সাকিব আল হাসান
সাকিব আল হাসান

দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে সাকিব আল হাসান

‘আমাদের টেনশন করার কিছু নেই’

সেঞ্চুরিয়নে পাওয়া জয়ের রোমাঞ্চ এখনো তাজা। তার মধ্যেই আজ জোহানেসবার্গে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে, যে ম্যাচ বাংলাদেশ দলকে দিচ্ছে সিরিজ জয়ের হাতছানি, স্বপ্ন দেখাচ্ছে আইসিসির ওয়ানডে সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকায় আরও ওপরে ওঠারও।

অথচ বাংলাদেশ দল দক্ষিণ আফ্রিকায় আসার পরও কেউ ভাবেনি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের আগেই দৃষ্টিসীমায় চলে আসবে সিরিজ জয়ের সুযোগ। ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামের আজকের ম্যাচের আগে একটু কি অবিশ্বাস্যই লাগছে না বিষয়টা?

কাল মুঠোফোনে প্রশ্নটা করা হলো সাকিব আল হাসানকে, যাঁর ব্যাট থেকে আসা জাদুকরি ইনিংসেই পরশু দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে পাওয়া প্রথম জয়টা সহজ হয়েছে বাংলাদেশের। এরপর সাকিবের সঙ্গে কথোপকথনটা আরেকটু এগোল, যেখানে বিষয়বস্তু শুধুই এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ—

প্রথম ওয়ানডেতে দুর্দান্ত সাকিব
প্রশ্ন

একটু কি অবিশ্বাস্য লাগছে না? খেলাটা দক্ষিণ আফ্রিকায়। প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। অথচ তিন ম্যাচের সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটিই কি না, আপনাদের সামনে আসছে সিরিজ জয়ের উপলক্ষ হয়ে?

সাকিব আল হাসান: আসলে ক্যারিয়ারের এ জায়গায় এসে এখন আর এগুলো আমাকে খুব বেশি স্পর্শ করে না। কোনো কিছুই অবিশ্বাস্য লাগে না। এখন যে জায়গায় আছি, আমি চাই খেলাটা উপভোগ করতে। সময়টা ভালোভাবে কাটাতে। কোনো কিছু নিয়েই খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার আর সময় নেই। জীবনে অনেক বেশি টেনশন নিয়েছি, অনেক চাপ নিয়েছি; এখন আর ওই জিনিসটা চাই না। এখন চাই আরামে থাকতে, নির্ভার থাকতে, খেলাটা উপভোগ করতে...যত বেশি পারি।

প্রশ্ন

বাংলাদেশ দলের কথা চিন্তা করলে তো এটা অনেক বড় ব্যাপার। দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে সিরিজের দিতীয় ম্যাচেই সিরিজ জয়ের জন্য খেলতে নামছেন। এটা তো কেউ ভাবেনি...

সাকিব: হ্যাঁ, সেটা তো অবশ্যই অনেক বড় ব্যাপার। এর আগে তো এ রকম হয়নি কখনো। এ বছর একটা ভালো ব্যাপার হচ্ছে যে নিউজিল্যান্ডেও যেটা কখনো হয়নি সেটা হয়েছে, আমরা টেস্ট জিতলাম। এবার এখানেও আগে যা হয়নি, তা হয়েছে। আমরা একটা ম্যাচ জিতেছি।

প্রশ্ন

প্রশ্ন: প্রথম ম্যাচে যে রকম খেললেন, মনে হচ্ছিল সাম্প্রতিক ছুটি–বিতর্কের পর সবকিছু ব্যাট দিয়ে উড়িয়ে দিতে চাইছেন! প্রতিজ্ঞা করে নেমেছিলেন নাকি যে ভালো কিছু করতেই হবে?

সাকিব: না, ও রকম কোনো লক্ষ্য ছিল না যে নেমেই কিছু একটা করে ফেলতে হবে। ও রকম কোনো চিন্তা একদমই ছিল না। আমি শুধু দলের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে নিজের খেলাটা উপভোগ করতে চেয়েছি।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিন ম্যাচে পঞ্চাশ সাকিবের
প্রশ্ন

প্রশ্ন: খুব দ্রুত রান তুললেন। মনে হচ্ছিল ব্যাট করে বেশ আনন্দও পাচ্ছেন...

