ক্রিকেট বিশ্বকাপ কিংবদন্তির চোখে

একটা গেইল-ঝড় পাওনা

বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে সংগঠকদের বড় দুশ্চিন্তাগুলোর একটি হচ্ছে নকআউটের আগেই বাদ পড়ে যেতে পারে এমন দুটি দলের ম্যাচ আয়োজন করা। সেটা আরও বেশি দুশ্চিন্তার হয়ে যায় যখন নকআউটের ঠিক আগের সপ্তাহেই এমন দুটি দল একে অন্যের মুখোমুখি হয়।

আফগানিস্তান যখন সাবেক চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হচ্ছে, তখন এমন অবস্থাই দাঁড়িয়েছে। আফগানিস্তান মাত্রই তাদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে। আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরা ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট সংস্করণ টি–টোয়েন্টির ধরনে ব্যাটিং করে। ওদের ভোগান্তির মূল কারণও এটাই। ওদের ব্যাটসম্যানরা ভুলেই গেছে ৫০ ওভারের খেলায় ব্যাটসম্যানদের কয়েক ওভার দেখেশুনে খেলার স্বাধীনতা আছে। ভালো বোলারদের আক্রমণ না করে যারা তুলনামূলক কম ভালো, তাদের আক্রমণ করার সুযোগ আছে। আফগানিস্তানের বোলাররা অবশ্য ভালো করেছে। ভারতের মতো শক্তিশালী দলের ব্যাটিং লাইনআপকে ২২৪ রানে বেঁধে ফেলেছে। যদিও তাদের ব্যাটসম্যানরা সেই সুযোগ লুফে নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

ওদের কিছু অন্য ঝামেলাও ছিল। প্রথমে বিশ্বকাপের ঠিক আগেই অধিনায়ক বদল আর এরপর মোহাম্মদ শেহজাদ বারবার নিজেকে ফিট বলার পরও তার বদলি উইকেটকিপার নিয়ে যাওয়া।

যারা ইংল্যান্ডের কাছে ভারতের হার নিয়ে ষড়যন্ত্রের কথা বলে, তারা পাকিস্তানের কাছে আফগানিস্তানের হারের ম্যাচটিতে আফগান অধিনায়ককে দেখে নিতে পারে। বিশেষ করে শেষের ওভারগুলোতে আফগান অধিনায়কের বোলিং পরিবর্তন আর সহজ রানআউট মিসটা চোখ কপালে তুলে দেয়। অধিনায়ক বদল করা আফগানিস্তানের কোনো কাজেই আসেনি।

যা-ই হোক না কেন, আফগানিস্তান যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে পারে, তাহলে সেটা হতে পারে বড় দল হওয়ার পথে তাদের প্রথম পদক্ষেপ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্পিন ভালো খেলে না। এ জন্য তাদের কৌশল হওয়া উচিত মিডিয়াম পেস কম খেলিয়ে যত বেশি পারা যায় স্পিন খেলানো।

২০১৯ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। বাউন্সার দিয়ে পাকিস্তানকে দুমড়েমুচড়ে দিয়েছিল। কিন্তু এরপর পথ হারিয়ে ফেলেছে। কারণ, ওদের ব্যাটসম্যানরাও আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের মতো রান তাড়া করতে ব্যর্থ। টুর্নামেন্টের সফল দলগুলোর মতো ওরা ভালো শুরুও পায়নি। ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের দিকে তাকান। তাদের ওপেনাররা দলকে দারুণ শুরু এনে দিয়েছে। এ কারণেই পরের ব্যাটসম্যানরা হাত খুলে খেলতে পেরেছে। ‘ইউনিভার্স বস’–এর যেমন প্রাধান্য বিস্তার করা উচিত, ক্রিস গেইল সেটা করতে পারেনি। একটা গেইল-ঝড় হয়তো পাওনা হয়ে আছে। একই সঙ্গে এভিন লুইসের চোটের কারণে তারা কখনোই এমন কোনো ভিত গড়তে পারেনি, যার ওপর দাঁড়িয়ে হেটমায়ারের মতো ব্যাটসম্যানরা প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দিতে পারে। নিকোলাস পুরান খুব ভালো ব্যাট করেছে কিন্তু অন্য ব্যাটসম্যানদের অধারাবাহিকতা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুর্বল করে দিয়েছে।

দুই দলই গৌরবের জন্য খেলবে, মাঝেমধ্যে সেটাই সেরা খেলাটা বের করে আনার জন্য যথেষ্ট। শেষ পর্যন্ত কারা হাসিমুখে ঘরে ফেরে, সেটাই দেখার।