ইংল্যান্ডকে ২০ রানে হারিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। স্বাগতিকদের হারে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের আশা বেঁচে থাকল বাংলাদেশের
২৩৩ রানের লক্ষ্য। দুর্দান্ত সব ব্যাটসম্যানে ভর্তি ইংল্যান্ড দল ৩০ ওভারেই সে লক্ষ্য পেরিয়ে যায় কি না, এ নিয়ে আলোচনা চলছিল। কিন্তু বর্তমানে রানবন্যার ক্রিকেট নয়, ছোট লক্ষ্যের ওয়ানডে ম্যাচই যে সত্যিকারের উত্তেজনার জন্ম দেয়, সেটা বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচেই দেখা গিয়েছে। আজ শ্রীলঙ্কাও জানিয়ে দিয়েছে, আড়াই শ রানের নিচের সংগ্রহ নিয়েও লড়াই করা যায়। ইংল্যান্ডকে ২০ রান হারিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে যাওয়ায় ৬ ম্যাচ শেষে ইংল্যান্ডের পয়েন্ট এখন ৮। দলটির শেষ তিন ম্যাচ অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। পয়েন্ট তালিকার প্রথম চারের বাকি তিন দল বলে এমনিতেই এদের বিপক্ষে সতর্ক থাকতে হতো ইংল্যান্ডকে। কিন্তু ইংল্যান্ডের দুশ্চিন্তা বাড়াবে ইতিহাস। সেই কবে ১৯৯২ বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে। এরপর কোনো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালও খেলেনি তারা। ১৯৯২ এর বিশ্বকাপের পর তারা কখনো নিউজিল্যান্ড, ভারত কিংবা অস্ট্রেলিয়াকেও হারায়নি। এবার সেমিফাইনালে যেতে হলে এ তিন দলের বিপক্ষে সে ইতিহাস বদলাতে হবে।
পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষ চারের পরেই ৬ পয়েন্ট নিয়ে আছে শ্রীলঙ্কা। এরপরই বাংলাদেশ আছে ৫ পয়েন্ট নিয়ে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ এখন অনেকটাই এশিয়া কাপে রূপ নিয়েছে। আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনটি জয় বাংলাদেশকে ১১ পয়েন্ট এনে দেবে। কাজটা কঠিন, কিন্তু সেমিফাইনাল খেলতে চাইলে কঠিন কাজ যে করতেই হয়। ওদিকে শ্রীলঙ্কার শেষ তিন ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের বিপক্ষে। শ্রীলঙ্কার সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনাও কিন্তু বেশ উজ্জ্বল।
ম্যাচটা শ্রীলঙ্কাকে জিতিয়েছেন লাসিথ মালিঙ্গা। ইংল্যান্ডের টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডারকে শেষ করে দিয়েছেন এই পেসারই। কিন্তু ম্যাচটাকে এভাবে শ্রীলঙ্কার পকেটে এনে দিয়েছেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। ৮ রানের মধ্যে মঈন আলী, ওকস ও আদিল রশিদকে ফিরিয়ে দিয়ে ইংল্যান্ডকে হারের মুখে ঠেলে দিয়েছেন এই স্পিনার। ৫ উইকেটে ১৭০ থেকে মুহূর্তেই ৮ উইকেটে ১৭৮ হয়ে গেছে ইংল্যান্ড। ৮ রান পরেই উদানার ফাঁদে পা দিয়ে ফিরে গেছেন আর্চারও।
১ উইকেটে ৪৭ রান করতে হতো ইংল্যান্ডকে। এমন অবস্থায় বুদ্ধিদীপ্ত ক্রিকেটের সেরা উদাহরণ দেখালেন বেন স্টোকস ও শ্রীলঙ্কা দল। মালিঙ্গাকে ৪৫তম ওভারে এনে শেষ উইকেট ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন দিমুথ করুনারত্নে। প্রথম চার বল কাটিয়ে দেওয়ার পর রান রেট বেড়ে যাওয়ার চাপ সামলাতে স্টোকসকে পঞ্চম বলে রান নিতেই হতো। স্টোকস সে চাপে ক্যাচও তুলে দিয়েছিলেন ডিপ স্কয়ার লেগে। একটুর জন্য হাত ফসকে যাওয়ায় সে যাত্রা বেঁচে যান স্টোকস। শেষ বলে এক রান নিয়ে প্রান্ত বদল করে স্ট্রাইক ধরে রাখেন স্টোকস।
