এমন একটা শুরুর পর…৪

এক টেস্ট, এক সেঞ্চুরি! বিনি সুতোর মালায় গাঁথা গানটৌমি আর রেডমন্ড

>প্রভাত কি সব সময় দিনের সঠিক পূর্বাভাস দেয়? কখনো দেয়, কখনো দেয় না। ক্রিকেটও এমনই। দুঃস্বপ্নের মতো শুরুর পরও যেমন আলো ছড়ানোর গল্প আছে, তেমনি হইচই ফেলে দেওয়া আবির্ভাবের পর পথ হারিয়ে ফেলারও। এসব গল্প নিয়েই নতুন এই ধারাবাহিক শুরু করলেন উৎপল শুভ্র
অ্যান্ডি গানটৌমি: এক টেস্ট, এক ইনিংস, ১১২ রান, গড় ১১২!
অ্যান্ডি গানটৌমি: এক টেস্ট, এক ইনিংস, ১১২ রান, গড় ১১২!

যে প্রশ্নটার উত্তর দিতে অনেকক্ষণ মাথা চুলকানোর কথা ছিল, স্যার ডন ব্র্র্যাডম্যানের কল্যাণে সেটিই হয়ে গেছে ক্রিকেটের সহজতম প্রশ্নগুলোর একটি। টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড় কার---এই প্রশ্ন করলে বরং 'আমাকে কী ভেবেছেন, এটা কে না জানে' জাতীয় ঝাঁজালো কোনো উত্তর শোনার সম্ভাবনাই বেশি। নামটা বলার পর ব্যাটিং গড় জানতে চাওয়াটাও একই রকম বিপজ্জনক। দশমিক-টশমিক দিয়ে বিদঘুটে একটা সংখ্যা। তারপরও ক্রিকেট ইতিহাস নিয়ে একটু আগ্রহ আছে, এমন যে কারোরই তো সেটি মুখস্থ। ৯৯,৯৪!

কিন্তু যদি বলি, আপনি ভুল জানেন! ৯৯.৯৪ নয়, টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড় হলো ১১২; রেকর্ডটাও স্যার ডনের নয়, এটির মালিক অ্যান্ডি গানটৌমি---তাহলে কি একটু অবাক হবেন? গানটৌমির গল্পটা জানা না থাকলে হওয়ারই কথা। সঙ্গে সঙ্গেই আপনি হয়তো গুগলে সার্চ দিয়েছেন। সরাসরি ক্রিকইনফোর শরণাপন্নও হয়ে থাকতে পারেন। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে হয়তো হাসছেন, বললেই হলো! এই তো টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ক্যারিয়ার ব্যাটিং গড়ের তালিকায় সবার ওপরে ডন ব্র্যাডম্যান আর ৯৯.৯৪-ই দেখাচ্ছে।

তা দেখায় সত্যি, কিন্তু স্ক্রল করে একটু নিচে নামুন। কী দেখছেন? 'কমপক্ষে ২০ ইনিংস' বলে একটা কথা লেখা আছে না? এই শর্ত মানলে স্যার ডনই সবার ওপরে থাকেন। কিন্তু না মানলে? কমপক্ষে এত ইনিংস খেলতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকলে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড়ের রেকর্ডে অধিকারটা কিন্তু অ্যান্ডি গানটৌমিকেই ছেড়ে দিতে হয় ব্র্যাডম্যানকে। কী, কার্টিস প্যাটারসনের কথা বলছেন? হ্যাঁ, হ্যাঁ, মনে আছে তাঁর কথা। অস্ট্রেলিয়ার এই ব্যাটসম্যান গত বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে ৩০ রান করার পর পরের টেস্টে করেছেন ১১৪, এই তো! একবারই আউট হয়েছেন বলে ব্যাটিং গড় আর মোট রান সমান---১৪৪! প্রশ্নটা তাই খুবই যৌক্তিক, টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড় তাহলে গানটৌমির হয় কিভাবে? আহা, প্যাটারসনের ক্যারিয়ার তো এখনো শেষ নয়। আপাতত তাঁকে এই আলোচনার বাইরে রাখাই তাই ভালো না!

রডনি রেডমন্ড: টেস্ট অভিষেকে ১০৭ ও ৫৬, এখানেই শেষ ক্যারিয়ার!

