশ কোনো বিষয়ে এককাট্টা হয়েছে খুব কমই। তবু বিদেশের মাটিতে এক ম্যাচের জন্য এই উপমহাদেশীয় ঐক্যের মূল কারণ, বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের অমীমাংসিত সমীকরণ।
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ভারতের শেষ চারে যাওয়া মোটামুটি নিশ্চিত। চতুর্থ দল হিসেবে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ‘অপেক্ষমাণ’ তালিকায় আছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। সেমিফাইনালে যাওয়ার প্রথম শর্ত তো অবশ্যই নিজেদের বাকি ম্যাচগুলো জিততে হবে। তবে ইংল্যান্ডকে ভারত হারিয়ে দিলে এই তিন দলের জন্যই আশাটা বাড়বে। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিক বৈরিতা আছে, আছে বাংলাদেশের ফেসবুক-সমাজের ওপর কিছুটা রাগ-ক্ষোভও, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে অতীত সম্পর্কে আছে তিক্ততা। তবু এজবাস্টনের ২৫ হাজার দর্শকের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনই আজ পেতে যাচ্ছে ভারত। বার্মিংহামের বাইরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা উপমহাদেশীয়দের সমর্থনটাকেই-বা বাদ দেবেন কেন!
ক্রিকেট বিশ্বকাপে একমাত্র অজেয় এখনো কোহলির দলই, সেমিফাইনালে যাওয়ার পথটাও তাদের জন্য মোটামুটি কণ্টকমুক্ত অবস্থায়। তার ওপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলটা খেলছে বার্মিংহামে, যেটি আসলে ইংল্যান্ডের শহর, নাকি উপমহাদেশের, তাই নিয়ে মাঝেমধ্যে বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। ট্যাক্সিতে উঠবেন, তো চালক পাকিস্তানের। রেস্টুরেন্টে যাবেন, তো ওয়েটার ভারত বা বাংলাদেশের। দোকানে কিছু কিনতে গেছেন, পাশ থেকে ভেসে আসবে সিংহলিজ কথাবার্তা। আর সত্যিকারের ব্রিটিশ যাঁরা আছেন, বিশ্বকাপ ক্রিকেট যে তাঁদের মধ্যে তেমন একটা ভাবান্তর ঘটাতে পারে না, তা তো টুর্নামেন্টজুড়েই চোখে পড়ছে।
এর মধ্যে বার্মিংহাম পুড়ছে ‘তীব্র দাবদাহে’। অবাক হচ্ছেন? ইংল্যান্ডের আবহাওয়া আবার বাংলাদেশের মতো হয়ে গেল নাকি! অতটা না হলেও ইংল্যান্ডের কোনো শহরের তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস স্পর্শ করলে সেটাকে ‘দাবদাহ’ না বলে উপায় কী! ইউরোপের অন্যান্য দেশেও কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড গরম। বিবিসির খবর, গত শুক্রবার ফ্রান্সের তাপমাত্রা উঠেছে ৪৫.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেটি কিনা দেশটির সর্বকালের সর্বোচ্চ।
বুঝতেই পারছেন, এজবাস্টনে আজ কতটা ‘স্বাগতিক’ হয়ে উঠতে পারে ভারত। গ্যালারিতে উপমহাদেশীয় ঐক্য, মাথার ওপর চেনা সূর্য। তাপমাত্রা আজও প্রায় একই রকম থাকার পূর্বাভাসে ইঙ্গিত মিলছে, উইকেটের সম্ভাব্য ফাটল থেকে হয়তো কিছুটা টার্নও পাবেন ভারতীয় স্পিনাররা।
বার্মিংহামে ভারতের অতীতটাও কিন্তু বেশ সুখস্মৃতির। লর্ডস, ওল্ড ট্রাফোর্ড এবং ওভালের পর ইংল্যান্ডের চতুর্থ বৃহত্তম ভেন্যু এজবাস্টনে এখন পর্যন্ত ১০টি ওয়ানডে খেলে সাতটিতেই জিতেছে ভারত, এর পাঁচটিই সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচে। ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ও তাদের এ মাঠেই। ফাইনালটা সেবার কার বিপক্ষে খেলেছিল ভারত, মনে আছে তো? এই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই।