আমাদের একটি ম্যাচ জেতাও কঠিন হবে

খালেদ মাসুদ
খালেদ মাসুদ

একটা ধারণা ছিল, মুশফিকুর রহিম ছন্দে ফিরলে বাংলাদেশকে হয়তো ব্যাটিং নিয়ে অতটা আর ভাবতে হবে না। সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, নুরুল হাসানরা মোটামুটি রান করছে। সব মিলিয়ে যেকোনো দলের বিপক্ষেই লড়াই করার মতো একটা স্কোর দাঁড় করাতে পারবে। বোলাররা তো কিছুটা হলেও ছন্দে আছে। টি-টোয়েন্টি যেহেতু ২০ ওভারের খেলা, ছোট দল আর বড় দলের পার্থক্য এখানে অনেক ক্ষেত্রেই ১৯-২০ হয়ে যায়; সব মিলিয়ে মুশফিক ছন্দে ফেরায় অনেকেই হয়তো ভেবেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ লড়াই করতে পারবে।

কিন্তু কোথায় কী, এ ম্যাচে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ সাহস বা দক্ষতার ছিটেফোঁটাও দেখাতে পারেনি। উইকেট যেমন ছিল, তাতে টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ায় আশা জেগেছিল, মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা ভালো একটা রান স্কোরবোর্ডে জমা করতে পারবে। কিন্তু শট নির্বাচনে ভুল করে আর দৃঢ়তার অভাব ফুটিয়ে তুলে বাংলাদেশ মাত্র ১২৪ রানই তুলতে পারল।

আমাদের ব্যাটিংয়ে পরিকল্পনার কোনো ছাপ নেই। আমরা না পারছি পাওয়ারপ্লে কাজে লাগাতে, না পারছি শেষ দিকে দ্রুতগতিতে রান তুলতে। আজকের কথাই ধরুন, কোনো জুটিই গড়তে পারিনি আমরা। এভাবে ব্যাটিং করলে কোনো ম্যাচেই কিছু আশা করা যায় না।

এমন উইকেটে এই অল্প রান নিয়ে বোলারদের লড়াই করতে বলাটা বোকামি। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের পরই পরিষ্কার হয়ে যায় ইংল্যান্ড বড় জয় পেতে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তারা অনায়াস জয়ই পেয়েছে। এ ম্যাচের কী বিশ্লেষণ করব বুঝতে পারছি না। এই মুহূর্তে আমি একটা কথাই বলতে পারি—এ ম্যাচ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই! এমন বাজে ব্যাটিংয়ের পর বোলারদের জন্য বল হাতে নিয়ে ভালো বল করা একটু কঠিনই। তারপরও ইংল্যান্ডের দুটি উইকেট নিতে পেরেছে বোলাররা।

এ ম্যাচ দেখার পর আমার একটা জিনিসই মনে হয়েছে। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কোনো ম্যাচ জেতার বাস্তবসম্মত সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আর সেটা জিতবেই-বা কেন, বলতে গেলে এ গ্রুপের প্রতিটি দলই আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। এমনকি ওই গ্রুপের দল আফগানিস্তানের সঙ্গেও আমরা পেরে উঠব কি না, সেটাও নিশ্চিত করে বলা যায় না। আর বাকিদের চেয়ে এভাবে এতটা পিছিয়ে থাকার দায় আমি শুধু খেলোয়াড়দের দেব না। এটা আমাদের অবকাঠামো আর ম্যানেজমেন্টেরই সমস্যা।

একটি বড় মঞ্চে আমি দল নিয়ে যাব আর তৎক্ষণাৎ এর-ওর সঙ্গে জিতে ফিরব, এমন ভাবার মানে ভুলের স্বর্গে বাস করা। বড় কোনো টুর্নামেন্টে ভালো করতে হলে, বড় কোনো দলকে হারাতে হলে আপনাকে নিজেদের সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। লম্বা সময় নিয়ে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। আপনাকে লম্বা সময় নিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। বাকি সব দলেরই এসব আছে। সব দলেই নতুন নতুন খেলোয়াড় উঠে আসছে। কিন্তু আমাদের সেভাবে খেলোয়াড় উঠে আসছে কই!

বিশ্বের বাকি দলগুলো যখন ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে, আমরা সেই একই জায়গায় পড়ে আছি। আপনি আফগানিস্তানের দিকেই তাকান, ওরা গত কয়েক বছরে কত উন্নতি করেছে। ওরা এখন বিশ্বমানের ক্রিকেট খেলছে। আমার তো মনে হয়, সর্বশেষ ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে ১৩০ রানে হারানোর পর তাদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়বে। আমার তো মনে হয় ওরা আরও দুটি ম্যাচ জিতে যেতে পারে। আর বাস্তবতা বিবেচনায় আমাদের একটি ম্যাচ জেতাও কঠিন হবে!