ব্র্যাডম্যান-গানটৌমি কারোরই অবশ্য এখন এই রেকর্ড নিয়ে মাথাব্যথা নেই। স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ২০০১ সালেই এসবের উর্ধ্বে চলে গেছেন। ২০১৬ সালে অ্যান্ডি গানটৌমিও। দুজনই দীর্ঘ জীবন পেয়েছেন। ব্র্র্যাডম্যান ৯২ বছর ১৮২ দিন। জীবনে এই একবার 'নার্ভাস নাইনটিজে' আউট! গানটৌমি 'সেঞ্চুরি' প্রায় করেই ফেলেছিলেন। আর ৫টা রান (পড়ুন 'বছর') পেলেই হতো। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৯৫ বছর ২৬ দিন। কার সঙ্গে কাকে মেলাচ্ছি! স্যার ডন ব্র্যাডম্যান সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান আর গানটৌমি টেস্টই খেলেছেন মাত্র একটি। আরে ভাই, একটি খেলেছেন বলেই তো তাঁকে নিয়ে এত কথা! এক টেস্টেই ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়াতেই তো আসলে নিশ্চিত হয়ে গেছে গানটৌমির অমরত্ব।

একটা মাত্র টেস্ট, ইনিংসও একটাই। একবারই ব্যাট করেছেন বলে ব্যাটিং গড় বের করতেও কোনো ঝামেলা নেই। মোট রান সংখ্যাই তাঁর গড়। সেটি ১১২! টেস্ট অভিষেকেই সেঞ্চুরি করার পর কেন আর টেস্ট খেলার সুযোগ পেলেন না কেন? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা একটু পরে খুঁজি। তার আগে রডনি রেডমন্ড নামে আরেকজনের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই। গানটৌমির কথা বললে অবধারিতভাবে রেডমন্ডের নামটাও আসে। এই নিউজিল্যান্ডারও 'ওয়ান টেস্ট ওয়ান্ডার', মূল কারণ অবশ্যই এটি নয়। এক টেস্ট খেলেই হারিয়ে যাওয়া ক্রিকেটারের কি অভাব আছে নাকি! তাঁদের মধ্যে গানটৌমি আর রেডমন্ড আলাদা, কারণ 'এক টেস্ট, এক সেঞ্চুরি'র কীর্তি আছে শুধু এই দুজনেরই। পার্থক্য হলো, রডনি রেডমন্ড দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রথম ইনিংসে ১০৭ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ৫৬। দুবারই আউট হয়েছিলেন বলে ব্যাটিং গড়ে গানটৌমির চেয়ে একটু পিছিয়ে, তারপরও সেটি ৮১.৫০!

অভিষেক টেস্টে ১৬৩ রান করার পর সেটিই কেন রডনি রেডমন্ডের শেষ টেস্ট হয়ে থাকল, যে কারও মনে এই প্রশ্ন জাগতেও বাধ্য। উত্তরটা এক কথায় দেওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচকদের দায় আছে, দায় আছে ভাগ্যের এবং অবশ্যই কন্টাক্ট লেন্সের। অভিষেকেই সেঞ্চুরির পর অটোমেটিক চয়েস হিসাবেই ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছিলেন। দৃষ্টিশক্তির সমস্যা ছিল আগে থেকেই। একটু দূরের জিনিস দেখতে পেতেন না। চশমা পরেই খেলতেন তাই। এই ঝামেলা এড়াতে ইংল্যান্ড সফরে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে শুরু করলেন। কিন্তু সেটির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি। সফরের দুটি ওয়ানডেতে দলে থেকে একমাত্র যে ইনিংসটি খেললেন, সেটিতে মাত্র ৩ রান। ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচগুলোতে ২৮.৪১ গড়ে ৪৮৩। তাতেও কি ব্যাখ্যা মেলে? ওই ৪৮৩ রানের মধ্যে তো দুটি হাফ সেঞ্চুরি ছিল। আগের টেস্টে সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যানের একাদশে থাকার জন্য সেটিই কি যথেষ্ট হওয়ার কথা নয়?

