এক পাশে তামিম আর...

তামিম ইকবাল
তামিম ইকবাল

‘উদ্বোধনী জুটির সঙ্গী হলো ভাইয়ের মতো’—ম্যাথু হেইডেনের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে দারুণ রসায়ন প্রসঙ্গে একবার বলেছিলেন জাস্টিন ল্যাঙ্গার। তামিম ইকবালও শতভাগ একমত ল্যাঙ্গারের সঙ্গে। তবে ‘সঙ্গী’ নিয়ে ল্যাঙ্গারের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তাঁর কিছুতেই মিলবে না। ২০০৭-এর ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকে যে একের পর এক সঙ্গী বদল হয়েছে তাঁর। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২৭৩ ইনিংসে সংখ্যাটা ১৪। শাহরিয়ার নাফীস থেকে শুরু করে লিটন দাস, অতীত-বর্তমানের আয়নায় সঙ্গীদের ফিরে দেখলেন তামিম ইকবাল।
অভিষেকেই সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন শাহরিয়ারকে। ২২ গজে দুজনের রসায়নটা না জমলেও জানালেন, খেলোয়াড় হিসেবে শাহরিয়ারের কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখেছেন, ‘বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারকে দেখে যদি কিছু শিখে থাকি, সেটি ওনার কাছ থেকেই। অনুশীলনের আগে বা পরে যে আলাদাভাবে অতিরিক্ত ব্যাটিং করতে হয়, এটা তাঁর কাছ থেকেই শিখেছিলাম।’
দ্বিতীয় সঙ্গী জাভেদ ওমর। যাঁর সঙ্গে ওপেন করাটা তামিমের কাছে অন্য কারণে স্মরণীয়, ‘ছেলেবেলায় একদম মাঠে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতে চাইতাম। এ কারণে অনেক চেষ্টা-চরিত্র করে বলবয় হতাম। জাভেদ ভাইয়ের প্রথম খেলা দেখেছি বলবয় হিসেবেই। পরে তাঁর সঙ্গে আন্তর্জাতিক ম্যাচে ওপেন করাটা বড় ব্যাপার মনে করি।’
জাভেদের মতো নাজিমউদ্দিনও একসময় তামিমের কাছে ছিল বিরাট এক নাম, ‘চট্টগ্রামের ছেলে হওয়ায় নাফিস ভাই, আফতাব ভাইয়ের মতো নাজিম ভাইও স্থানীয় টুর্নামেন্টে ছিলেন পরিচিত মুখ। পরে তাঁর সঙ্গে ওপেন করতে নামাটা ছিল দারুণ ব্যাপার।’
একটা সময় দারুণ জমেছিল জুনায়েদ সিদ্দিকের সঙ্গে। জুনায়েদ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তামিমের মুখে রহস্যের হাসি, ‘ওর সঙ্গে একটা ঘটনা আছে। জুনায়েদের কাছ থেকেই নাহয় শুনুন।’ জুনায়েদের কাছে প্রসঙ্গটা তুলতেই ঘটনাটা মনে পড়ে গেল তাঁর, ‘বছর পাঁচেক আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটা ম্যাচে ব্রেন্ডন টেলর এল বল করতে। প্রথম বলেই ক্যাচ তুলে দিয়েছিলাম বোলারের হাতে। নন-স্ট্রাইকার তামিমের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ায় সহজ ক্যাচটা ধরতে পারেনি টেলর।’ ২০ রানে জীবন পেয়ে জুনায়েদ করেছিলেন ৫৬। ঘটনাটা স্রেফ অনিচ্ছাকৃত হলেও তামিমের প্রতি আজও কৃতজ্ঞ জুনায়েদ, ‘ম্যাচটা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ওই ইনিংস দিয়েই সুযোগ পেয়েছিলাম ২০১১ বিশ্বকাপে।