‘মাথা ঠান্ডা’, 'ধৈর্য', ‘শেষ করে এসো', ‘লম্বা কর’, ‘পাগলা’— এ শব্দ গুলো খুব আবেগ দিয়ে বলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ট্রেনার রিচার্ড স্টনিয়ার। পুরো দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ জুড়ে নানা ভাবে দলকে চাঙা রাখার কাজ করে গেছেন রিচার্ড। কখনো ডাগ আউট থেকে, কখনো অনুশীলনে কঠিন কঠিন শরীর চর্চা করিয়ে। তাঁর সঙ্গে কাজ করে যুবাদেরও জীবন বদলে গেছে। আমূল পরিবর্তন এসেছে তাদের ফিটনেসে।
বিশ্বকাপ থেকেই এই ইংলিশ ট্রেনারকে নিয়ে যত আলোচনা। বিশ্বকাপ জয়ের পর পুরো বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁর প্রকাশিত ভিডিওটি স্টনিয়ারকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন যুব বিশ্বকাপ ও বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা —
প্রশ্ন: বাংলা শব্দ গুলো শিখলেন কীভাবে?
রিচার্ড স্টনিয়ার: ছেলেদের সঙ্গে সহজে মিশে যেতে যা দরকার তাই করতে রাজি আমি। ওরা দেখলাম ম্যাচের সময় এই শব্দ গুলোই বেশি ব্যবহার করে। সেখান থেকে শুনতে শুনতে হয়ে গেল।
প্রশ্ন: অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ছেলেরা আপনাকে ‘ভাই’ ডাকে...
স্টনিয়ার: আমি তো তাদের ভাই! এটাই ওদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক এবং আমি পছন্দ করি। ওদের আমি পিঠে হাত রেখে উৎসাহ দিই। ওরা আমাকে সম্মান করে। আমরা দুই পক্ষই কঠোর পরিশ্রম করি। এটাই তো চাই।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপে সাফল্যের পেছনে দলের ফিটনেসের বিরাট অবদান। সে জন্য অনেকটা কৃতিত্ব আপনাকে দিতে হচ্ছে...
স্টনিয়ার: ফিটনেসে উন্নতি এসেছে কিন্তু শুধু এটাই সবকিছু না। শিরোপা জিততে হলে সব বক্সে টিক চিহ্ন পড়তে হয়। সেটা তখনই হয় যখন আমরা সবাই যারা আছি, সাপোর্ট স্টাফ হিসেবে, যদি নিজেদের কাজটা ঠিকমতো করি। তবে এই ছেলেরা ফিটনেসের দিক থেকে গত ১৮ মাসে ছেলে থেকে পুরুষে পরিণত হয়েছে। ওদের জীবন ধারণ প্রক্রিয়া, অভ্যাস বদলে গেছে।
প্রশ্ন: ক্রিকেট তো শুধুই শারীরিক ফিটনেসের খেলা নয়, মানসিকও। এ দিকটা নিয়ে কী আপনি কাজ করেছেন ছেলেদের সঙ্গে?
স্টনিয়ার: বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকেট ৭০ ভাগই মানসিক খেলা। আপনি কীভাবে দেখছেন খেলাটাকে সেটাই আসল। বাকি ৩০ ভাগ শারীরিক। দুটি বিষয় এক হতে হবে। আমরা ওদের মধ্যে সেই জ্ঞান ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন: অনূর্ধ্ব-১৯ দলের একটি ফিটনেস সেশন কেমন যেত, ছেলেরা কীভাবে গ্রহণ করত?
স্টনিয়ার: আমি নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করি, ফিটনেস অনুশীলনে। মাঝে মাঝে খুবই ক্লান্ত লাগবে, মাঝে মাঝে অতিরিক্ত মনে হবে। কিন্তু এটাই আমার কাজের ধরন। কিন্তু ওরা আমাকে গ্রহণ করেছে, আমার কাজকে গ্রহণ করেছে। এদিক থেকে আমি ভাগ্যবান।
প্রশ্ন: প্রতিটি ম্যাচেই দলের ডাগ আউটে আপনাকে খুবই প্রাণবন্ত মনে হয়েছে। দলকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা ছিল চোখে পড়ার মতো।
স্টনিয়ার: ডাগ আউটে এত কিছু করা ক্রিকেটারদের উৎসাহিত করার জন্য। এটা আমার পদ্ধতি। আমি এভাবেই কাজ করি। ছেলেরা যদি আমাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়, তাহলে আমি অনেকটা তাদের দ্বাদশ খেলোয়াড়ের কাজ করে দিলাম।
প্রশ্ন: অধিনায়ক আকবর আলীকে কেমন লেগেছে?
স্টনিয়ার: আমি সেদিন একটা মেইল পেয়েছি, নিউজিল্যান্ড কোচিং স্টাফের কাছ থেকে। ওরা বলছিল, এবারের বিশ্বকাপে আকবর ছিল সবচেয়ে কৌশলী অধিনায়ক। সে অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা। সে খুবই সৎ মানুষ এবং খুবই কঠোর পরিশ্রমী।
প্রশ্ন: শিরোপা জয়কে কীভাবে দেখছেন?
স্টনিয়ার: এটা আসলে ছেলেদের জন্য। শুধু যারা বিশ্বকাপ দলে ছিল তাঁরা নয়, পুরো প্রক্রিয়ায় যারা যারা ছিল, তাঁরা সবাই একজন আরেকজনকে প্রতিদিন উন্নতি করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছে। এটাই আসল। আমি তাদের কাছে এটাই চেয়েছি। দেখুন, আমি বাংলাদেশি না, আমি ইংল্যান্ডের। কিন্তু এখানে মিশে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত। আমি আশা করি ফিটনেস পরিবর্তনের ভিন্ন পথ দেখিয়েছি এখানে। এটা অবশ্যই স্বল্পকালীন প্রক্রিয়া নয়। এটা দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। বিশ্বকাপ জয় করা হয়েছে আমাদের। এটা এমনি এমনি হয়ে যায়নি। আমরা এখন এক নম্বর। এটাও মাথায় রাখতে হবে, বিশ্বকাপ তো শেষ। আমাদের পরের ধাপ নিয়ে ভাবতে হবে।