ভাগ্যের কথা আসছে, কারণ রেডমন্ডের অভিষেক টেস্টটি যদি সিরিজের শেষ টেস্ট না হতো, তা হলে নিশ্চয়ই দ্বিতীয় টেস্ট খেলার সুযোগ পেতেন। ১৯৭৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে অকল্যান্ডে রেডমন্ডের টেস্ট অভিষেক। নিউজিল্যান্ড পরের টেস্ট খেলতে নামল প্রায় চার মাস পর। রেডমন্ডের টেস্ট ক্যারিয়ার শুরুতেই শেষ হয়ে যাওয়ার জন্য কন্টাক্ট লেন্স আর ভাগ্যকেই দায়ী করে আসা হয়েছে দীর্ঘদিন। রেডমন্ডও এর পক্ষে-বিপক্ষে কোনো কথা বলেননি। প্রায় চার দশক পর সেটিতে নির্বাচকদের পছন্দ-অপছন্দকেও যোগ করে নিতে বলেন। অনেক দিনই অস্ট্রেলিয়ার পার্থে আবাস। ২০১৫ সালে সেখান থেকেই দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রেডমন্ড দাবি করেন, নির্বাচকেরা মন থেকে তাঁকে দলে নেননি। নিয়েছিলেন অনেকটা বাধ্য হয়েই। গ্লেন টার্নারের ওপেনিং সঙ্গী হিসাবে জন পার্কারকে চূড়ান্ত করে রেখেছিলেন তাঁরা। মিথ্যা অনুযোগ বলা যাচ্ছে না। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই সিরিজেরই প্রথম টেস্টে পার্কারের অভিষেক। ফিল্ডিং করার সময় হাতের আঙুল ভেঙে যাওয়ায় তাঁর আর ব্যাটিংই করা হয়নি। পার্কারের বদলে গ্লেন টার্নারের সঙ্গে ওপেন করতে নেমে টেরি জার্ভিস 'পেয়ার' পাওয়ার পরও তিনিই খেলেন পরের টেস্টে। সেটিতে ৭ ও ৩৯ করার পর নির্বাচকদের রডনি রেডমন্ডকে একটা সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত। সিরিজের তৃতীয় টেস্টটা ছিল রেডমন্ডের হোম গ্রাউন্ডে, এরও ভূমিকা থেকে থাকতে পারে এতে। সেই সুযোগ রেডমন্ড কীভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন, সেটি তো ইতিহাস। জন পার্কারকে নিয়ে রেডমন্ডের কথাটাও সত্যি মনে হচ্ছে ইংল্যান্ড সফরের তিন টেস্টের স্কোরকার্ড দেখলে। তিন টেস্টেই টার্নারের সঙ্গে ওপেন করেন পার্কার। ৭ ইনিংসে মোট রান ২৩, সর্বোচ্চ ছিল ৮। প্রথম দুই টেস্টে পার্কার ২, ৬, ৩ রান করার পরও তৃতীয় টেস্টে রেডমন্ডকে সুযোগ না দেওয়াটাকে তো ক্রিকেটীয় কেলেঙ্কারিই বলতে হয়।

অ্যান্ডি গানটৌমির ক্ষেত্রেও তো এই শব্দটা ব্যবহার করা যায়। অভিষেক টেস্টের একমাত্র ইনিংসে সেঞ্চুরি করার পরও তাঁর আর টেস্ট খেলার সুযোগ না পাওয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বীপে দ্বীপে রেষারেষির বড় ভূমিকা ছিল। হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে তখনো প্রকট সাদা-কালো দ্বন্দ্বও। রেডমন্ডের মতো গানটৌমির একমাত্র টেস্টটিও যে তাঁর হোম গ্রাউন্ডে, এটাও চোখে পড়ার মতো। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৪৭-৪৮ সিরিজে ত্রিনিদাদের কুইন্স পার্ক ওভালে ওই সেঞ্চুরি, গায়ানায় সিরিজের পরের টেস্টেই গানটৌমি বাদ! এর আগে ছড়িয়ে দেওয়া হয় একটা অভিযোগ, তিনি দলের স্বার্থবিরোধী স্লো ব্যাটিং করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিততে না পারায় শেষ দিনে বৃষ্টির সঙ্গে এটিরও দায় আছে। ওই সিরিজের পরের দুই টেস্টে তো সুযোগ পানইনি, এরপর ভারত সফরের দলেও রাখা হয়নি গানটৌমিকে। রেডমন্ড যেমন ওই ইংল্যান্ড সফর থেকে ফেরার পর পারিবারিক ঝামেলায় পরের মৌসুমটাতে খেলেনইনি, এরপর ফিরলেও দুই বছর পর ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটই ছেড়ে দেন, গানটৌমির ঘটনা তা নয়। ত্রিনিদাদের হয়ে নিয়মিতই খেলে গেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলেও ডাক পেয়েছেন আরেকবার। সেটি ১৯৫৭ সালের ইংল্যান্ড সফরে। ৩৬ বছরের গানটৌমি ততদিনে সেরা সময় পেছনে ফেলে এসেছেন। পাঁচ টেস্টের সব কটিতেই তিনি দর্শক হয়ে থাকেন।

