উইকেটের দোষ? ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাখ্যা দিল এমন হারের

ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্রেগ ব্রাফেট। ছবি: এএফপি
ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্রেগ ব্রাফেট। ছবি: এএফপি
>২০০৯ সালের পর এই প্রথম বাংলাদেশের কাছে টেস্টে হারল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কোনো অজুহাত না খুঁজে হারের পেছনে নিজেদের ব্যাটিং ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্রেগ ব্রাফেট

আড়াই দিনেই শেষ হয়ে গেল চট্টগ্রাম টেস্ট। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৫ রানে গুটিয়ে গিয়ে ক্যারিবীয়দের সামনে ২০৪ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়ে বাংলাদেশ ছিল তাই নির্ভার। তাইজুল-সাকিব-মিরাজরা প্রত্যাশামতোই জ্বলে উঠলেন দ্বিতীয় ইনিংসে। ২০৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে গেল ১৩৯ রানেই।

ক্যারিবীয়দের এই ব্যাটিং বিপর্যয়ের কারণ কী, এ প্রশ্নটি উঠেই যাচ্ছে? কারও কারও চোখে এই উইকেট স্পিনের বিষে মাখা। বাংলাদেশি সমর্থকদের কারও কারও মধ্যেই উইকেট নিয়ে একটা নেতিবাচক আলোচনা চলছে। আবার কেউ বলছেন, অতটা স্পিন ছিল না, একটু দেখে খেললেই হতো, কেউ বলছেন, হোম কন্ডিশনের সুবিধা কে না নেয়! কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ কী বলছে?

কোনো অজুহাত না দেখিয়ে নিজেদের ব্যাটিং ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেগ ব্রাফেট, ‘আমরা প্রত্যাশামতো ভালো খেলতে পারিনি। কোনো জুটি গড়তে পারিনি। খুব দ্রুত উইকেট হারিয়েছি। উইকেটে বল ভিন্ন রকম আচরণও করছিল বটে।’

মূলত জুটি না গড়তে পারাকেই অসহায় আত্মসমর্পণের বড় কারণ বলে মনে করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক, ‘মিডল বা টপ অর্ডার, কোথাও আমরা ভালো জুটি গড়তে পারিনি। এর মূল্যই দিতে হয়েছে।’ এই ব্যাটিং বিপর্যয়ের পেছনে উইকেটের দায় আছে কি না, এই প্রসঙ্গে ব্রাফেটের জবাব, ‘ম্যাচের সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উইকেট খারাপের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু বল নরম হয়ে যাওয়ায় কিছুটা সহজ হয়েছে ব্যাটিং করা।’

শেষ পর্যন্ত অধিনায়কের কথায় ঘুরেফিরে এল জুটি গড়তে না-পারার হতাশা। ব্রাফেট মনে করেন, ঠিকমতো নিজেদের পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োগ করেননি ব্যাটসম্যানরা। তারই খেসারত দিতে হয়েছে।

ব্যাটসম্যানদের পরিস্থিতির দাবি মেনে না খেলার সবচেয়ে বড় উদাহরণ সম্ভবত হেটমেয়ার। প্রথম ইনিংসের মতো এবারও তিনি টি-টোয়েন্টি মেজাজে খেলেছেন। প্রথম ইনিংসে ৪৭ বলে ৬৩ রানের ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯ বল খেলে করেছেন ২৭। অধিনায়ক ব্রাফেট সরাসরি সমালোচনা না করলেও বলেছেন, ‘সে খুব আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। সে নিজের মতো করে খেলেছে। কিন্তু ভালোভাবে বল ঠেকানোও শিখতে হবে। প্রত্যেক ব্যাটসম্যানের নিজস্ব পরিকল্পনা থাকে।’

এই উইকেটে ব্যাটসম্যানদের ধৈর্যশীল ব্যাটিং আশা করেছিলেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। আরেকটু দেখেশুনে দল খেলতে পারত বলে মনে করেন ব্রাফেট।

চট্টগ্রাম টেস্টে এমন অসহায় আত্মসমর্পণের পর ঢাকায় ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব কি? এ ক্ষেত্রেও ব্যাটিং লাইনআপের দিকে তাকিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক, ‘ব্যাটসম্যানদের ভালো শুরু করতে হবে। আমাদের আরও বড় রান সংগ্রহ করতে হবে। এ ছাড়া আমি মনে করি প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৪০ রান বেশি পেয়েছে। আমরা যদি তাদের প্রথম ইনিংসে সীমিত রানের মধ্যে রাখতে পারতাম, আমাদের জন্য আরও ভালো হতে পারত।’ ঢাকা টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য দুঃসংবাদ—মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে পেসার গ্যাব্রিয়েলকে হারানো, যা দলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে মনে করেন অধিনায়ক।

নিজের দলের ব্যর্থতার পাশাপাশি বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকেও প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ব্রাফেট, ‘সে খুবই অভিজ্ঞ বোলার। সে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উইকেট নিয়েছে।’

ঢাকা টেস্টের উইকেট তো এমনিতেই ধীর বলে সুখ্যাত। ব্রাফেট কি ভয় পাচ্ছেন না একটু হলেও? উইন্ডিজ অধিনায়কের এক কথা, উইকেট নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো ভয় নেই। নো ফিয়ার!