>সাকিব কি শুধু খেলার মাঠেই সেরা! মাঠের বাইরেও তাঁর চিন্তাচেতনা ছাড়িয়ে যায় সীমানার বাইরে। যে কারণগুলোর জন্যই তিনি সাকিব আল হাসান। আর যাঁর কদর একটু বেশিই।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেক জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান। অনেক সাফল্যের সফল রূপকার, বিশ্ব ক্রিকেটে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দলের এক শক্ত খুঁটিও তিনি। তাঁর সম্পর্কে লেখা যাবে আরও অনেক বিশেষণ। তিনি কি শুধু খেলার মাঠেই সেরা! মাঠের বাইরেও তাঁর চিন্তাচেতনা ছাড়িয়ে যায় সীমানার বাইরে। যে কারণগুলোর জন্যই তিনি সাকিব আল হাসান। আর যাঁর কদর একটু বেশিই।
আজ চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বড় জয়ের পর সাকিবের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের কথাই ধরুন না। গণমাধ্যমকর্মীদের করা প্রতিটা প্রশ্নের জবাবেই ছড়িয়েছে বাড়তি সৌরভ। তাঁর চিন্তাভাবনার জায়গা যে কত বিস্তর, তা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। সবার চোখের সামনে যা ঘটে যাচ্ছে, সবাই যা ভাবছেন, এর বাইরে গিয়ে ভাবতে পারাটাই সাকিবের কারিশমা। না হলে কি আর বিশ্ব ক্রিকেট শাসন করতে পারেন।
সাকিব সম্পর্কে জানা এই পুরোনো কথাগুলোই আজ আবার কেন স্মরণ করিয়ে দেওয়া? কারণ, টেস্টে ২০০ উইকেট প্রাপ্তির দিনে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনেও আজ আরেকবার জানান দিয়েছেন তাঁর ক্ষুরধার মস্তিষ্কের কথা। প্রথমে বুঝিয়েছেন ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে তাঁর কাছে দলের অর্জন অনেক বেশি দামি। দ্বিতীয়ত, চট্টগ্রাম টেস্টে স্পিনাররা রাজত্ব করলেও উন্নতি করার জায়গা আছে অনেক।
আজ স্যার ইয়ান বোথামের ৬৩তম জন্মদিন। ২০০ উইকেট ও ৩০০০ রান করতে ইংলিশ কিংবদন্তি অলরাউন্ডারের লেগেছে ৫৫ টেস্ট। সেখানে সাকিবের লেগেছে ৫৪ টেস্ট এবং এর জন্য বেছে নিয়েছেন বোথামের জন্মদিনটাকেই। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই এই অর্জন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বাঁহাতি অলরাউন্ডার মৃদু আপত্তি করলেন। তাঁর কথা, দল জিতেছে, আগে প্রশ্ন হবে দলের অর্জন নিয়ে। সাকিবের কাছে ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলের সাফল্য যে আগে, ‘২০০ উইকেট পাওয়ার অনুভূতিটা ভালো হতো না যদি না জিততাম। যেহেতু জিতেছি, এখন অনুভূতি অনেক ভালো।’
চট্টগ্রাম টেস্টের ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২০ উইকেটই নিয়েছেন স্পিনাররা। সবাই এক বাক্যে বলছেন, বাংলাদেশের ঘূর্ণির মায়াজালে আটকে গিয়েছেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা। কথাগুলোয় কোনো ভুল নেই। কিন্তু ক্রিকেটীয় বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক খুঁজে পেয়েছেন বড় একটি গলদ। তাঁর কথায়, সবাইকে উইকেট পাওয়ার জন্য বল করতে হবে, তা কিন্তু নয়। কাউকে রান আটকানোর দায়িত্বটাও নিতে হবে। এই যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭৫ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর বাংলাদেশের জয়টা মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু জোমেল ওয়ারিক্যান আর সুনীল আমব্রিসের জুটি সে আশায় বাদ সেধেছিল। ৬১ রানের জুটি গড়ে এই জুটি চোখ রাঙিয়েছে বাংলাদেশকে।
এই জুটির মধ্যেই নিজেদের বোলিং–ব্যর্থতা খুঁজে পেয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘আমাদের একটা জিনিসে উন্নতি করা দরকার, সেটা হলো গেম সেন্স থাকা উচিত—কোন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে। হয়তো হতে পারে একজন খুব আক্রমণাত্মক বোলার। ওই দিন হয়তো তাঁর উইকেট না-ও আসতে পারে। হয়তো অন্য সাইড থেকে আরেকজন উইকেট পাচ্ছে। সো অপর সাইডে যে রান না দিয়ে বল করে যাবে, দলের জন্য করা, বোলিং পার্টনারের জন্য করা, এই সেন্সটা যদি আমরা একটু ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে আমি মনে করি ওভার অল বোলিং আক্রমণ স্পিনাররা আরও বেটার বল করতে পারব। আমরা যারা আছি স্পিনাররা, সবাই খুব অ্যাটাকিং বোলার। আমাদের জন্য ডিফেন্সিভ বল করাটাও অনেক সময় ডিফিকাল্ট হয়ে যায়। আমরা সব সময় অ্যাটাকিং অপশনেই যাই। আমাদের বুঝতে হবে, জানতে হবে কখন দুই-তিনটা ওভার রান না দিয়ে বল করে যাব, একটা সাইডে যেন আরেকজন অ্যাটাক করতে পারে।’
প্রতিরোধ গড়া জুটি ভাঙার পর সুনিল আমব্রিসকে ফিরিয়ে সফরকারীদের ১৩৯ রানে থামান তাইজুল ইসলাম। ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন আমব্রিস। কিন্তু ব্যাটে খেলতে পারেননি, বল যায় কিপারের গ্লাভসে। বলে ব্যাটের স্পর্শ না থাকলেও আম্পায়ার আউট দিলে শেষ হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস। আউটের পর রিভিউ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দুটি রিভিউ আগেই খরচ করে শেষ করে গেছেন অন্য ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু বড় পর্দায় দেখা যায় বল আমব্রিসের ব্যাট স্পর্শ করেনি।
এই ক্ষেত্রে ব্যাটসম্যানকে ফেরানো যেত নাকি? এই প্রশ্নে ভদ্রতা দেখাতে পারতেন। কিন্তু কোনো রকম ভণিতা না দেখিয়ে সোজাসাপটা জবাব, ‘আমি ডাকতাম না। কারণ, উইকেটরক্ষক খুব আত্মবিশ্বাসী ছিল। ওরা রিভিউ নেওয়ার পরও ও বলছিল, এটা আউট। স্বাভাবিকভাবেই আমি তাকে বিশ্বাস করব, ওদের ব্যাটসম্যানকে বিশ্বাস না করে।’