আজ ম্যাচ সেরা মুশফিকুর রহিম।
আজ ম্যাচ সেরা মুশফিকুর রহিম।

আরও ভালো না করতে পারার অতৃপ্তি মুশফিকের

নতুন স্বাভাবিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এর চেয়ে ভালো ফেরা আর কীই-বা হতে পারত বাংলাদেশের! ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই করেছে তামিম ইকবালের দল। তা–ও আবার ক্যারিবীয়দের একেবারেই নাকানিচুবানি খাইয়ে। আজ চট্টগ্রামে সর্বশেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয় ১২০ রানে।

এর আগে প্রথম ও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয় ছিল যথাক্রমে ৬ ও ৭ উইকেটে। এমন দাপটে জয়ের পরেও অতৃপ্তি আছে দলীয় অধিনায়ক তামিম ইকবালের। অতৃপ্তি আছে তৃতীয় ওয়ানডের সেরা খেলোয়াড় মুশফিকুর রহিমের।

প্রথম দুই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলে ব্যাটিংয়ের সুযোগ মিডল অর্ডারের অনেকেই পাননি। আজই প্রথম আগে ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। আর সে সুবাদে দলের ব্যাটসম্যানদের সবাই নিজেদের বাজিয়ে দখতে পেরেছেন। তামিম, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ—চারজন পেয়েছেন ফিফটি। তবে দলের রানের গতি বাড়ানোয় মূল ভূমিকা রাখায় ম্যাচসেরা মুশফিকই হয়েছেন।

ম্যাচ শেষে মুশফিক তবু অতৃপ্তির কথা জানালেন। দলকে বড় স্কোরের পথ দেখালেও নিজে কাজটা শেষ করে আসেননি বলেই অতৃপ্তি, ‘দলের যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তখন রান পেলেই ভালো লাগে। যেভাবে সবাই ব্যাট করেছে, বোলারদেরও কৃতিত্ব দিতে হবে। প্রথম দুই ম্যাচে আমি খুব বেশি সুযোগ পাইনি। কিন্তু আজ অপরাজিত থাকতে পারলেই ভালো লাগত।’

দারুণ দাপট দেখিয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। এরপরই শুরু হচ্ছে টেস্ট সিরিজ। গতবার টেস্টে উইন্ডিজকে রীতিমতো নাকানিচুবানি খাইয়েছে দল। সে তুলনায় ছোট সংস্করণেই লড়াই করেছিল দলটি। এবার ওয়ানডেতেই হাল ছেড়ে দেওয়া উইন্ডিজ দল টেস্টে কেমন করবে, সেটাই দেখার অপেক্ষা। মুশফিক কিন্তু সতর্ক এই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়েই, ‘আমার কাছে এটাই সবকিছু। গত ১০-১২ মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলিনি। সবাই খুব ভালো খেলেছে। শুরু থেকেই আমরা নিখুঁত ছিলাম। আমাদের আরও কিছু ম্যাচ প্রাপ্য। টেস্ট ওরা আরও অভিজ্ঞ দল পাবে। গতবার বেশ সহজেই জিতেছি, কিন্তু ওরাও জানে চ্যালেঞ্জটা কী। আমাদের এই পারফরম্যান্স ভুলে যেতে হবে।’

দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন মুশফিকুর রহিম।

মুশফিকের মতোই দুটি বিষয়ে অতৃপ্তির কথা জানিয়েছেন তামিম। প্রথমত, সিরিজে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি না করতে পারা। অবশ্য প্রথম দুই ম্যাচে আগে ব্যাটিং করে অল্প রান সংগ্রহ করায় বাংলাদেশের জন্য সেই সুযোগটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ রাখেনি বললেই চলে। আজ বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করায় সে সুযোগটি থাকলেও কেউ ম্যাজিক সংখ্যা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি।

আজ সিরিজের শেষ ম্যাচে অন্তত কারও ব্যাট থেকে সেঞ্চুরির আশা করেছিলেন তামিম। সেটি না হওয়াতেই অধিনায়কের কণ্ঠে অতৃপ্তি, ‘প্রথম সারির পাঁচ ব্যাটসম্যানের থেকে একটি সেঞ্চুরি চেয়েছিলাম। আজ সে সুযোগটি ছিল। কিন্তু আমরা কেউ পারিনি।’

মুশফিকের ইনিংসেই রানের গতি বেড়েছে বাংলাদেশের।

প্রথম দুই ম্যাচেই জেতার জন্য অল্প পুঁজির লক্ষ্যে পরে ব্যাট করতে হয়েছিল তামিম, সাকিবদের। আগে ব্যাট করে প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ছিল ১২২ ও দ্বিতীয়টিতে ১৪৮। অল্প রানের লক্ষ্য তাড়া করে প্রথম ম্যাচে জিততে বাংলাদেশ হারাতে হয়েছিল চার উইকেট ও দ্বিতীয়টিতে তিনটি। এই নিয়েই তামিমের দ্বিতীয় অতৃপ্তি, ‘শেষ দুটি ম্যাচে ৭ বা ৮ উইকেটে জিততে পারলে আমি আরও বেশি খুশি হতাম।’

তবে তৃপ্তির জায়গাও আছে অধিনায়কের, সেটি পেস বোলিং আক্রমণে বৈচিত্র্য আসায়। পুরোনো মোস্তাফিজুর রহমান ও রুবেল হোসেন আছেন। ফিরেছেন তাসকিন আহমেদ। এই সিরিজে অভিষিক্ত হয়ে নতুনে আলো ছড়িয়েছেন হাসান মাহমুদ। ফলে পেস বোলিং বিভাগ নিয়ে খুশি তামিম, ‘একটা সময় ছিল আমরা যখন ফাস্ট বোলার খুঁজেও পায়নি। এখন আমাদের অনেক ফাস্ট বোলার আছে এবং এদের মধ্যে কয়েকজন দলে ঢোকার অপেক্ষায় আছে। হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত অভিষেক হয়েছে। আমরা যেমনটা চেয়েছিলাম। রুবেল ও তাসকিনও ভালো বল করেছে। ফিজ (মোস্তাফিজ) ও সাইফউদ্দিনের ব্যাপারেও কোনো অভিযোগ নেই।’ এ ছাড়া সিরিজ জয়ের জন্য দল কতটা ক্ষুধার্ত ছিল, তা প্রমাণ করতে পারায় পুরো দলের প্রশংসা করেছেন তামিম।