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা উদ্বোধনী জুটিতে তামিমের সঙ্গী ইমরুল কায়েস। সবচেয়ে বেশি ইনিংসে একসঙ্গে ওপেন করেছেন, রানও সবচেয়ে বেশি। তামিম দুজনের রসায়নের ব্যাখ্যাটা দিলেন এভাবে, ‘ওর খেলাটা ভালো বুঝি। সে কী ধরনের ক্রিকেটার, কোন ধরনের ক্রিকেট খেলে, সব জানি। সে আমারটা বোঝে। একে অপরকে ভালোভাবে বুঝলে খেলাটা অনেক সহজ হয়ে যায়।’
ওপেনিং সঙ্গীদের সঙ্গে খুনসুটি তো হয়ই। যেমন নাঈম ইসলামকে তামিম বলেন, ‘আপনার সঙ্গে যখন ওপেন করি রান পাই না! আপনি আর ওপেন করিয়েন না তো!’ নাঈমের সঙ্গে দুবার ওপেন করে তামিম করেছেন ০ ও ২১।
তামিমের সঙ্গীদের তালিকায় একটি নাম চমকে দেওয়ার মতো। ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস শুরু করেছিলেন মুশফিককে নিয়ে। যে অভিজ্ঞতার কথা মনে করে এক চোট হাসলেন তামিম, ‘খুব সম্ভব জুনায়েদের চোটের কারণে মুশফিক ওপেন করেছিল। ওকে ওপেনিংয়ে দেখে খুব হাসি পাচ্ছিল! তখন সে নিয়মিত ছয়-সাতে ব্যাটিং করত। নতুন বল কীভাবে সামলায়, দেখার খুব আগ্রহ ছিল। ওই ম্যাচে আমি তেমন রান (৪) করতে পারিনি, তবে সে করেছিল ৯৮!’
ওপেন করেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল, জহুরুল ইসলাম, শামসুর রহমানের সঙ্গেও। এঁদের মধ্যে জহুরুলকে নিয়ে একটা আক্ষেপ আছে তামিমের, ‘ওকে আমার বাংলাদেশের অন্যতম দুর্ভাগা খেলোয়াড় মনে হয়। সামর্থ্য, প্রতিভার তুলনায় নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি।’ আরেক সঙ্গী শামসুরের সঙ্গে সম্পর্কটা বদলে গেছে সময়ের প্রবাহে, ‘বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে শুভ (শামসুর) ভাইকে খুব ভয় পেতাম! তিনি তো বেশ রাশভারী; কি-না-কি বলেন, ভয়ে ওনার সঙ্গে কথাই বলতাম না! পরে অবশ্য দুজনের দারুণ বন্ধুত্ব হয়েছে।’
চোট সৌম্যকে ছিটকে দেওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে স্ট্রোক প্লেতে উজ্জ্বল এক জুটির অংশীদার তামিম। বয়সে অনেক ছোট সৌম্যর ব্যাপারে মুগ্ধতাও প্রকাশ না করে পারলেন না, ‘সৌম্যের সঙ্গে যখন ওপেন করা শুরু করলাম, ভালো রান পাইনি। নিজে ভালো অবস্থায় না থাকার সময় পার্টনার যদি রান করে দেয়, একটু হলেও খেলাটা সহজ হয়ে যায়। সৌম্য আমার জন্য সেটাই করেছে।’
তামিমের সর্বশেষ সঙ্গী লিটন। টানা ব্যর্থতায় বাদ পড়ার পরও তামিমের চোখে যিনি ‘ভবিষ্যতের তারকা’, ‘আন্তর্জাতিক ম্যাচে ও যে কটা ইনিংস খেলেছে, আমি বলব প্রতিভা-সামর্থ্যের মাত্র ৩০ শতাংশ দিতে পেরেছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে যে কটা ইনিংস দেখেছি, তাতে বলতে পারি, ও বাংলাদেশ দলের আগামী দিনের বিরাট তারকা। সবাইকে অনুরোধ, ওকে একটু সময় দিন।’

