সময়টা পাকিস্তানের ক্রিকেটের জন্য ভীষণ কঠিন ছিল। হয়তো অতটা কঠিন ছিল বলেই এমন চোখধাঁধানো খেলতে পেরেছিল পাকিস্তান। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া পাকিস্তান যে ভয়ংকর, ক্রিকেটে সে কে না জানে!
মাস তিনেক আগেই লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণ হয়েছিল, যেটির রেশ এখনো টেনে বেড়াতে হচ্ছে পাকিস্তানের ক্রিকেটকে। সেই হামলার রেশ তাজা থাকতেই ২০০৯ সালের জুনে ইংল্যান্ড থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে ফিরল পাকিস্তান দল। তাতে উমর গুল, সাইদ আজমল, কামরান আকমল, ইউনিস খানসহ অনেকেরই দারুণ অবদান। তবে সে বিশ্বকাপের আগে পাকিস্তানের অধিনায়কত্ব পাওয়া ইউনিস এখনো ভুলতে পারেন না আরেকজনের কথা – শহীদ আফ্রিদি।
টুর্নামেন্টজুড়েই দারুণ খেলেছেন, তবে সেমিফাইনাল আর ফাইনালে ব্যাটে-বলে নিখুঁত অলরাউন্ডারের পরিচয়টা ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন আফ্রিদি। ক্রিকেটের বিখ্যাত সাময়িকী উইজডেনে নিজের ক্যারিয়ারের সেরা দশ ম্যাচের কথা বলতে গিয়ে ইউনিস বরং চলে গেলেন আফ্রিদির সেই দুই ম্যাচের প্রশংসায়।
সেমিফাইনাল ও ফাইনাল দুই ম্যাচেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন আফ্রিদি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে ৭ রানের জয় এনে দেওয়ার পথে ব্যাট হাতে ৩৪ বলে করেছিলেন ৫১ রান, দুর্দান্ত যে ইনিংসে চার ছিল ৮টি। পরে বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফাইনালেও কম কী! ব্যাট হাতে একই রকম ভয়ংকর আফ্রিদি, এবার ৪০ বলে অপরাজিত ৫৪, যাতে দুটি করে ছক্কা ও চার। বল হাতে ৪ ওভারে ২০ রানে ১ উইকেট। পাকিস্তান ৮ উইকেটে ম্যাচটা জিতে সেদিন লর্ডসে ভাসে শিরোপার উল্লাসে।
উইজডেনে সেই দুই ম্যাচের স্মৃতিচারণে পূর্বাপর টেনে আনলেন ইউনিস, ‘বেশ কঠিন একটা সময়েই ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা আমরা জিতেছি, লাহোরে সন্ত্রাসী হামলার কয়েক সপ্তাহ পর। পিসিবি তখন আমাকে অধিনায়ক বানায়। আমি বিশ্বকাপ নিয়ে অনেক উদ্দীপ্ত ছিলাম, পুরো দলই তা-ই ছিল। আমরা জানতাম সময় এসেছে আমাদের এমন কিছু করার, যেটা পুরো পাকিস্তানের জন্য প্রেরণাদায়ক কিছু হবে।’
সেই উদ্দেশ্য সফল করার পথে টুর্নামেন্টজুড়ে দল হিসেবেই দারুণ খেলেছে পাকিস্তান। ব্যাটে-বলে কেউ না কেউ জ্বলে উঠেছেনই। কিন্তু সেমিফাইনাল-ফাইনালে আফ্রিদির অমন পারফরম্যান্স, তা-ও আফ্রিদির ক্রিকেটে যা তেমন যায় না সেই পরিণতিবোধের প্রমাণ রেখে...আফ্রিদিভক্তদের তা মন কেড়েছে। ইউনিস খানেরও মনে গেঁথে গেছে সেই পারফরম্যান্স, ‘ঠিক সময়ে জ্বলে উঠেছিলাম আমরা। বিশেষ করে শেষ দুই ম্যাচে আফ্রিদি যেভাবে খেলেছে, সেটা দেখতে পাওয়া আমার জন্য বড় পাওয়া ছিল।’