আর এক মাসেরও কিছু বেশি সময়ের অপেক্ষা। অনেক নাটকের শেষে, শত সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে এবারের আইপিএল। তবে ভারতে নয়, দেশটিতে করোনাভাইরাসের প্রভাব বিবেচনায় আইপিএল হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। দুবাই, শারজা ও আবুধাবি–এই তিন শহরে হবে সব ম্যাচ।
তা আইপিএল তো হচ্ছে, কিন্তু এটি নিয়ে সমালোচনা কি থেমে আছে? করোনার কারণে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হচ্ছে না, এশিয়া কাপ হচ্ছে না, অথচ আইপিএল হচ্ছে! এতে কেউ খুঁজে পাচ্ছেন ভারতের দাপট, কারও চোখে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগটিতে অর্থের বানই এটিকে বিশ্বকাপ-এশিয়া কাপের চেয়েও এগিয়ে রাখার কারণ।
বিশেষ করে এবার এশিয়া কাপ পাকিস্তানের আয়োজন করার কথা ছিল বলে, সেটি স্থগিত থাকা সত্ত্বেও আইপিএল হওয়া নিয়ে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটারদের দিক থেকেই সমালোচনা বেশি হচ্ছে। তবে ভারতের ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী দলের অলরাউন্ডার ও সাবেক কোচ মদন লাল পাকিস্তানের সাবেকদের পাল্টা তোপ দেগেছেন। তাঁর কথা, ঈর্ষা থেকেই আইপিএল নিয়ে এত সমালোচনা করছেন পাকিস্তানের সাবেকরা।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে যোগাযোগব্যবস্থা অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আছে। জনসমাগম নিষিদ্ধ বা সীমিত পর্যায়ে। খেলার মাঠে স্বাভাবিকভাবেই তাই দর্শক নেই। যেখানে দর্শক আছে, সেখানেও স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতার খুব অল্প অংশই ঢোকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এমন অবস্থায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্ট আয়োজনে লাভ নেই দেখেই আইসিসি গত মাসে ঘোষণা দেয়, অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় এবারের বিশ্বকাপ স্থগিত হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে বিশ্বকাপ স্থগিত হলে সে সময়টাতে, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আইপিএল হবে, এমন ভাবনা অনেক আগে থেকেই চালু ছিল। প্রস্তুতিও ছিল। আইসিসি বিশ্বকাপ স্থগিত রাখার ঘোষণা দিতেই ভারতও আইপিএল আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে দেয়। যে আইপিএল গত মে মাসেই শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে পিছিয়ে যায়।
কিন্তু অনেকের ধারণা, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বোর্ড ভারতের দাপটেই আইসিসি বিশ্বকাপ পিছিয়েছে। যাতে সে সময়ে অধিক 'অর্থকরী' আইপিএল আয়োজন করতে পারে ভারত। পাকিস্তান অবশ্য আইপিএলের সময়েই এশিয়া কাপ আয়োজনের আওয়াজ তুলেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি মিইয়ে গেছে। করোনা, একসঙ্গে এত দল নিয়ে মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট আয়োজনের ঝামেলা বিবেচনায় এশিয়া কাপ হচ্ছে না, আইপিএলই হচ্ছে।
সেটি নিয়ে পাকিস্তানের সাবেকদের দিক থেকে অনেক সমালোচনা হয়েছে। আইপিএলের কারণেই বিশ্বকাপ পিছিয়েছে, এমন কথা শোনা গেছে বারবার। কিন্তু এখন পাকিস্তানের সাবেকদের উল্টো তোপ দেগেছেন মদন লাল। 'স্পোর্টস তাক' নামের এক অনুষ্ঠানে মদন লাল বলেছেন, 'পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের অনেকেই আসলে কিছু বলার আগে ভাবেন না। তাঁরা কীভাবে দাবি করেন যে ভারত বিশ্বকাপ পিছিয়ে দিয়েছে?'
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কেন পিছিয়েছে, সে ব্যাপারে মদন লালের বিশ্লেষণ, 'প্রথমত কোভিড-১৯ এখনো আছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ভিন্ন ধরনের একটা টুর্নামেন্ট। কিন্তু এখানে দর্শক থাকবে না, স্পনসরশিপ নিয়ে ঝামেলা আছে...এসব দিক মাথায় রেখেই আইসিসি ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা) সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বকাপ পেছানোর। বেশ ভালো সিদ্ধান্ত ছিল সেটা।'
বিশ্বকাপের বদলে আইপিএল কেন হচ্ছে, নিজের মতো করে সেটিরও যুক্তি তুলে ধরেছেন মদন লাল, 'আইপিএল তো হতোই। আমরা (করোনায় মে মাসে আইপিএল স্থগিত হওয়ার পর) শুরু থেকেই সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আইপিএল আয়োজনের কথা ভেবেছি, শুধু তারিখ পাওয়ার ব্যাপার ছিল। সে অনুযায়ীই আইপিএলের পরিকল্পনা করেছি আমরা, যেটা খুব ভালো কাজে দিয়েছে।'
সে আইপিএল নিয়ে পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সমালোচনার মধ্যে উল্টো অন্যরকম ঘ্রাণ খুঁজে পাচ্ছেন মদন লাল, 'হ্যাঁ, হয়তো এশিয়া কাপটা এর মধ্যে হতে পারত। কিন্তু পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের মন্তব্যগুলো থেকে ঈর্ষার ঘ্রাণ পাই।' পাকিস্তানের সাবেকদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, 'তাঁদের উচিত কীভাবে আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কটা আরও ভালো থাকবে সে ব্যাপারে চিন্তা করে, যাতে ক্রিকেট ঠিকভাবে চলতে পারে। কিন্তু সব সময়ই ওদের কোনো না কোনো খেলোয়াড় উল্টোপাল্টা কিছু না কিছু বলে, তাতে পুরো ব্যাপারটাই আরও জটিল হয়ে যায়।'