টেস্ট অধিনায়ক জেসন হোল্ডার নেই। নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড। বাংলাদেশ সফরে টেস্টের সহ–অধিনায়ক রোস্টন চেজসহ আরও কয়েকজন প্রথম পছন্দের খেলোয়াড়কেও পায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। করোনার এই সময়ে বাংলাদেশে আসতে যে মন সায় দেয়নি তাঁদের। ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজকে (সিডব্লিউআই) অনুরোধ করে নিজেরাই যে সরে দাঁড়িয়েছেন হোল্ডার–পোলার্ডরা।
তাঁদের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি অনেকেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা তো আছেনই, ক্যারিবিয়ানের অনেকেও বাঁকা চোখে দেখছেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটারদের এই সিদ্ধান্তকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ফাস্ট বোলার ফ্র্যাঙ্কলিন রোজও মেনে নিতে পারছেন না হোল্ডারদের সিদ্ধান্ত। ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে ১৯টি টেস্ট খেলা এই পেসার দলের সেরা ক্রিকেটারদের সিদ্ধান্তে পুরোপুরি হতাশ। রোজ মনে করেন ‘নির্বোধ’ এসব ক্রিকেটার গড় বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগও হারিয়েছেন।
আগামীকালই বাংলাদেশে পা রাখার কথা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের। বাংলাদেশে ওয়ানডে সুপার লিগের অংশ হিসেবে তিনটি ওয়ানডে ও ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে ক্যারিবীয়রা।
‘এই খেলোয়াড়েরাই কোভিডের মধ্যেই ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড গেল। কিন্তু হঠাৎই বাংলাদেশ সফরে যেতে তাদের ভয় লাগল। এটা খুবই বাজে কাজ হয়েছে।’ফ্র্যাঙ্কলিন রোজ
হোল্ডাররা অবশ্য করোনার সময়ে করা সিডব্লিউআইয়ের নীতিমালা মেনেই বাংলাদেশ সফরের দল থেকে ছুটি নিয়েছেন। সিডব্লিউআই দেশের বাইরের সফরকে বাধ্যতামূলক করেনি করোনার এই সময়। ক্যারিবীয় ক্রিকেট বোর্ড স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কেউ কোনো সফরে যেতে না চাইলে জোর করবে না তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড এটাও জানিয়ে দিয়েছে, ভবিষ্যতে দলে জায়গা পেতেও সমস্যা হবে না অনিচ্ছুক ক্রিকেটারদের।
তবে রোজ মনে করেন, এতে দলের প্রতি ক্যারিবীয় ক্রিকেটারদের দায়বদ্ধতার জায়গাটা সংকুচিত হয়ে যাবে। ২৭টি ওয়ানডে খেলা রোজ হোল্ডার–পোলার্ডদের দলের প্রতি নিবেদন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
৪৮ বছর বয়সী রোজ বুঝতেই পারছেন না, হঠাৎ এমন কী হলো যে বাংলাদেশের করোনা নিয়ে ভয় পেয়ে গেলেন তাঁর উত্তরসূরিরা। ক্যারিবীয়রা যে ঘোর করোনার সময়েই ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড সফর গেল, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন রোজ, ‘এই খেলোয়াড়েরাই কোভিডের মধ্যেই ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড গেল। কিন্তু হঠাৎই বাংলাদেশ সফরে যেতে তাদের ভয় লাগল। এটা খুবই বাজে কাজ হয়েছে।’
বাংলাদেশ সফর থেকে নাম কাটানো হোল্ডার এখন খেলছেন অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগে। হোল্ডারদের সরাসরিই দ্বিচারিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন রোজ, ‘তারা বলছে, করোনাভাইরাসই হলো আসল কারণ। কিন্তু এসব খেলোয়াড়ের কয়েকজন অস্ট্রেলিয়ায় খেলছে। ওখানে কি করোনা নেই?’
এই মুহূর্তে বিশ্বে বাংলাদেশই সবচেয়ে দুর্বল দল। আমি চেষ্টা করতাম নিজের ব্যাটিং ও বোলিং গড়ের উন্নতি করার।ফ্র্যাঙ্কলিন রোজ
সাবেক গতি তারকা মনে করেন, খেলোয়াড়দের বেছে বেছে খেলার সুযোগ থাকা উচিত নয়। এতে ধুঁকতে থাকা ক্যারিবীয় ক্রিকেটের সমস্যা আরও ডালাপালা মেলবে বলেই বিশ্বাস রোজের, ‘এসব খেলোয়াড় ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত দলকে দেখে না। কোথায় যাব আর কোথায় যাব না—এই বিকল্প কি এসব দলের খেলোয়াড়দের আছে? আমার চোখে তো কখনোই পড়েনি তা। আমাদের দরকার নিয়ম মানা নিবেদিত খেলোয়াড়। বোর্ডের যদি এদের সামলানোর মতো ক্ষমতা না থাকে, বোর্ড থাকার দরকারটা কী!’
রোজ বাংলাদেশে না আসা খেলোয়াড়দের বিচারবুদ্ধি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তা করতে গিয়ে অবশ্য বাংলাদেশের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রোজ, ‘আমি যদি এই সব খেলোয়াড় হতাম, আমি বাংলাদেশে যেতামই। কারণ, এই মুহূর্তে বিশ্বে বাংলাদেশই সবচেয়ে দুর্বল দল। আমি চেষ্টা করতাম নিজের ব্যাটিং ও বোলিং গড়ের উন্নতি করার।’