>আফগানিস্তানের কাছে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ হার, এটা কি বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়? নাকি বড় ধাক্কা? বিসিবি কী ভাবছে এই ব্যর্থতা নিয়ে।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম আজ কেমন নীরবতায় ঢাকা। বিসিবি কার্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী থেকে শীর্ষ কর্তা—সবার মুখটা ভার। অদ্ভুত বিষণ্নতা সবার চোখেমুখে। দেরাদুনে কাল যা হয়েছে, তাতে মুখে হাসি থাকার কথা নয় কারও। বাংলাদেশ এক ম্যাচ বাকি থাকতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরে গেছে আফগানিস্তানের কাছে। হারের ধরনও এমন, যেটির সঙ্গে শুধু ‘লজ্জা’ শব্দটাই ব্যবহার করা যায়। এই হারকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অশনিসংকেত মনে করছে বিসিবি।
আফগানিস্তান দিনে দিনে ভালো করছে। এই আফগানরাই ২০১৪ ও ২০১৬ সালে বাংলাদেশের মাটিতেই সাকিবদের ওয়ানডেতে হারিয়ে গেছে। তবুও কখনো আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারের অভিজ্ঞতা হয়নি বাংলাদেশের। এবার শুধু সিরিজই কি হেরেছে বাংলাদেশ? টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কতটা পার্থক্য, সেটিও যেন স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু কেন এমনটা হয়েছে, সেটির বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিসিবির মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুস আজ সংবাদমাধ্যমকে বললেন, ‘এটা আমাদের জন্য অশনিসংকেত। আমাদের সতর্ক হতে হবে। এই হার মানে এখনো টি-টোয়েন্টিতে আমরা ভালো দল হয়ে উঠিনি। যে অবস্থানে ছিলাম, সেখানেই আছি। কোনো উন্নতি করিনি। আশা করেছিলাম, বিপিএলে যারা ভালো খেলে, তারা এখানে ভালো করবে। সেই পারফরম্যান্সটা দেখছি না। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সেটা দেখছি না। এই জায়গায় আমাদের কাজ করতে হবে। যাদের নিয়ে আমরা প্রত্যাশা করছি, তারা কি আন্তর্জাতিক মানের কি না, এই পার্থক্যটা দেখতে হবে। সেই মানটা আনতে হবে।’
তবে জালাল ইউনুস এই পরাজয়কে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় বিপর্যয় বলতে রাজি নন। তিনি উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের অতীত সাফল্যকে টেনে আনলেন। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিজেদের মাটিতে আফগানদের মতোই এক ম্যাচ বাকি থাকতে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল। যত সাফল্যের উদাহরণ দিন, আফগানদের বিপক্ষে এই ব্যর্থতা মানতে পারছেন না জালাল, ‘না, এটাকে বিপর্যয় বলব না। নিজেদের মাঠে যখন পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকাকে আমরা হারিয়েছিলাম, তারাও প্রত্যাশা করেনি এভাবে আমাদের কাছে হারবে। ক্রিকেটে এটা হতেই পারে। তবে এবার হারের ধরনটা ঠিক নেই। প্রত্যাশা করিনি পর পর দুই ম্যাচ হেরে যাবে। প্রথম ম্যাচটা খারাপ খেলেছি, সেটি শুধরে নিয়ে হয়তো পরের ম্যাচটা ভালো খেলতে পারতাম। সেটি হয়নি। দুটি ম্যাচই হেরেছি। সন্দেহ নেই, টি-টোয়েন্টিতে এখন তারা অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ। এই সিরিজে তারাই ফেবারিট ছিল। তবে যেভাবে হেরেছি, এটা মানতে পারছি না।’
আফগানদের কাছে সিরিজ হারলেও সাকিবদের ওপর আস্থা হারাচ্ছেন না বিসিবি। জালাল ইউনুসের প্রত্যাশা, এই ধাক্কা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আবারও ভালো করবে, ‘অতীতে এরাই অনেক বড় সাফল্য এনে দিয়েছে। হঠাৎ বলতে পারেন না ভবিষ্যতেও এমন খারাপ করবে। তাদের প্রতি নেতিবাচক ভাবনা নেই আমাদের। আশা করি, এরাই ভবিষ্যতে ভালো করবে। আগামী বছর বিশ্বকাপ আছে। একটা সিরিজে হেরে গেছি মানে এই নয় যে সামনেও খারাপ করব। এখান থেকে তাদের শিক্ষা নিতে হবে। কারা কী খেলছে, আমার মনে হয় সেদিকেও নির্বাচকদের নজর দেওয়া উচিত। উপযুক্ত খেলোয়াড়েরাই যেন সুযোগ পায়, সেদিকে নজর দিতে হবে।’
তার মানে এবার সঠিক নির্বাচন হয়নি? এ প্রশ্ন তোলার সময় অবশ্য এখন নয়। সিরিজ তো গেছেই, কোনোভাবে ধবলধোলাই এড়িয়ে এখন সিরিজ ২-১ করে ফিরতে পারলেই যেন বাঁচে বাংলাদেশ!