আইপিএলে দুর্বল আম্পায়ারিং নিয়ে কথা উঠেছে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুর্বল আম্পায়ারিংয়ে এটা কেবল উপসর্গ। আসল রোগ তো বোর্ডের ভেতর
আইপিএলে এবার ব্যাট-বলের উত্তেজনার চেয়ে বিতর্কই বেশি হচ্ছে। রবিচন্দ্র অশ্বিনের ‘মানকাড’ আউটের পর পরশু ‘নো বল’ বিতর্ক নিয়ে সরগরম ভারতের ক্রিকেট মহল। মুম্বাই-বেঙ্গালুরু ম্যাচের শেষ বলটা নো হলেও তা আম্পায়ারের চোখ এড়িয়ে যায়। অনেকের মতেই, ডেলিভারিটি নো হলে ম্যাচের ফল অন্যরকমও হতে পারত। কিন্তু আম্পায়ার সুন্দরম রবি যে এমন অবিশ্বাস্য ভুল করবেন তা জানত কে! অবশ্য বিসিসিআইয়ের এক জেষ্ঠ কর্মকর্তা এতে মোটেও অবাক হননি। তাঁর মতে, আইপিএলে আম্পায়ারদের এমন অবিশ্বাস্য ভুল এক সময় হতোই। তা ছাড়া ব্যাপারটি নতুন কিছু নয়। কারণ আম্পায়ারিং নিয়ে খোদ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) একাংশেই পেশাদারি নেই!
ভারতের সংবাদ সংস্থা আইএএনএসকে এমন কথা বলেছেন বিসিসিআইয়ের সেই জেষ্ঠ কর্মকর্তা। এই সাংঘাতিক ভুলের গভীরে বোর্ডের সঠিক মূল্যায়ন ও যাচাই-বাছাই ব্যবস্থা নেই বলে বলে মনে করেন তিনি। সেই কর্মকর্তা বলেন, ‘যা (আম্পায়ারিংয়ে ভুল) দেখেছেন তা শুধুই উপসর্গ, রোগ নয়। আম্পায়ারদের বছরজুড়ে যাচাই করতে এর আগে কমিটিতে ছিল সাবেক আম্পায়ারদের প্যানেল। তাঁরা স্বাধীনভাবে মূল্যায়ন করতে পারতেন। কিন্তু কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটরস (সিওএ) আসার পর সব ছুড়ে ফেলা হয়েছে। ভুল আগেও হতো কিন্তু তখন একটা প্রক্রিয়া ছিল।’
সিওএ বিসিসিআইয়ের প্রশাসক মহল হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সব কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। যার অর্থ হলো কোনো আম্পায়ার কমিটি নেই। এর বদলে যে পদ্ধতিতে আম্পায়ারদের বেছে নেওয়া হচ্ছে তা আর যাই হোক অব্যর্থ নয় বলে মনে করেন সেই অফিশিয়াল, ‘২০১৮-১৯ মৌসুমে তাকান। কোনো আম্পায়ার্স কমিটি নেই। আরেকটু গভীরে তাকালে দেখবেন, মৌসুমের শুরুতে পর্যাপ্ত আম্পায়ার ছিল না পরিচালনার জন্য, যা আমার মতে চরম দুর্দশা। এ কারণে খুব দ্রুত কিছু আম্পায়ারকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কও হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আম্পায়ার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত একজনের একটি একাডেমি আছে, যেখানে এসব পরীক্ষার (যাচাই-বাছাই) জন্য আম্পায়ারদের প্রস্তুত করা হয়।’
ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটেও আম্পায়ারিং নিয়ে অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন বিসিসিআইয়ের আরেক কর্মকর্তা। সঠিক আম্পায়ারিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত ভিডিও সাজসরঞ্জাম ছাড়াই নাকি ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক ম্যাচ মাঠে গড়ায় বলে জানিয়েছেন তিনি, ‘বোর্ডের পেশাদার লোকজন কল্পিত সব অর্জনের কথা বলেন। কিন্তু তাঁরা ভেন্যুর জন্য ভিডিও সাজসরঞ্জাম কিনতে ভুলে যান। তাই কারণে ২০০৮ সালের পর এই প্রথম পর্যাপ্ত ভিডিও সাজসরঞ্জামের অভাবে বিসিসিআইয়ের আম্পায়ারিং প্রজেক্ট খোঁড়া হয়ে গিয়েছিল।’
এখানেই শেষ নয়। ম্যাচ পরিচালনায় জড়িত অফিশিয়ালরা একে-অন্যের পেছনেও লেগে থাকেন বলে অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই কর্মকর্তা, ‘এমন দৃশ্যও দেখা গেছে, আম্পায়ার ম্যাচ অফিশিয়ালের মূল্যায়ন করছেন, আবার ম্যাচ অফিশিয়াল আম্পায়ারের মূল্যায়ন করছেন। আমরা সবাই জানি ওপর মহলে কী হচ্ছে, কিন্তু তাঁদের চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ নেই।’
আম্পায়ারিং নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কের শুরু পরশু মুম্বাই-বেঙ্গালুরু ম্যাচে। মুম্বাইয়ের ১৮৭ রান তাড়া করতে নেমে শেষ বলে ৭ রান দরকার ছিল বেঙ্গালুরুর। এই শেষ বলে মুম্বাই পেসার লাসিথ মালিঙ্গার পা দাগের ওপাশে চলে গিয়েছিল। তা আম্পায়ার সুন্দরম রবির চোখ এড়িয়ে গেলেও চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে ‘রিপ্লে’তে ভুলটা ধরা পড়ে। ডেলিভারিটি ‘নো বল’ হলে ফ্রি-হিট মিলত। তখন কে জানে, ম্যাচের ফল অন্যরকমও হতে পারত!