ওপেনিং সঙ্গীরা

তাঁর ওপেনিং সঙ্গীরা
শাহরিয়ার নাফীস
২০০৭-২০১১
ইনিংস ২৪
রান ৪৯০ সর্বোচ্চ ১০৯
গড়
২০.৪১
১০০/৫০
১/১
জাভেদ ওমর
২০০৭-২০০৭
ইনিংস ৬ রান ২০৬ সর্বোচ্চ ৭৮
গড়
৩৪.৩৩
১০০/৫০
০/২
নাজিমউদ্দিন
২০০৭-২০১২
ইনিংস ২২ রান ৩৯৪ সর্বোচ্চ ৬৮
গড়
১৭.৯০
১০০/৫০
০/১
জুনায়েদ সিদ্দিক
২০০৭-২০১২
ইনিংস ৪৪ রান ১০০৮ সর্বোচ্চ
১৬১
গড়
২৩.৪৪
১০০/৫০
১/৪
মেহরাব হোসেন জু.
২০০৮-২০০৯
ইনিংস ৪ রান ৮২ সর্বোচ্চ
৩৮
গড়
২০.৫০
১০০/৫০
০/০
ইমরুল কায়েস
২০০৮-২০১৫
ইনিংস ৯২ রান ৩৪২৮ সর্বোচ্চ ৩১২
গড়
৩৭.৬৭
১০০/৫০
৫/১৫
নাঈম ইসলাম
২০০৯-২০১১
ইনিংস ২ রান ৪৪ সর্বোচ্চ ৪৪
গড়
২২.০০
১০০/৫০
০/০
মুশফিকুর রহিম
২০০৯-২০০৯
ইনিংস ১ রান ৪৩ সর্বোচ্চ ৪৩
গড়
৪৩.০০
১০০/৫০
০/০
মোহাম্মদ আশরাফুল
২০১০-২০১৩
ইনিংস ১০ রান ২৭৯ সর্বোচ্চ ৬৫
গড়
২৭.৯০
১০০/৫০
০/২
এনামুল হক
২০১২-২০১৫
ইনিংস ৩৩ রান ১০১৩ সর্বোচ্চ ১৫৮
গড়
৩১.৬৫
১০০/৫০
২/৩
জহুরুল ইসলাম
২০১৩-২০১৩
ইনিংস ৪ রান ১৫৮ সর্বোচ্চ ৯১
গড়
৩৯.৫০
১০০/৫০
০/১
শামসুর রহমান
২০১৩-২০১৪
ইনিংস ১৭ রান ৩৬২ সর্বোচ্চ ৭১
গড়
২১.২৯
১০০/৫০
০/৩
সৌম্য সরকার
২০১৫-২০১৫
ইনিংস ১৩ রান ৬০৭ সর্বোচ্চ ১৫৪
গড়
৪৬.৬৯
১০০/৫০
৩/০
লিটন দাস
২০১৫-২০১৫
ইনিংস ১ রান ২ সর্বোচ্চ ২
গড়
২.০০
১০০/৫০
০/০

টুকিটাকি
২৭৩
টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ২৭৩ ইনিংস ব্যাট করেছেন তামিম। প্রতিবারই ওপেন করেছেন এই বাঁহাতি। এর মধ্যে ইনিংসের প্রথম বলটি খেলেছেন ২৬৬ বার।

তামিম-ইমরুল

২০১৩
টেস্টে উদ্বোধনী জুটিতে তামিম-ইমরুলের রান। বাংলাদেশের অন্য কোনো জুটি ৭০০ রানও করতে পারেনি।
৩১২
টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম উইকেটে সবচেয়ে বড় জুটির অংশীদার তামিম ইকবাল। এ বছর খুলনা টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে তামিম-ইমরুলের ৩১২ রান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জুটিও।

ওয়ানডেতে উদ্বোধনী জুটিতে সবচেয়ে বেশি রান করা বাংলাদেশের পাঁচটি জুটিতেই আছে তামিমের নাম।
১২

প্রথম উইকেটে বাংলাদেশের ২০টি সেঞ্চুরি জুটির ১২টিতেই ছিলেন তামিম।
৪৬.৬৯
সৌম্যর সঙ্গে তামিমের উদ্বোধনী জুটির গড়, যা তাঁর জুটিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।
পরিসংখ্যান: মোহাম্মদ সোলায়মান