>আমিনুল ইসলাম টেস্ট অভিষেক ইনিংসে খেলেছিলেন ৩৮০ বল। আজ সাদমান ইসলাম তাঁর টেস্ট অভিষেক ইনিংসে ১৯৯ বল খেললেন। শুধু সেঞ্চুরিটাই পাননি সাদমান, এ ছাড়া অসাধারণ এক টেস্ট ইনিংস দিয়ে জানিয়েছেন নিজের আগমণী বার্তা
কেমার রোচের করা দিনের তৃতীয় বলটা সোজা ব্যাটে খেললেন। দারুণ টাইমিং। মিড অফের ফিল্ডারকে চুম্বকের মতো টেনে নিয়ে বল ছুটল সীমানার দিকে। গড়িয়ে পারও হলো। চার! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাদমান ইসলাম রানের খাতা খুললেন চার মেরে। তখনো জমে না-ওঠা গ্যালারির হালকা ভিড় থেকে বাহবার বিক্ষিপ্ত করতালি। সাদমান সারা দিন এমনই মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেলেন।
টেস্ট ক্রিকেটে সাদমানের প্রথম স্কোরিং শটে চার হলো ঠিকই, কিন্তু সেটা ব্যাকরণ মেনে। সাদমান তখনই জানিয়ে দিলেন, তেরেকেটেতাকের ব্যাটসম্যান তিনি নন। বরং কী স্থৈর্য, কী সুস্থিরতা! চা বিরতির খানিক আগে আউট হওয়ার সময় নামের পাশে ৭৬ রান, তার চেয়ে বড় ভালো লাগল বলের হিসাবটা: ১৯৯!
বাংলাদেশের পক্ষে অভিষেক ইনিংসে এর চেয়ে বেশি বল আর একজনই খেলেছেন। বাংলাদেশেরই টেস্ট অভিষেকে সেই ইতিহাস গড়া ইনিংসে আমিনুল ইসলাম ৩৮০ বল খেলেছিলেন। তাঁর পর অভিষেক টেস্টে নিজের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের আরও দুই ব্যাটসম্যান যথাক্রমে ২৩৫ (রাজিন সালেহ) ও ২১২ (মোহাম্মদ আশরাফুল) বল খেলেছেন বটে। অভিষেক ইনিংস বাদ দিয়ে পুরো ম্যাচ ধরলেও সাদমান বাংলাদেশের পক্ষে অভিষেকে সবচেয়ে বেশি বল খেলা চতুর্থ ব্যাটসম্যান।
টি-টোয়েন্টির মারকাটারি জমানায় বল খেলতে পারাও যে একটা যোগ্যতা, এই সত্যটাই সবাই ভুলে যেতে বসেছে। টেস্টের মেজাজ হারিয়ে ফেলতে বসেছে প্রায় সবগুলো দলই। এর প্রমাণ মিলবে এখনকার টেস্টের সিংহভাগ ম্যাচে ফল হয়, ড্র হয় খুব কম। অনেক ম্যাচ শেষ হয়ে যায় তিন কি চার দিনে। বাংলাদেশ এই সিরিজেরই প্রথম ম্যাচ জিতেছে আড়াই দিনে।
টেস্ট মেজাজের ব্যাটসম্যান বাংলাদেশ পেয়েছে আরও কম। কেউ কেউ আবার বাড়াবাড়ি রকমের রক্ষণাত্মক মেজাজের ছিলেন, যাঁরা দলের বাকিদের ওপর চাপ তৈরি করতেন। কিন্তু আজ সাদমানের স্ট্রাইক রেটের দিকে কখনোই সেভাবে চোখ যায়নি। সতর্কভঙ্গিতে খেলা মানেই যে খোলসের ভেতরে ঢুকে পড়া নয়। নিজের ৫২ রানই নিয়েছেন দৌড়ে। টেস্ট অভিষেক বাদই দিন, গত ১৮ বছরের পথচলায় সাদমানের চেয়ে বেশি বল খেলা টেস্ট ওপেনার আছেনই মাত্র ৫ জন।
এমন শান্ত-সুস্থির একজন ইনিংস উদ্বোধকের ভীষণ প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশ দলের। বিশেষ করে এমন এক সময়ে, যখন দ্রুত দুই কি তিন উইকেট হারিয়ে ফেলার রোগে নিয়মিত ভুগেছে বাংলাদেশ। আজ অন্য প্রান্তে সাদমান থাকার কারণেই প্রথম তিন উইকেট জুটিতে বাংলাদেশ যথাক্রমে ৪২, ৪৫ ও ৬৪ রান যোগ করেছে। বিশেষ করে মিঠুনের সঙ্গে তাঁর তৃতীয় উইকেটের জুটিটা ২ উইকেটে ১৫১ রানে নিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশকে। শেষ পর্যন্ত সাদমান চা বিরতির খানিক আগে ফিরলেন, যখন মনে হচ্ছিল, অভিষেকে সেঞ্চুরিটা বুঝি হয়েই যাবে।
তা হয়নি। ২৪ রানের শূন্যতা নিয়ে যখন দেবেন্দ্র বিশুর বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ফিরলেন, ততক্ষণে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে একজন ‘সলিড’ ‘কাম অ্যান্ড কম্পোজড’ বিশেষণগুলো জুড়ে দেওয়া যায় এমন এক ওপেনার পাওয়ার ঘোষণা দিয়ে ফেলেছে। সাদমানের পুরোদস্তুর টেস্ট ক্রিকেটীয় মেজাজের দিনে বাংলাদেশও অনেক দিন পর টেস্ট মেজাজ দেখাল। সারা দিনে মাত্র ১০টি চার, তবু রানের চাকা থেমে থাকেনি। ২১৩ রান বাংলাদেশ নিয়েছে দৌড়ে। সারা দিনে মাত্র ৫টি মেডেন ওভার। টানা ডট বলে চাপও তৈরির সুযোগ পায়নি বোলাররা।
সাদমান-ইফেক্টের কারণেই কি না, সাকিব আল হাসানের মতো আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান দলের প্রয়োজন বুঝে ৫৫ রান ও ১১৩ বলের ইনিংসে খেললেন মাত্র একটি চার। ইনস্ট্যান্ট নুডলসের বদলে আপনার যদি সেই রসনাই তৃপ্তি দেয়, যা একটু ধৈর্য নিয়ে বানানো, তবে আজ নিশ্চয়ই বেশ ভালো উদরপূর্তি হয়েছে!