উদানার পরের ওভারেই পর পর দুই বলে দুই ছক্কা মেরে চাপ কমালেন স্টোকস। চতুর্থ বলে আলতো হাতে ঠেলে দিয়ে দুই রান নিলেন। পঞ্চম বলে এক রান নিয়ে মার্ক উডকে এক বল খেলতে দিলেন। সেটা ঠেকাতেই পুরো মাঠজুড়ে দর্শকের সে কি উল্লাস। পরের ওভারেও বুদ্ধিদীপ্ত ক্রিকেট। পরপর দুই চারের পর পঞ্চম বলে সিঙ্গেল নিলেন স্টোকস। ১৯ বলে ২১ রান দরকার। উড সে বলটা পার করে দিলেই পরের ওভারে নতুন করে হিসাব কষবেন স্টোকস। কিন্তু সে বলে দুজন স্লিপ নিয়ে এলেন করুনারত্নে। আরও কিছু ফিল্ডার কাছে নিয়ে এলেন। আস পাশে এমন ফিল্ডিং সেটআপ দেওয়ার চাপেই হোক কিংবা দুর্ভাগ্যেই হোক, প্রদীপের বলটি উইকেট পেরিয়ে যাওয়ার আগে ঠিকই উডের ব্যাট ছুঁয়ে আশ্রয় নিল কুশল পেরেরার গ্লাভসে। ৩ ওভার আগেই ২০ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল শ্রীলঙ্কা। ৮৯ বলে ৮২ রানে অপরাজিত স্টোকস স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।
এর আগে আজ প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২৩২ রানে থামার পর শ্রীলঙ্কার হার দেখছিল সবাই। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই জনি বেয়ারস্টোকে গোল্ডেন ডাক উপহার দিয়ে লাসিথ মালিঙ্গা নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করলেন। ২৬ রানে ভিন্সের (১৪) বিদায়টাও মালিঙ্গার বলে।
ইংল্যান্ডকে তবু এগিয়ে রাখতে হচ্ছিল। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা জো রুট ও আগের ম্যাচেই ওয়ানডেতে ছক্কার রেকর্ড গড়া এউইন মরগান আছেন উইকেটে। বেন স্টোকস ও জস বাটলার নামার অপেক্ষায়। মরগান ও রুট প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়েও উঠেছিলেন। ৪৭ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি ভেঙেছে ইসুরু উদানার দুর্দান্ত রিফ্লেক্সের সুবাদে। নিজের বলে মরগানের (২১) জোরালো শট তালুবন্দী করেছেন এই বাঁহাতি পেসার।
এরপর এখন পর্যন্ত নিজেদের সেরা জুটিটা পেয়েছে ইংল্যান্ড। তবে রান তোলার গতিটা ইংল্যান্ড কখনোই বাড়াতে পারেনি। স্টোকস ও রুট মিলে দলকে তিন অঙ্কে নিয়েছেন ২৭তম ওভারে। রানের গতিটা এরপর বাড়তে না বাড়তে আউট রুট। মালিঙ্গার বলে ব্যাটের ছোঁয়া লেগে উইকেটরক্ষকের কাছে গেলেও আম্পায়ার প্রথমে আউট দেননি। কিন্তু রিভিউ নিয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ইংল্যান্ডের রান তখন ১২৭। ৫৪ রানের চতুর্থ উইকেট জুটির পর পঞ্চম উইকেটে এসেছে মাত্র ১৭ রান। মালিঙ্গার একটি লো ফুলটস লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে ব্যাটে বলে হয়নি বাটলারের। ১৪৪ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়েছে ইংল্যান্ড। ৪৩ রানে ৪ উইকেট পেয়েছেন মালিঙ্গা। ডি সিলভার ৩ উইকেট এসেছে ৩২ রানে।
এই এক শ্রীলঙ্কার জয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯ হঠাৎ জমে উঠল। ইংল্যান্ডে কঠিন সমীকরণে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা পাকিস্তানেরও সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা জেগে উঠেছে।