এমনকি বীরেন্দর শেবাগও পারেননি। পারলে শেবাগেরই পারার কথা ছিল। টেস্টে শেবাগের চেয়ে বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান এখনো পায়নি ভারত। সেই শেবাগ একবার কাছাকাছি চলেও গিয়েছিল। ২০০৬ ক্যারিবীয় সফরে লাঞ্চের আগে অপরাজিত ছিলেন ৯৯ রানে। তাঁরও ১২ বছর পর অবশেষে প্রথম ভারতীয় হিসেবে সেই কীর্তিতে নাম লেখালেন শিখর ধাওয়ান। কাজটা সহজ তো নয়। টেস্ট ইতিহাসেই লাঞ্চের আগে সেঞ্চুরি এর আগে পেয়েছেনই মাত্র পাঁচজন। এই পাঁচের কেবল একজন একুশ শতকের ক্রিকেটার।
ভারতীয় বোলারদের দাপটে এক দিনে দুবার অলআউট হয়ে আফগানিস্তানের টেস্ট অভিষেকটা হলো দুঃস্বপ্নের মতো। ম্যাচ শেষ হয়ে গেল মাত্র দুদিনে। ভারত তাদের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয় তুলে নিল ইনিংস ও ২৬২ রানে জিতে। এক দিনে ২৪ উইকেট পড়ার এই ম্যাচেও সেরা খেলোয়াড় হলেন ধাওয়ান। হোক না প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান, লাঞ্চের আগে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া চাট্টিখানি কথা!
আফগান বোলারদের ওপর স্টিম রোলার চালালেও ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে এসে কিন্তু বিনয়ী ধাওয়ানকেই দেখা গেল। সবচেয়ে বড় বিনয় দেখালেন এই কথায়, এমন সেঞ্চুরিতেও নিজের খুব বেশি কৃতিত্ব যেন নেই! বললেন, ‘বল তখন সুইং করছিল, সিমও করছিল। কিন্তু আমি ঠান্ডা মাথায় খেলেছি। আর সবকিছু আমার পক্ষেও ছিল। ঈশ্বরের কৃপায় এক সেশনে সেঞ্চুরি তুলে নিতে পেরেছি। অন্য রকম তো লাগেই। তবে আমি আফগানিস্তানকে অভিনন্দন জানাতে চাই টেস্ট পর্যায় পর্যন্ত চলে আসায়। ওদের বলতে চাই ঈদ মোবারক।’
টেস্ট ক্রিকেটের প্রায় দেড় শ বছরের ইতিহাসে খুব কম ব্যাটসম্যানই এই কৃতিত্ব করে দেখিয়েছেন। ভিক্টর ট্রাম্পার (১৯০২), চার্লস ম্যাকার্টনি (১৯২৬), ডন ব্র্যাডম্যানরা (১৯৩০) অন্য এক যুগে। মাজিদ খান (১৯৭৬-৭৭) এমন কৃতিত্ব করে দেখিয়েছেন সেই কবে। সবচেয়ে কাছাকাছি কীর্তিটা ডেভিড ওয়ার্নারের (২০১৬-১৭)। ধাওয়ানকে নিয়ে সংখ্যাটা ছয় হলো। আর ছয়জনের চারজনই অস্ট্রেলিয়ান!
ভেজা মাঠে ক্রিকেট খেলার জন্য সুখ্যাতি ছিল অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ভিক্টর ট্রাম্পারের। ১৯০২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই সেঞ্চুরি করার প্রথম কৃতিত্ব তাঁরই। চার্লস ম্যাকার্টনি ১৯২৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঝোড়ো এক ইনিংসে তুলেছিলেন ১৫১ রান। সেঞ্চুরিটা করতে মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্তও সময় নেননি।
টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা ব্যাটসম্যানেরও কিন্তু আছে এই কৃতিত্ব। হ্যাঁ, ডন ব্র্যাডম্যানের কথাই বলা হচ্ছে। টেস্টে ৯৯.৯৪ গড় রানে ক্যারিয়ার শেষ করা স্যার ডন একবার সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই। সেটিও ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই, ১৯৩০ সালে। এর প্রায় চার দশক পর করাচিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মারকুটে ইনিংস খেলে এমন সেঞ্চুরি তুলে নেন মাজিদ খান। ১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে তখনকার সেরা বোলিং লাইনআপ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে ৫৩০ রান তুলেছিলেন মাজিদ। ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে ছিলেন তখন।
ধাওয়ানের আগে সর্বশেষ এই কৃতিত্ব ডেভিড ওয়ার্নারের। টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডেতে ওয়ার্নার–ঝড় ক্রিকেট বিশ্ব দেখেছে অনেকবার। ২০১৬-১৭ মৌসুমে সিডনি টেস্টে পাকিস্তানের ওপর দিয়ে ওয়ার্নার-ঝড় বয়ে যায়। সেই ঝড় কেমন, সেটা কাল দেখা গেছে ধাওয়ানের ব্যাটে।
লাঞ্চের আগেই সেঞ্চুরি
ব্যাটসম্যান | ম্যাচ | ভেন্যু | সাল |
ভিক্টর ট্রাম্পার | অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড | ওল্ড ট্র্যাফোর্ড | ১৯০২ |
চার্লস ম্যাকার্টনি | অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড | হেডিংলি | ১৯২৬ |
ডন ব্র্যাডম্যান | অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড | হেডিংলি | ১৯৩০ |
মাজিদ খান | পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড | করাচি | ১৯৭৬-৭৭ |
ডেভিড ওয়ার্নার | অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান | সিডনি | ২০১৬-১৭ |
শিখর ধাওয়ান | ভারত-আফগানিস্তান | বেঙ্গালুরু | ২০১৮ |