সাকিব: আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সেদিন আমি ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে পেরেছি। আমার ধারণা, বিপিএলের পারফরম্যান্স এ ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করেছে। যখন ইচ্ছা হলো মারতে, আমি মারা শুরু করলাম। আগে ভয় কাজ করত মারতে গেলে আউট হয়ে যেতে পারি। এখন ওই ভয়টা কাজ করছে না। এটা আমার জন্য ভালো হয়েছে। সে জন্যই ও রকম তাড়াতাড়ি রান করতে পেরেছি। নইলে যে অবস্থায় ছিলাম, সেখান থেকে আমরা নম্র–ভদ্র ক্রিকেট খেললে দলের রান সর্বোচ্চ ২৬০–২৭০ হতো। এটা হলে দক্ষিণ আফ্রিকা খুব স্বস্তিতে থাকত, ও রকম তাড়াহুড়াও করত না। আমরা হয়তো তখন খেলাটা সম্মানের সঙ্গে হেরে যেতাম।

প্রশ্ন

প্রশ্ন: ৩১৪ রান করে ফেলবেন, এটা ভাবতে পেরেছিলেন আগে?

সাকিব: আমার মনে হয় না দলের লক্ষ্য এত রান ছিল। বড়জোর ২৭০–২৮০ ছিল। আগেই বলেছি, এই উইকেটে ও রকম হলে আমরা হয়তো সসম্মানে হেরে যেতাম। ওরা তখন চাপ নিত না, ভুলও করত না।

প্রশ্ন

প্রশ্ন: প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা দলটাকে কেমন মনে হয়েছে? নিজেদের মাঠে খেলা, তবু কি একটু পিছিয়ে তারা?

সাকিব: আমার তো মনে হয় ওদের চেয়ে ভালো দলকে আমরা বিশ্বকাপে হারিয়েছি। সে হিসেবে বাকি দুই ম্যাচেও আমাদের টেনশন করার কিছু নেই। বরং ওরা নিজেদের মাঠে খেলছে, চাপ ওদের ওপর বেশি।

প্রশ্ন

প্রশ্ন: বাকি দুই ওয়ানডেতে আপনার ব্যক্তিগত চাওয়া কী?

সাকিব: ব্যক্তিগত চাওয়া তো কখনোই ছিল না। যেটা বললাম, যে কয় দিন খেলব, চাই ক্রিকেটটা উপভোগ করতে।

সাকিব আল হাসান
প্রশ্ন

প্রশ্ন: প্রথম ম্যাচে দলে আপনার সম্পৃক্ততা অনেক বেশি মনে হয়েছে, যেটা দলের জন্য খুব ভালো। কিন্তু মাঝেমধ্যেই তো আপনার ‘সুইচ অফ’ হয়ে যায়। এখন আবার ‘সুইচ অন’। এ রকম সব সময় থাকা যায় না?

সাকিব: (হাসি) জানি না। মানুষ বলে আমি নাকি মন চাইলে ভালো খেলি, মন না চাইলে খেলি না। কিন্তু আমার তো ও রকম কিছু মনে হয় না (হাসি)।

সাকিবের নিজের ব্যক্তিগত চাওয়া–পাওয়া যদি না–ও থাকে, তাঁর কাছে দলের প্রত্যাশা থাকবে ঠিকই। হ্যাঁ, ম্যাচ জেতানোর দায়িত্ব তো আর একা সাকিবের নয়। প্রথম ম্যাচের জয়ে যেমন অন্যদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অধিনায়ক তামিম ইকবাল মাঠে নামবেন সেই দল নিয়েই। তারপরও সাকিব যখন দলে থাকেন, তাঁর ওপর বাড়তি নির্ভরতা থাকেই। হয় ব্যাট হাতে কিছু করবেন, নয়তো বল হাতে।

দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে অবশ্য ব্যাটিংয়েই সাকিবের কাছে আশাটা বেশি। স্পিনারদের জন্য যে এখানে তেমন কিছুই নেই। বোলিংয়ে কিছু করতে হলে পেসারদেরই করতে হবে। সেঞ্চুরিয়নের পারফরম্যান্সের পর তাসকিন–শরীফুলদের ওপর সেই আস্থা রাখাও যাচ্ছে। তাসকিন তো কাল বেশ জোর গলায় বললেনও, দক্ষিণ আফ্রিকায় আসার পর থেকে সিরিজ জয়ই তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য এবং আজও তাঁরা মাঠে নামবেন সেই একই লক্ষ্যে।

লক্ষ্যটা আজই পূরণ হয়ে গেলে তো ভালো। না হলে পরের ম্যাচে তো সুযোগ থাকছেই। অযথা চাপ নিলেই ভেঙে পড়ার শঙ্কা। তার চেয়ে সাকিবের মতোই নির্ভার ক্রিকেট খেলুক বাংলাদেশ। আর সাকিব তো বলেই দিয়েছেন—টেনশন করার কিছু নেই।