কিউই কণ্ঠ

আমার কাছে এই বিশ্বকাপই সেরা

রিচার্ড হ্যাডলি
রিচার্ড হ্যাডলি

বিশ্বকাপের আসল লড়াই শুরু হচ্ছে, প্রতিযোগিতাও নতুন মাত্রা পাবে এখান থেকে। যাবে নতুন উচ্চতায়। এখন আর ভুল করার সুযোগ নেই। এখন বাকি ২১ ঘণ্টার খেলা। কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল, ফাইনাল—৭ ঘণ্টা করে তিনটি ম্যাচ। যেকোনো সাত ঘণ্টার একটা প্রহর আপনার চার বছরের পরিশ্রম ব্যর্থ করে দিতে পারে। এটা রূঢ় সত্য, বাস্তব।
কোয়ার্টার ফাইনাল নিয়ে কথা বলার আগে আমি আমার চার সেমিফাইনালিস্টের নাম বলে দিতে চাই। আমার ধারণা, সিডনিতে অস্ট্রেলিয়া খেলবে ভারতের সঙ্গে, অকল্যান্ডের অন্য সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এর বাইরে আমি আর কোনো হিসাব-নিকাশে যেতে চাই না।
এবার অন্য প্রসঙ্গ। আমি সব সময়ই কুমার সাঙ্গাকারার ব্যাটিংয়ের মুগ্ধ দর্শক। সে আধুনিক ক্রিকেটে সেরাদের একজন। আমি দেখেছি, যখনই সে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে এসেছে এখানে, আমাদের বোলারদের তাকে নিয়ে বাড়তি পরিকল্পনা করতে হয়েছে। বিশ্বকাপেও সে দারুণ ছন্দে আছে। তার পরও আমি মনে করি, সাঙ্গাকারাও পারবে না দক্ষিণ আফ্রিকার সেমিফাইনাল খেলা ঠেকাতে।
ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ড খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে। নিউজিল্যান্ডের জন্যটা ম্যাচটা খুব কঠিন হওয়ার কথা নয়। গ্রুপের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে যে নিউজিল্যান্ডকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে, এক অর্থে সেটা ভালোই হয়েছে। সেদিন প্রমাণ হয়েছে, বাংলাদেশ যোগ্য দল হিসেবেই শেষ আটে উঠেছে।
তরুণ মাহমুদউল্লাহ আমাকে মুগ্ধ করেছে। সে বিশ্বমানের খেলোয়াড়। সে যে নিষ্ঠা দেখিয়েছে, যেভাবে স্ট্রোক খেলেছে আমার তো খুবই ভালো লেগেছে। বৈরী কন্ডিশনেও সে চাপের মুখে দারুণ ইনিংস খেলেছে। সে ক্রিকেটিং শট খেলে, দারুণ ফাঁকা জায়গা বের করতে পারে। আমার মতে, সেডন পার্কে সে একটা ধ্রুপদি ইনিংস খেলেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, সে এমন এক বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে স্বছন্দে খেলেছে যারা গ্রুপের অন্য দলগুলোকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। মাহমুদউল্লাহর এই সেঞ্চুরিটা তাই বিশ্বকাপের সেরা সেঞ্চুরিগুলোর একটা। তবে তার এ রকম ছন্দ এবং বাংলাদেশ দলের দারুণ আত্মবিশ্বাস থাকার পরও কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতকে হারানো বেশ কঠিনই। এ রকম ম্যাচে জিততে হলে আপনার বিধ্বংসী একটা বোলিং আক্রমণ লাগবে। বাংলাদেশের বোলিং ভারতের এমন শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের পরীক্ষা নিতে পারবে কি না তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। তবে আমি মনে করি এ ম্যাচে বাংলাদেশ ভারতকে সমস্যায় ফেলবে। বাংলাদেশ যদি ভারতকে হারিয়ে দেয়, যা তারা ২০০৭ বিশ্বকাপেও করেছিল, তাহলে সেটা হবে এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় চমক। অন্য কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো খুব কঠিন হবে পাকিস্তানের জন্য।
১৯৭৫ বিশ্বকাপ থেকে এ পর্যন্ত ক্রিকেট কত বদলে গেছে সেটাও এক বিস্ময়! আমার সময়ে আমি শুধু দুই রকম স্লোয়ার দিতে পারতাম। এখন তো প্রায় সব পেসারই চার রকমের স্লোয়ার দিতে পারে। ব্যাটসম্যানরাও কত পরিণত হয়েছে। দিল স্কুপ, সুইচ হিট, আপার কাট—কত বাহারি শট খেলে সবাই।
নিউজিল্যান্ডে এবারের বিশ্বকাপ একটা উন্মাদনা তৈরি করেছে। খেলাটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা বোঝা যাচ্ছে। আমার কাছে এই বিশ্বকাপই এ পর্যন্ত সেরা। সেদিন এক ভারতীয় সাংবাদিক এসব দেখে জিজ্ঞেস করছিলেন, ‘এমন উন্মাদনা দেখে কি আপনার মনে হচ্ছে, ইশ্, যদি আমিও খেলতে পারতাম এমন একটা বিশ্বকাপে?’ আমি সজোরে হেসে বললাম, ‘দেখো, আমার বয়স এখন ৬৪ চলছে। সামনের বছর থেকে আমি অবসর ভাতা পাওয়ার যোগ্য হব।’
আমার মনে হয়, সেই সাংবাদিক জবাবটা পেয়ে গেছেন। (হক-আই)