ক্রিকেটে আম্পায়ার বলতেই তো ভারিক্কি চেহারার কারও ছবি ভেসে ওঠে সবার চোখের সামনে। কিংবা সৌম্য-দর্শন কেউ। কড়া ব্যক্তিত্বের সেই মানুষটি হাতের ইশারায় বিচার করেন। চার-ছয়ের সংকেত দেন, কিংবা অঙ্গুলি হেলনে রায় জানান ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে। কড়া দৃষ্টিতে নজর রাখেন বোলারের পায়ের দিকে। যার রায়ই চূড়ান্ত, তাঁর প্রতি অন্যরকম এক সমীহ কাজ করে খেলোয়াড়দের। দূর অতীতের আম্পায়াররা তো বটেই, ডিকি বার্ড, ডেভিড শেফার্ড, ড্যারেল হেয়ার, স্টিভ বাকনররা নিজেদের ব্যক্তিত্ব দিয়েই সেই সমীহের ব্যাপারটি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। একটা সময় নিউজিল্যান্ডের আম্পায়ার বিলি বাউডেন তাঁর অদ্ভুত ভঙ্গিমা দিয়ে নজর কেড়েছিলেন। কিন্তু গতকাল আইপিএলে দেখা গেল দীর্ঘ চুলের এক আম্পায়ারকে। যেমনটা ক্রিকেট ইতিহাসে আগে কখনো দেখা গেছে কিনা, এ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
কাল আবুধাবিতে আইপিএলের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। শ্বাসরুদ্ধকর এই ম্যাচ ডেভিড ওয়ার্নারের রেকর্ড, সুপার ওভারের উত্তেজনা, লকি ফার্গুসনের গতি, জয়-পরাজয়ের ব্যাপার-স্যাপার ছাপিয়ে আলোচিত নতুন কেতার এক আম্পায়ারের জন্য। আবুধাবিতে কাল ম্যাচের আগেই দর্শকদের চোখ স্থির ছিল ওয়ার্নার-মরগানদের দিকে নয়, পশ্চিম পাঠক নামের লম্বা চুলের সেই আম্পায়ারের দিকে। সামাজিক যোগাযোগ আলোচনা জমজমাট—পশ্চিম পাঠকই ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম লম্বা চুলের আম্পায়ার কিনা!
কাঁধ ছড়ানো কোঁকড়া চুল। তুলনামূলক লম্বা গড়ন, চোখ সানগ্লাস—রীতিমতো রক সংগীতের তারকাদের মতো স্টাইল। মনে হচ্ছিল, যেন 'গানস অ্যান্ড রোজেস' এর কোনো কনসার্ট শেষ করেই পাততাড়ি মাঠে আম্পায়ারিং করতে নেমে গেছেন কিংবদন্তি লিড গিটারিস্ট - স্ল্যাশ। অনেক ক্রিকেটপ্রেমীই তা দেখে সেই অতীতের ডেভিড শেফার্ড, ডিকি বার্ডদের কথা চিন্তা করে অবাক হচ্ছিলেন। সত্যিই এই পশ্চিম পাঠক যেন ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছেন আইপিএলে, ক্রিকেট খেলাটিতে তো বটেই।
কে এই পশ্চিম পাঠক? তাঁর আম্পায়ারিং ক্যারিয়ার ঘাঁটতে গিয়ে দেখা গেল তিনি মোটেও নতুন কেউ নন। ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেটে গত এক যুগ ধরেই যথেষ্ট পরিচিত মুখ তিনি। ২০০৯ সাল থেকে আম্পায়ারিং করছেন। তবে মাঠেই লাইমলাইটটা কেড়ে নেওয়ার ব্যাপারে তাঁর অতীত খ্যাতি রয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেটে তিনিই প্রথম আম্পায়ার, যিনি হেলমেট পরে ম্যাচ পরিচালনা করতে নেমেছিলেন সেই ২০১৫ সালে। ২০১৪ সালে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার ফিল হিউজ বলের আঘাতে মারা যাওয়ার পর ক্রিকেট দুনিয়ায় বড় ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। যা নাড়া দিয়েছিল পশ্চিম পাঠককেও। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছিল, যে হেলমেটের নকশাও বদলে যায় তাতে। ওই ঘটনার পরপরই ভারতে অনুষ্ঠিত একটি ম্যাচে এই পশ্চিম পাঠক আম্পায়ারিংয়ে হেলমেট পরে নেমে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলেন। তাঁকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল সে সময়ও।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনো পর্যন্ত মেয়েদের ২টি ম্যাচ পরিচালনা করেছেন তিনি। তবে ভারতে অনুষ্ঠিত ২টি টেস্ট ও ৩টি ওয়ানডেতে তিনি ছিলেন রিজার্ভ আম্পায়ার। আইপিএলে এবারই প্রথম তিনি আম্পায়ারিং করছেন না। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে দুটি আসরে ৪টি করে ম্যাচে মাঠের আম্পায়ার ছিলেন পশ্চিম।
কালকের পর তিনি বড় তারকা—এটা কিন্তু বলাই যায়।