একমাত্র ইনিংসে সেঞ্চুরি করার পরও এক টেস্টেই তাঁর ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার জন্য সে সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের তারকা ওপেনার জেফ স্টলমেয়ারকে দায়ী করে এসেছেন গানটৌমি। স্টলমেয়ারের আত্মজীবনীতে গানটৌমির 'ধীরগতির ব্যাটিং'-এর সমালোচনার জবাব দিয়েছেন উইজডেন ক্রিকেট মান্থলিতে চিঠি লিখে। আরও বিস্তারিত হয়েছেন ওই সেঞ্চুরির ৬০ বছর পর প্রকাশিত আত্মজীবনীতে। যেটির নাম: মাই স্টোরি, দ্য আদার সাইড অব দ্য কয়েন। হাততালি পাওয়া সে সময়ের আরও কয়েকটি টেস্ট ইনিংসের সঙ্গে তুলনা করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, যেমন প্রচার করা হয়েছে, তাঁর সেঞ্চুরিটা মোটেই এমন শম্বুক গতির ছিল না। বেশির ভাগ টেস্টেই তখন বলের হিসাব রাখা হতো না, সময় দিয়েই বুঝতে হতো ইনিংসের গতি প্রকৃতি। গানটৌমির সেঞ্চুরিতে সময় লেগেছিল সাড়ে চার ঘণ্টা। যেটি জেনে ক্লাইভ লয়েড, ব্রায়ান লারা, জিমি অ্যাডামসের মতো তাঁর উত্তর প্রজন্মের ব্যাটসম্যানরা রীতিমতো বিস্মিত হয়েছেন বলে আত্মজীবনীতে লিখেছেন গানটৌমি। তাঁরা যে অন্যরকম শুনে এসেছেন।

মা্ই স্টোরি, দ্য আদার সাইড অব দ্য কয়েন: একমাত্র টেস্টটি খেলার ৬০ বছর পর প্রকাশিত আত্মজীবনীতে মুদ্রার অন্য পিঠেও আলো ফেলেছেন অ্যান্ডি গানটৌমি। ছবি: লেখক

আরেকটা প্রশ্নও নিয়মিতই শুনতে হয়েছে গানটৌমিকে, 'আপনার ইনিংসে সিঙ্গেল ছিল কয়টি?' গানটৌমি গম্ভীর মুখে একই উত্তর দিয়ে গেছেন, '৯৯টি' ! টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে ধীরগতির সেঞ্চুরির রেকর্ডটি তাঁর---এই ভুলও নাকি নিয়মিতই ভাঙাতে হয়েছে তাঁকে। এই অপবাদ তাঁর গায়ে কেমন লেগে গিয়েছিল, সেটি বোঝাতে মজার অনেক অভিজ্ঞতার কথাও রসিয়ে রসিয়ে বর্ণনা করেছেন গানটৌমি। তার একটি এমন---প্রতিবেশীর বাড়িতে পার্টিতে গেছেন। সেখানে তাঁর সেঞ্চুরির সময় জন্মও হয়নি, এমন এক তরুণ সবাইকে শুনিয়ে বলছেন, 'এই সেই লোক, যে একটা সেঞ্চুরি করতে তিন দিন লাগিয়ে ফেলেছিল।' ব্যাটিংয়ের সময় আরও দ্রুত রান তোলার জন্য সে টেস্টের অধিনায়ক জেরি গোমেজ যে চিরকুট পাঠিয়েছিলেন, সেটি অবশ্য স্বীকার করেছেন গানটৌমি। শুধু স্বীকারই করেননি, আত্মজীবনীতে সেটি ছেপেও দিয়েছেন। কী ভেবে এত বছর এটি রেখে দিয়েছেন, ভেবে বিস্ময়ই লাগে। সেই চিরকুটটা অবশ্য শুধু তাঁর উদ্দেশে লেখা ছিল না, সম্বোধন ছিল 'অ্যান্ডি অ্যান্ড ফ্র্যাঙ্ক'। অ্যান্ডি কে, তা তো বুঝতেই পারছেন। ফ্র্যাঙ্ক মানে তখন উইকেটে গানটৌমির সঙ্গী ফ্র্যাঙ্ক ওরেল। ওই টেস্টেই যাঁর অভিষেক।

