তাঁকে বল করতে দেখলেই শিহরণ জেগে উঠত সবার। ওই যে দৌড়ে আসছে সাদা বিদ্যুৎ। বাউন্সার আর গতিতে নাকাল হবেন ব্যাটসম্যান। আর ব্যাটের ছোঁয়া আদায় করে আসা বলটিকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য স্লিপ কর্ডেনে ওত পেতে থাকত তিন-চারজন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে অ্যালান ডোনাল্ডের দুর্দান্ত সব স্পেল এখনো চোখে লেগে আছে অনেকের। বিশেষ করে ক্রিকেট খেলার আকর্ষণ বলতে ফাস্ট বোলিংকে বেছে নেন যাঁরা। কিন্তু এত দিনে জানা গেল, ইংল্যান্ডের হয়েই খেলার সম্ভাবনা বেশি ছিল ডোনাল্ডের।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন ১৫ বছর হয়ে গেছে। টেস্টে ৩৩০ উইকেট সহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শিকারের সংখ্যা ৬০২টি। খেলোয়াড় পর্ব শেষে পরবর্তী জীবনেও ক্রিকেটের সঙ্গেই আছেন। কাউন্টি দল কেন্টের সহকারী কোচ এখন ডোনাল্ড। কাউন্টির সঙ্গে সম্পর্কটা অবশ্য অনেক পুরোনো। ১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের বহু আগ থেকেই ডোনাল্ড সম্পর্কে বিশ্ব যে ধারণা রাখত, তার কারণও ওই কাউন্টি পারফরম্যান্স। কাউন্টিতে ডোনাল্ডের পারফরম্যান্স দেখে স্বাভাবিকভাবেই ইংল্যান্ডও তাঁকে পেতে চেয়েছিল। এমন এক গতিদানবকে কে পেতে চাইবে না?
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ২১ বছরের জন্য নির্বাসিত ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৮ বছরেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের স্বাদ পেয়ে যাওয়া ডোনাল্ড আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য ছটফট করছিলেন তখন। ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে এক যুগ খেলা ডোনাল্ডকে তাই ইংলিশ সতীর্থরা প্রলোভন দেখাতেন ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার। উইজডেনের ক্রিকেট মান্থলিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড সে অস্থির সময়ের কথা জানালেন, ‘আমাকে দুই স্মিথ ভাই—রবিন ও ক্রিস প্রস্তাব দিয়েছিল। ১৯৯০ সালে অ্যালান ল্যাম্বের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা বলেছিলাম। তারা আমাকে বিশ্বাস করিয়েছে যে ইংল্যান্ড দলে খেলার জন্য যোগ্য আমি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য তখন আমি অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। আর সে সময় সেটা করার একমাত্র উপায় ছিল ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা।’
দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটের সৌভাগ্য, আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে পেরেছেন ডোনাল্ড। ইংল্যান্ড নয় জন্মভূমির হয়ে খেলার সিদ্ধান্তের জন্য ডোনাল্ড এখনো একজনকে ধন্যবাদ দেন, সাবেক টেস্ট অধিনায়ক ও বোর্ড কর্মকর্তা আলী ব্যাখার, ‘আমার সঙ্গে ডক্টর আলী ব্যাখারের ভালো সম্পর্ক ছিল। লর্ডসে আইসিসির একটি মিটিংয়ে কথা বলার জন্য এসেছিলেন। আমি তখন সবকিছু খুলে বললাম। ব্যাখার বলেছিলেন, “এখনই সিদ্ধান্ত নিয়ো না। আমরা কতটুকু এগিয়েছি সেটা জানাব।” তার কথা শুনে কী যে খুশি হয়েছিলাম! ব্যাখার বলেছিলেন, “পরের বছরেই আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলব এবং ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপেও আমরা থাকব।” আমি তো হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম শুনে। “বলেছিলেন, বিশ্বাস রাখ।” এটা হবেই এবং সেটাই হয়েছে।’
অপেক্ষার ফল পেয়েছিলেন ডোনাল্ড। ১৯৯১ সালে ২৫ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন ডোনাল্ড। বিশ্ব ক্রিকেটের সব ব্যাটসম্যানের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ১২ বছর পর অবসর নিয়েছেন সাদা বিদ্যুৎ।