>তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়লেন ইমরুল কায়েস। তামিম ইকবালকে টপকে এই রেকর্ড গড়লেন ইমরুল। ওয়ানডেতে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে তিন ম্যাচে তাঁর চেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড শুধু একজনের
অনেকে বলেন দুর্ভাগা। অনেক আবার ঠোঁট ওলটান। না, ছেলেটা সেভাবে প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে পারে না। দলে তাই আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই ধরে ফেলেছেন সেই ছেলেটি কে। তাঁর নাম বলাটা শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। কারণ বাংলাদেশ ক্রিকেট সম্পর্কে তিল পরিমাণ খোঁজ-খবর রাখা ভক্তটি পর্যন্ত জানেন, লোকে মুখে মুখে ফেরা সেই চিরায়ত দুর্ভাগা একজনই—ইমরুল কায়েস।
এই ইমরুলের জন্য তামিম ইকবাল নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতে পারেন। তবে সেটি ইতিবাচক ভাবনার জায়গা থেকে। যে ছেলেটি দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকে তাঁর কাছে রেকর্ড হারানোটা তামিমের কাছে দুর্ভাগ্যই। তামিমের ভক্তরা এভাবে ভাবতেই পারেন। কিন্তু চোখ বুঁজে বলে দেওয়া যায়, ইমরুলের কাছে এই হারে তামিম খুশিই হবেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সিরিজে ইমরুল অন্তত তাঁর সামর্থ্য তো ব্যাটে অনূদিত করলে পারলেন! ইমরুলের ব্যাট হুল হয়ে কামড় দেওয়াতেই যে জিম্বাবুয়ের বোলাররা বারবার হতাশা নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন পুরো সিরিজে।
সামর্থ্যের প্রমাণ ইমরুল এর আগেও অনেকবারই দিয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইমরুলের ব্যাটে যেন রানের ফল্গুধারা বইছে। এশিয়া কাপে দেশ থেকে হুট করে উড়াল দিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৭২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। এরপর দুটি ইনিংসে কথা বলেনি ইমরুলের ব্যাট। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সিরিজে ইমরুলের ব্যাট শুধু কথাই বলছে না। এর সঙ্গে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটিও নিজের করে নিয়েছেন ইমরুল।
তামিম এখানেই ইমরুলের পেছনে পড়লেন। ২৫তম ওভারে এনগারাভার দ্বিতীয় বলে ২টি রান নিয়ে তামিমকে পেছনে ফেললেন এই ওপেনার। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৩১২ রান করেছিলেন তামিম। সেই সিরিজে তামিমের দুটি সেঞ্চুরি আর এক ফিফটিতে ধবলধোলাই হয়েছিল পাকিস্তান। আর তামিমও তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছিলেন। ইমরুল আজ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৫তম ওভারের সেই দ্বিতীয় বলে ‘ডাবলস’ নিয়ে তামিমের রেকর্ডটি নতুন করে লেখালেন।
শুধুই রেকর্ডটা নতুন করে লেখালেন? নাকি ইমরুল নিজেই নিজেকে নতুন করে চেনালেন? দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকা সেই ছেলেটাই এখন এতটা ধারাবাহিক! হোক না প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে, কিংবা যে কেউ—টানা রানের মধ্যে থাকা চাট্টিখানি কথা নয়। ইমরুল এই কঠিন কাজটাই ‘জলবৎ তরলং’ বানিয়ে ফেললেন এই সিরিজে। সেটিও ওপেনিংয়ে দলের ‘অটোমেটিক চয়েস’ তামিম ইকবালের অভাব পুষিয়ে দিয়ে! এই সিরিজে কেউ তামিমের অভাব টের পেয়েছেন? মনে হয় না।
এই সিরিজের প্রথম ম্যাচে দলের বিপর্যয়ে ১৪৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছিলেন ইমরুল। সেটি অনেকের চোখেই চাপের মধ্যে বাংলাদেশের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা স্ট্রোক-প্লে সমৃদ্ধ ইনিংস। পরের ম্যাচেই ভোল পাল্টেছেন। ২৪৬ রান তাড়া করতে নেমে খেলেছেন ঠান্ডা মাথার ৯০ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। আর আজ তো এক কাঠি সরেস। ২৮৭ রানের লক্ষ্যও যেন ছেলের হাতের মোয়া! দলের জয় থেকে ১৩ রান দূরত্বে যখন আউট হচ্ছেন ইমরুল, তখনো ম্যাচের বাকি ১০ ওভার! ১১২ বলে ১০টা চার ও ২ ছক্কায় ১১৫ রান করে তবেই ফিরেছেন এই ওপেনার।
এই সিরিজে তিন ম্যাচ মিলিয়ে ইমরুল সব মিলিয়ে রান করেছেন ৩৪৯। তিন ম্যাচের দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড পাকিস্তানের বাবর আজমের। ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মোট ৩৬০ রান করেছিলেন তিনি। সৌম্য অমন উগ্রমূর্তি না ধরলে কিংবা জিম্বাবুয়ে তিনশোর্ধ্ব রান করলে ইমরুল হয়তো ওয়ানডের এই রেকর্ড নতুন করে লেখাতেন। যেভাবে ব্যাট করছিলেন তাতে এই সম্ভাবনার বিপক্ষে বাজি ধরার লোক খুঁজে পেতে কষ্ট হবে।
ইমরুলের জন্য তা নিশ্চিতভাবেই আনন্দের। অন্তত নিন্দুকের সংখ্যা তো কমছে!