আচ্ছা, ঋষভ পান্তের ওই শটটা কি পা দিয়ে ঠেকানোর খুব দরকার ছিল? আপনাকে অন্তত পায়ের চোটে পড়তে হতো না; আর এখন বাংলাদেশ দলের বাইরে থাকতে হতো না! কথাটা শুনে অবাক চোখে তাকালেন মোস্তাফিজুর রহমান। আজ একাডেমি মাঠের ছাউনিতে বসে যে সাংবাদিক প্রসঙ্গটা তুললেন, তাঁকে বাঁহাতি পেসারের উত্তর, ‘আপনি যখন লেখেন, ইচ্ছে করে কি কোনো শব্দ বা বাক্য ভুল লিখতে পারেন?’
ঠিক, ইচ্ছে করে কেউ চোটে পড়েন না। পাকেচক্রে পড়ে যান। মোস্তাফিজেরও একই অবস্থা। তিন বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে বারবার তাঁর অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়েছে চোটের কারণে। জাতীয় দলের হয়ে ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই যাঁর অভিষেক দুর্দান্ত, সেই মোস্তাফিজ ধারাবাহিক ছন্দে এগোতে পারেননি শুধু চোটের কারণে। এ বছরের শুরু থেকেই চোটমুক্ত হয়ে খেলছিলেন। আইপিএলে একেবারে নিজেদের শেষ ম্যাচে এসে পেলেন চোট। যে চোটের কারণে খেলতে পারেননি আফগানিস্তান সিরিজে। এক সাংবাদিক তো প্রশ্নই করে বসলেন, দুবার এই টুর্নামেন্ট থেকে চোট নিয়ে ফিরেছেন। আইপিএল কি আপনার জন্য কুফা? ‘খেলতে গেলে এমন হয়। আমার কপালে ছিল বলেই এমনটা হয়েছে’—মোস্তাফিজ কোনোভাবে পাশ কাটিয়ে যেতে চান প্রসঙ্গটা।
বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বড় আফসোস নিয়ে কদিন আগে বলছিলেন, ‘আফগানদের বিপক্ষে দেরাদুনের উইকেটে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হতে পারত মোস্তাফিজ! অথচ সে খেলতেই পারল না।’ আফগান সিরিজ তো গেছেই। মোস্তাফিজ অনিশ্চিত আগামী মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও। জানালেন, তিনি চেষ্টা করছেন ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে ফিরতে, ‘চোটে পড়েছি, চেষ্টা করছি কীভাবে সেরে ওঠা যায়। যে কাজ দিয়েছে চেষ্টা করছি, সেগুলো ঠিকঠাক করতে। যেন তাড়াতাড়ি ফিরতে পারি।’
চোটের সঙ্গে লড়াই করতে করতে মোস্তাফিজ যে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, সেটি তাঁর অভিব্যক্তিতেই পরিষ্কার। চোটে না পড়লে ছোট্ট ক্যারিয়ারটা যে আরও উজ্জ্বল থাকত, সেটি নিয়ে খানিকটা আফসোস হয় মোস্তাফিজের, ‘আফসোস থাকারই কথা। সব খেলোয়াড়ই চায় ধারাবাহিক খেলে যেতে। কেউ তো ইচ্ছে করে চোটে পড়ে না। চেষ্টা করি সব সময়ই ফিট থাকতে। হয়ে (চোট) গেলে কিছু করার নেই।’
আজ সন্ধ্যায় সাতক্ষীরায় ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছেন মোস্তাফিজ। নিজেই বললেন, ঈদের আনন্দটা তাঁর পূর্ণতা পেত যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে দলে থাকতে পারতেন, ‘বাড়িতে অনেক দিন পর যাচ্ছি। বাড়িতে গেলে সব সময়ই ভালো লাগে। বাবা-মা, পরিবারের সবাই থাকবে। যদি টেস্ট দলে থাকতাম, তাহলে আরও বেশি ভালো লাগত। এখন শুধু পরিবার নিয়েই থাকতে হবে।’
অন্তর্মুখী স্বভাবের মোস্তাফিজ কথা কম বলেন, নিজের অনুভূতি প্রকাশে বরাবরই তাঁর অনীহা। আজ সংবাদমাধ্যমের সামনে এলেন অনেক অনুরোধের পর। এক-দুই কথায় মোস্তাফিজ তবুও কিন্তু বলে ফেললেন, বাংলাদেশ দলে খেলতে না পারলে তাঁর ঈদের আনন্দেও আসে না পূর্ণতা!