একদিক থেকে রমিজ রাজার কথাটা ‘মার্কেটিং’য়ের বড় একটা চালই বটে!
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যানের কথাটাকে হয়তো অনেকের কাছে আত্মদম্ভ বলেই মনে হবে। রমিজ সোজা বলে দিয়েছেন, পিএসএলে ড্রাফট পদ্ধতি অনুসরণ না করে নিলাম প্রক্রিয়া চালু করলে ক্রিকেটাররা আইপিএল নয়, বরং পিএসএলকেই প্রাধান্য দেবেন। কিন্তু সেটি ‘মার্কেটিং’য়ের চাল কেন?
কথা নয়, যেন টোপ দিয়েছেন রমিজ! বিতর্ক তুলেই হোক, এরপর থেকেই যে আইপিএলের সঙ্গে পিএসএলের তুলনাটাকে সবার আলোচনার বিষয় বানিয়ে দিয়েছেন পিসিবি চেয়ারম্যান।
আকাশ চোপড়ার মতো ভারতের সাবেক ক্রিকেটাররা আইপিএল কেন সেরা, সেটি তুলে ধরছেন। পাকিস্তানের ক্রিকেটপ্রেমীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেটির কড়া জবাবও দিচ্ছেন। তবে পাকিস্তানের দিক থেকেই এবার আইপিএলের প্রশংসা আর পিএসএলের সমালোচনা এল। করেছেন পাকিস্তানের সাবেক লেগ স্পিনার দানিশ কানেরিয়া।
কানেরিয়ার চোখে, আইপিএল অনেক পেশাদার একটা টুর্নামেন্ট। ভারতের ক্রিকেটকে দারুণ প্রতিভাসহ অনেক কিছুই এনে দিয়েছেন সময়ের সবচেয়ে জৌলুশপূর্ণ টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগটি। তুলনায় পিএসএল থেকে পাকিস্তানের ক্রিকেট কী পেল, সেই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছেন কানেরিয়া। সেটির পেছনে অবশ্য পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডের দুর্নীতিকেই দায়ী করছেন বেশি।
‘আইপিএল একটা পেশাদার ইভেন্ট, ভারতের ক্রিকেটে কত প্রতিভা এনে দিয়েছে সেটি। প্রতি মৌসুমেই আগের চেয়ে আরও ভালো হচ্ছে টুর্নামেন্টটা। অথচ উল্টো দিকে পাকিস্তানের ক্রিকেটের জন্য পিএসএল বলতে গেলে কিছুই করছে না’—কানেরিয়াকে উদ্ধৃত করে লিখেছে হিন্দুস্তান টাইমস।
কেন এমন মনে হচ্ছে, সেটির ব্যাখ্যাও দিয়েছেন কানেরিয়া, ‘পিএসএলে কোনো খেলোয়াড় যদি খুব ভালো খেলেও, পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডের অপেশাদার আচরণের কারণে সেই খেলোয়াড়ের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।’
পাকিস্তানের হয়ে ৬১ টেস্ট ও ১৮ ওয়ানডে খেলা কানেরিয়ার অবশ্য আইপিএল বা পিএসএল কোনোটিতেই খেলা হয়নি। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ কী, পাকিস্তানের জার্সিতেই কখনো টি-টোয়েন্টি খেলা হয়নি তাঁর। সর্বশেষ টেস্ট ২০১০ সালে খেললেও আন্তর্জাতিক ওয়ানডে অধ্যায় ২০০৭ সালের মার্চেই শেষ হয়ে গেছে কানেরিয়ার। তখনো আইপিএলই শুরু হয়নি, পিএসএলের বয়স তো ২০০৮ সালে শুরু আইপিএলেরও সাত বছর কম!
তা কোনোটিতে না খেললেই যে দুটির তুলনা করা যাবে না, এমন তো কোনো কথা নেই! পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডের প্রতি সব সময়ই বীতশ্রদ্ধ কানেরিয়ার ব্যাখ্যায় পিসিবিকেও যে দোষারোপ করবেন, সেটিও হয়তো আশ্চর্যের কিছু নয়।
তবে পাকিস্তানের দিক থেকে নজর সরিয়ে যখন দুদিন আগে শুরু আইপিএলের এবারের সংস্করণ নিয়ে আলোচনায় ফেরে, সেখানেও কানেরিয়ার কিছু বিশ্লেষণ আছে। সেটি কী? প্রশ্ন যখন এবারের সম্ভাব্য শিরোপাজয়ী নিয়ে, ‘টি-টোয়েন্টিতে কেউই ফেবারিট নয়’—আপ্তবাক্যে আড়াল টানেন কানেরিয়া। শুধু মুম্বাই ইন্ডিয়ানস আর চেন্নাই সুপার কিংসের নাম আলাদা করে বলেছেন তিনি।
‘দেখুন, টি-টোয়েন্টি সংস্করণে কোনো ফেবারিট নেই। তবে আমরা যদি দলীয় সমন্বয়ের কথা বলি, তাহলে চেন্নাই সুপার কিংস আর মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের কথা বলব। এই দুটি দল ভালো। নতুন দুটি দলও আছে এবারের সংস্করণে, তাদেরও তো হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই’—কানেরিয়ার বিশ্লেষণ।
এরপরই আবার আইপিএলের শ্রেষ্ঠত্বের ইঙ্গিত তাঁর কণ্ঠে। সেখানে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ বাদ দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের আইপিএলে খেলতে যাওয়ার প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন কানেরিয়া, ‘আইপিএল এমন একটা টুর্নামেন্ট যেখানে খেলতে ক্রিকেটাররা উন্মুখ হয়ে থাকে। এই দেখুন, দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক ক্রিকেটারই তাদের জাতীয় দল থেকে ছুটি নিয়েছে আইপিএল খেলার জন্য। তার মানে এই টুর্নামেন্টটা প্রতিবছরের ক্যালেন্ডারে একটা বড় ইভেন্ট হয়ে উঠেছে।’