সেঞ্চুরি করার পরের টেস্টে তাঁকে বাদ দেওয়ার পেছনে স্টলমেয়ারের মোটিভ কী ছিল, আত্মজীবনীতে সেটিও লিখেছেন গানটৌমি। স্টলমেয়ারের চোটই টেস্ট অভিষেকের সুযোগ করে দিয়েছিল তাঁকে। ত্রিনিদাদে গানটৌমির মতো সেঞ্চুরি করেছিলেন তাঁর ওপেনিং পার্টনার জোয়ি ক্যারুও। দুজন মিলে গড়েছিলেন ১৭৫ রানের জুটি। সেটি দেখেই স্টলমেয়ার প্রমাদ গুণেছিলেন বলে গানটৌমির দাবি। গায়ানায় পরের টেস্টেও ক্যারুর সঙ্গে গানটৌমির ভালো একটা ওপেনিং জুটি হলে তাঁর দলে ফেরা নিয়ে যে একটা ঝামেলা তৈরি হবে।

এই দাবির সত্যি-মিথ্যা যাচাই করা কঠিন। তবে গানটৌমির সেঞ্চুরিটি যে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল, এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। রডনি রেডমন্ডের গায়ে এমন কোনো কালি লাগেনি। লাগবে কীভাবে, তাঁর সেঞ্চুরি মাত্র ১১০ বলে। সেই সময়ের বিচারে যেটিকে বলতে হয় রীতিমতো ঝড়োগতির। ১০৭ রানের ইনিংসের ৮০-ই বাউন্ডারি থেকে। ২০টি চারের পাঁচটি পরপর পাঁচ বলে। মাজিদ খান বোলিং করতে এসেই পড়েছিলেন এই তোপের মুখে। সেঞ্চুরির পর কত বল খেলেছিলেন, এই তথ্যটা কোথাও না পাওয়ায় পুরো ইনিংসের বলের হিসাবটা দেওয়া গেল না। দ্বিতীয় ইনিংসের বলের হিসাবটাও নেই। স্কোরকার্ডে শুধু সময়টা আছে। ৮৪ মিনিটে ৫৬ বুঝিয়ে দিচ্ছে, সেটিও বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই করা।

গানটৌমির গল্প গানটৌমিতেই শেষ। 'রেডমন্ড'-এর তা নয়। রডনি রেডমন্ড একমাত্র টেস্টটি খেলার প্রায় ৩৪ বছর পর নিউজিল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট খেলতে নামেন তাঁর ছেলে অ্যারন রেডমন্ড। শুরুটা পুরো বিপরীত। টেস্টে বাবার প্রথম ইনিংসটি ছিল সেঞ্চুরি আর ছেলে আউট শূন্য রানেই! আরেকটা অমিল অবশ্য বাবা-ছেলে দুজনের জন্যই ছিল আনন্দ বয়ে এনেছে। ছেলের ক্যারিয়ার এক টেস্টে শেষ হয়নি। প্রথম টেস্টে ০ ও ১৭ রান করার পরও অ্যারন রেডমন্ড খেলেছেন আরও ৭টি টেস্ট। যার দুটি ২০০৮ সালের বাংলাদেশ সফরে। ৭৯ ও ৮৩ রানের দুটি ইনিংসে আশা জাগিয়েও সেঞ্চুরিতে অবশ্য বাবাকে ছোঁয়া হয়নি।
তা না-ই বা হলো, তবে বাবাকে তো আবার আলোচনায় ফিরিয়ে এনেছেন। সেই সূত্রে অ্যান্ডি গানটৌমির নামটাও প্রথম জেনেছেন অনেকে। রডনি রেডমন্ড বললেই তো চলে আসেন অ্যান্ডি গানটৌমি। অ্যান্ডি গানটৌমি বললে রডনি রেডমন্ড। এ্রই দুজন যে 'এক টেস্ট-এক সেঞ্চুরি' নামের বিনি সূতোর মালায় গাঁথা!