ফাস্ট বোলারের খনি পাকিস্তান। ফজল মাহমুদ থেকে শুরু করে সরফরাজ নওয়াজ, সিকান্দার বখত, ইমরান খান; ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, আকিব জাভেদ কিংবা শোয়েব আখতার—তালিকা অনেক বড় করা যাবে। সবাই বিশ্ব ক্রিকেটের বড় ফাস্ট বোলার। অনেকেই কিংবদন্তি। ফাস্ট বোলিং প্রতিভার অপচয়ও কম হয়নি দেশটিতে। মোহাম্মদ আসিফের নামটি নিলে অনেক ক্রিকেটপ্রেমীরই ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে পড়ে অজান্তেই। প্রতিভার কী নিদারুণ অপচয়! এমন একজন প্রতিভাধর ফাস্ট বোলার, যার নাম খুব সহজেই কিংবদন্তিদের তালিকায় দেখা যেতে পারত, তাঁর ক্যারিয়ারই কিনা শেষ হয়ে গেল স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে!
ওয়াসিম আকরামেরও খুব কষ্ট হয় মোহাম্মদ আসিফের প্রসঙ্গে। তিনিও মনে করেন , ‘প্রতিভার কী অপচয়!’ তিনি মনে করেন, এ অপচয়ের দায়টা আসিফেরই। আসিফই নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করেনি, ‘সবাই আসিফের ব্যাপারে আক্ষেপ করে। প্রতিভার কী অপচয়! আমি যার সঙ্গেই কথা বলি, সে-ই একই কথা বলে। আমি এ ধরনের ফাস্ট বোলার দেখিনি বললেই চলে! আসিফ যেভাবে বলটা ব্যবহার করতে পারত! অবিশ্বাস্য। সে দুই দিকেই দুর্দান্ত সুইং করাতে পারত। আসিফের জন্যও দুর্ভাগ্যের, পাকিস্তানের জন্য তো বটেই।’
ইউটিউব চ্যানেলের একটি ভিডিও শোতে আসিফের প্রসঙ্গে আকরামের কণ্ঠে ছিল একরাশ আক্ষেপ, ‘অনেক দিন আসিফের সঙ্গে দেখা হয় না। ১০ বছর তো হবেই। আমি করাচি ছেড়েছি এক দশক হলো। লাহোরে খুব কম যাই।’
২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে মোহাম্মদ আসিফ, মোহাম্মদ আমির আর সে সময়ে পাকিস্তান দলের অধিনায়ক সালমান বাটের দুর্নীতিতে কেঁপে উঠেছিল গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। স্পট ফিক্সিং করে জুয়াড়িদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসিফ, আমির ইচ্ছা করে নো বল করেছিলেন সেই টেস্টে। এ ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হয় তিনজনকেই। ইংল্যান্ডের আইনে কারাভোগও করতে হয় কিছুদিন। পরে মোহাম্মদ আমির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে এলেও আসিফ আর সালমান বাটকে কখনোই পাকিস্তান দলের জন্য বিবেচনা করা হয়নি। মাত্র ২৩ টেস্ট খেলেই শেষ হয়ে গেছে আসিফের ক্যারিয়ার। এই ২৩ টেস্টে ১০৬ উইকেট পেয়েছিলেন আসিফ, ৩৮ ওয়ানডেতে ৬৮ উইকেট। কেবল স্পট ফিক্সিংই নয়, আসিফ অভিযুক্ত হয়েছিলেন মাদক সেবনের দায়েও। সেটিতেও প্রমাণ মেলে তাঁর বিরুদ্ধে।
আসিফের ব্যাপারে এত কিছুর পরও আকরাম বেশ ‘নরম’ই। ইউটিউব চ্যানেলের অনুষ্ঠানে যখন সর্বকালের সেরা বাঁহাতি ফাস্ট বোলারকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আসিফের কাণ্ডকীর্তিগুলোকে কীভাবে দেখেন, আকরামের সোজাসাপটা উত্তর, ‘ভুল তো মানুষই করে। তরুণ বয়সে আসিফ ওসব করেছিল। ভুল করেছিল।’