>পাকিস্তানের বিপক্ষে আজ মাঠে নামবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সমর্থকেরা নিশ্চয় তাকিয়ে থাকবে আন্দ্রে রাসেলের দিকে।
সুনীল গাভাস্কার ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন জ্যামাইকায়। স্থানীয় ক্লাব ম্যাচে দেখতে গিয়েছিলেন শখ করে। আন্দ্রে রাসেল নামের লিকলিকে বালককে বোলিং-ব্যাটিং করতে দেখে চোখ আটকে যায় ভারতীয় কিংবদন্তির। লিকলিকে ওই ছেলের মধ্যে বিশেষ কিছু আছে, প্রথম দেখাতেই বুঝে গিয়েছিলেন গাভাস্কার। ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপে রাসেলকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সিতে দেখে স্টার স্পোর্টস চ্যানেলে গল্পটা বলেছিলেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক।
জহুরির চোখ ঠিকই জহর চিনেছিল! সেটা এখনকার রাসেলের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাসেল এখন অনেক পরিণত। বিশ্বের ভয়ংকরতম অলরাউন্ডারদের একজন। নিজেই নিজের ডাকনাম দিয়েছেন ‘ড্রে রাস’! নামটি শুনলেই বোলারদের দুকান দিয়ে যেন ধোঁয়া বের হয়!
আজকাল শরীর তাক করা শর্ট বলটা একটু এদিক-ওদিক হলেই বোলারদের আর রক্ষা নেই! যে বলটি রাসেলের ‘জীবন’ নিতে করেন বোলার, সেটি স্কয়ার লেগ কিংবা মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে রাসেল সমর্থকদের দেন বিনোদন! জ্যামাইকান অলরাউন্ডারকে কোথায় আর কেমন বলই-বা করবেন বোলাররা। নিখুঁত ইয়র্কার দিয়েও কি পার পাওয়া যাচ্ছে তাঁর কাছ থেকে!
জস বাটলার, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের মতো ৪৫ ডিগ্রিতে স্কুপ খেলেন না রাসেল। ছক্কা হাঁকান মৌলিক ব্যাটিং কৌশল মেনে। তবে রাসেলের ভারী ব্যাটের কোনায় লাগলেও লং অন বাউন্ডারি ছাড়িয়ে যায় সাদা কুকাবুরা। সামনের পা সরিয়ে ব্যাটের বেসবল সুইংটা জুতসই হলেই হলো। ওয়াইড লাইন ইয়র্কার দিয়েও পার পাওয়া দুষ্কর। লং হ্যান্ডেলে চাবুকের মতো ব্যাট চালিয়ে পয়েন্ট বাউন্ডারি, আবার কখনো এক্সট্রা কাভার দিয়ে বোলারদের সীমানাছাড়া করেছেন বহুবার। আর লেংথ বল, স্লোয়ার বলগুলো পড়তে পারলে বল বাউন্ডারি ছাড়াবেই।
সদ্য শেষ হওয়া আইপিএলে এমন ব্যাটিং টুর্নামেন্টের সবচেয়ে মূল্যবান ক্রিকেটারের খেতাব দিয়েছে। ১৩ ইনিংসে মোট বল খেলেছেন মোট ২৪৯টি, ২০৪ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ৫১০। ছক্কা মেরেছেন ৫২টি, চার ৩১টি। এমন ছক্কাবাজির জন্য তো কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন রাসেলই ছক্কার নতুন রাজা। গেইলকে ছাড়িয়ে ছক্কার নতুন রাজা তাঁকে অনেকে হয়তো মানবেন না। তবে গেইলের মতো একজন মহাতারকা দলে থাকার পরও পাদপ্রদীপের আলো রাসেলের ওপর পড়ছে। শুধু কি ব্যাটিং? বল হাতেও উজ্জ্বল রাসেল। ৫১ ইনিংসে ৩২ গড়ে ৬৫ উইকেট পাওয়া সেটাই প্রমাণ করে।
আইপিএল শেষ হয়েছে। তবে আইপিএল সুইচ বন্ধ করেননি ৩১ বছর বয়সী এই তারকা অলরাউন্ডার। গত মঙ্গলবার ব্রিস্টলে ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের বিপক্ষে গা গরম করেছেন ২৫ বলে ৫৪ রানের ইনিংসে। ক্যারিবীয়দের স্কোরও ৪০০ ছাড়িয়েছে এতে। ৭টি চারের তুলনায় ৩টি ছক্কা রাসেলের জন্য কমই বলা যায়। অথচ কে বলবে, ২০১৫ সালের পর মাত্র একটি ওয়ানডে খেলেছেন রাসেল, সেটাও আবার এক বছর আগে, বাংলাদেশের বিপক্ষে।
অবিশ্বাস্য এই ফর্মের পেছনের রহস্য জানিয়েছেন রাসেল, ‘ক্রিস গেইল আমার জীবন বদলে গিয়েছে। আমি আগে হালকা ব্যাট ব্যবহার করতাম, ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় তিনি বলেছিলেন, “তুমি এর চেয়ে ভারী ব্যাট ব্যবহার করতে পারো। তোমার উচিত বড় আর ভারী ব্যাট ব্যবহার করা।” সেই থেকে ভারী ব্যাটে খেলছেন রাসেল। আজও কি তাঁর ভারী ব্যাটে বেসবল সুইংটা ঠিকঠাক হবে? তাহলে যে ত্রাহি অবস্থাই হবে পাকিস্তানের বোলারদের!