আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় এক বছর ক্রিকেটার বাইরে থাকতে হচ্ছে সাকিব আল হাসানের। বাংলাদেশ দলে খেলতে পারবেন না, ক্রিকেট খেলতে পারবেন না—এর চেয়ে বড় ক্ষতি আর কী হতে পারে একজন ক্রিকেটারের জন্য! সঙ্গে ভাবমূর্তি সংকট তো আছেই, আর্থিক ক্ষতিটাও কিন্তু কম নয় সাকিবের।
সাকিবের আর্থিক ক্ষতির কথাই যদি বলা হয়, সবার আগে আসবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সঙ্গে তাঁর কেন্দ্রীয় চুক্তি। যেহেতু এক বছর ক্রিকেটের বাইরে থাকতে হবে সাকিবকে, বিসিবি কি তাঁকে এই সময়ে বেতন দেবে? বাঁ হাতি অলরাউন্ডার আছেন কেন্দ্রীয় চুক্তির সর্বোচ্চ ক্যাটাগরিতেই, যেটিতে তিনি মাসে বেতন পান চার লাখ টাকা। কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সাকিবকে বাদ দেওয়ার শঙ্কাই বেশি। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান অবশ্য এ ব্যাপারে এখনই নিশ্চিত করতে পারেননি, ‘সে তো এমনি এক বছর খেলতে পারবে না। এ ব্যাপারে আমরা আলোচনা করব। তারপর সিদ্ধান্ত। কালই ঘটনা ঘটেছে, কদিন যাক।’
বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা তো আছেই। সাকিবের সঙ্গে আপাতত সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় তাঁর অনেক পৃষ্ঠপোষক। যেকোনো তারকার সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হয় সাধারণত দুই ভাবে। একটি সাময়িক প্রচারণা, আরেকটি বার্ষিক চুক্তি ভিত্তিতে। সাকিবের সঙ্গে কোনো প্রতিষ্ঠানের চুক্তি সাময়িক। কোনোটি আবার বার্ষিক। গত কদিনের ডামাডোলের মধ্যে সাকিব বড় অঙ্কের টাকায় চুক্তি করেছিলেন মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ফোনের সঙ্গে। এটি নিয়েও কম আলোচনা-সমালোচনা হয়নি। বিসিবি বারবার দাবি করছে, সাকিব নিয়ম ভেঙে এই চুক্তি করেছেন। এমনিতেই এ চুক্তির বৈধতা নিয়ে আছে প্রশ্ন। এখন তো আবার নতুন সংকট। সাকিবের সঙ্গে মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কটা যে সুতোয় ঝুলছে, না বললেও চলছে।
সাকিবের সঙ্গে চুক্তি আছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান উবার, ইউনিলিভারের সঙ্গেও। চুক্তি আছে একটি পাঁচ তারকা হোটেলের সঙ্গেও। শুভেচ্ছাদূত হিসেবে আছেন আন্তর্জাতিক শিশু তহবিল প্রতিষ্ঠান ইউনিসেফের সঙ্গে। ইউনিসেফের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন থাকবে কি থাকবে না সেটি এখনো বলা না গেলেও একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে উবার আপাতত চুক্তির ইতি টানতে যাচ্ছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোও সাকিবের সঙ্গে চুক্তি অব্যাহত রাখবে কিনা, সেটি কদিনের মধ্যেই জানা যাবে। তবে গত বছর স্টিভ স্মিথ-ডেভিড ওয়ার্নার নিষিদ্ধ হওয়ার পর স্পনসররা যেভাবে সরে গিয়েছিল, সাকিবের ক্ষেত্রেও সেটিই হয়তো হবে। এটি হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। যত বড় তারকা ক্রিকেটার হন, তিনি যখন ক্রিকেটেই নিষিদ্ধ থাকেন, তাঁর পেছনে কেনই বা কোটি কোটি টাকা লগ্নি করবেন পৃষ্ঠপোষকেরা। সাকিব দুর্দান্তভাবে ফিরে এলে তখন হয়তো আবার আগের মতো কোটি কোটি টাকার প্রস্তাব নিয়ে তাঁর দিকে হাত বাড়িয়ে দেবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো।