মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট সিরিজ জয়ের সাফল্যেও রেখে দিয়েছে কিছু প্রশ্ন।
টি–টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে শুধু বিশ্বকাপে, এটাই যেন নিয়ম হয়ে যাচ্ছিল। সেটাও যদি দুই দল একই গ্রুপে পড়ে। টি–টোয়েন্টিতে দুই দলের মধ্যে এর আগে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হয়ইনি। এবার নিজেদের কন্ডিশনে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়াকে পেয়ে সুযোগটা হাতছাড়া করেনি বাংলাদেশ। হাতের তালুর মতো চেনা কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ‘উপহার’ দিয়েছে ৪-১–এর লজ্জা।
এত বড় অর্জনে যখন বাংলাদেশের ক্রিকেটে আনন্দের হাওয়া, তখন আরেকটি আলোচনাও চলে আসছে সামনে। আগামী অক্টোবরেই ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ব্যাটিং উইকেটেই খেলা হবে সেখানে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ যদি বাংলাদেশের বিশ্বকাপ প্রস্তুতির অংশ হয়, তাহলে ঘরের মাঠে কম রানের উইকেটে খেলে কতটা ভালো হলো সে প্রস্তুতি? দেশের কোচ ও সাবেক ক্রিকেটারদের মুখে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো জাতীয় দলের জন্য প্রশংসাবাক্য যেমন আছে, চাঁদের কলঙ্কের মতো থাকছে কম রানের উইকেটে বিশ্বকাপ প্রস্তুতির প্রসঙ্গও।
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজে দুই দলেরই ওভারপ্রতি রানরেট (৫.৮৫) ছিল দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের ইতিহাসে সবচেয়ে কম। বোলিংটা যে সিরিজজুড়েই দাপট দেখিয়েছে, সেটি এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। ঘরের মাঠের সুবিধাটা বাংলাদেশ সর্বোচ্চ পর্যায়েই নিয়েছে। সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ এই সাফল্যে গর্ববোধ করলেও বিশ্বকাপ ভাবনা মাথায় রেখে কাল মুঠোফোনে বলছিলেন, ‘আমরা সিরিজগুলো খেলছি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে। যদি অক্টোবরে বিশ্বকাপ না থাকত তাহলে আমার বক্তব্য ভিন্ন হতো। আমরাও নিজেদের কন্ডিশনের সুবিধা নেব। কিন্তু কোন পর্যায় পর্যন্ত নেব, সেটা ভাবতে হবে। উইকেট আরেকটু ব্যাটিং সহায়ক হলে ভালো হতো।’
আরেক সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান অবশ্য এ নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তা করছেন না। তাঁর বাজি বাংলাদেশ দলের অভিজ্ঞতায়। খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অন্য দলগুলোর চেয়ে বর্তমানে এগিয়ে বাংলাদেশই। সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমদের ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের জল-হাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
রকিবুলও বলছিলেন, ‘আমাদের দলে অনেক ক্রিকেটারই যথেষ্ট অভিজ্ঞ। সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা অনেক ক্রিকেট খেলেছে। মোস্তাফিজ আইপিএল খেলা ক্রিকেটার। ওরা জানে কীভাবে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। আমার মনে হয় না নিজেদের ঘরের মাঠের কন্ডিশনে খেললে বিশ্বকাপে খুব সমস্যা হবে।’
জাতীয় দলের সাবেক কোচ সরওয়ার ইমরান অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়টাকে দেখছেন সতর্ক চোখে। মন্থর উইকেটে নয়, ভালো উইকেটে বাংলাদেশ দলের বোলাররা কেমন করেন, সেটিই দেখতে চান তিনি, ‘সিরিজটা বোলাররা জিতিয়েছে। যেই উইকেটে মাত্র ১১০–১২০ রান হয় সেখানে বোলারদের কতটা দক্ষতা, সেটা একটা বিষয়। দুনিয়ার কোথাও এমন উইকেটে টি-টোয়েন্টি হয় না। তাই এই সিরিজের পারফরম্যান্স নিয়ে খুব প্রশংসা করতে চাই না।’
অল্প রানের উইকেটে সিরিজ খেলে বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে যদি কিছু ক্ষতি হয়েও থাকে, সেটি পুষিয়ে দেওয়ার উপায় বললেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ, ‘বিশ্বকাপের প্রস্তুতির সঙ্গে এই সিরিজের পার্থক্য আছে। বিশ্বকাপে কন্ডিশন এমন থাকবে না। তবে এই ঘাটতিটা আমরা বিশ্বকাপের আগে একটা ঘরোয়া টুর্নামেন্ট খেলে পুষিয়ে নিতে পারি, যেখানে উইকেট থাকবে ব্যাটিং–সহায়ক। খেলবে দেশের সেরা ক্রিকেটাররা। তাহলে ম্যাচের প্রস্তুতিও হয়ে গেল।’
জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে নির্বাচক হাবিবুল বাশার অবশ্য পুরো বিষয়টিকেই দেখছেন অন্যভাবে। তাঁর মতে, এই সিরিজে ঘরের মাঠের টি-টোয়েন্টিতে কলার উঁচু করে খেলতে নামার আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছে বাংলাদেশ, ‘আমাদের জন্য খুবই ফলপ্রসূ একটা সিরিজ হলো। টি-টোয়েন্টিতে আমরা অস্ট্রেলিয়াকে হারাইনি। সিরিজ শুরুর আগে যদি বলতাম যে আমরা ৪-১–এ জিতব, তাহলে কিন্তু কেউই বিশ্বাস করত না। জয় খুবই ভালো অভ্যাস। আমরা এই সিরিজে সেই অভ্যাসটা ধরতে পেরেছি।’