ক্রিকেট ধারাভাষ্যে বিশ্লেষণের পাশাপাশি সুগভীর রসিকতাও করতে জানেন সুনীল গাভাস্কার। কিন্তু কয়েক মাস ধরে এই গাভাস্কারকে দেখা গেছে খুব কমই। অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় কারণে জড়িয়েছেন কথার লড়াইয়ে।
পরশু আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালস ও লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস ম্যাচের বিরতিতে সেই রসিক গাভাস্কারকে দেখা গেল অনেক দিন পর। ওয়েলশের ধারাভাষ্যকার অ্যালান উইলকিনসের কাছে কোহিনুর হীরা ফেরত চেয়ে বসলেন ভারতীয় কিংবদন্তি।
ধান ভানতে শিবের গীত মনে হতে পারে। আইপিএলের মধ্যে হঠাৎ কোহিনুর হীরার প্রসঙ্গ কেন? খুলে বলা যাক। ম্যাচে বিরতি চলাকালীন গাভাস্কার ও উইলকিনসের কথা বলার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
মুম্বাইয়ে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের পাশেই দর্শনীয় মেরিন ড্রাইভ রাতের আলোকসজ্জায় দেখতে দারুণ লাগে। টিভি ক্যামেরা মেরিন ড্রাইভে ধরতে গাভাস্কারকে এর সৌন্দর্য নিয়ে কিছু বলার অনুরোধ করেন উইলকিনস। এরপরই খোঁচাটা মারেন গাভাস্কার।
মেরিন ড্রাইভকে ‘রানির কণ্ঠহার’-এর সঙ্গে তুলনা করেন উইলকিনস। ভারতের সাবেক অধিনায়ক এরপর বলেন, ‘রানির কণ্ঠহার...আমরা অবশ্য এখনো কোহিনুরের অপেক্ষায় আছি।’ এটুকু বলেই হো হো করে হাসিতে ফেটে পড়েন দুজন। গাভাস্কারের রসিকতাজ্ঞান খ্যাতিমান এই সম্প্রচারকের কাছে অচেনা নয়। উইলকিনস বলেন, এমন কিছু যে গাভাস্কার বলবেন, আগেই বুঝতে পেরেছেন। তবে গাভাস্কার এখানেই থামেননি। উইলিকনসকে বলেন, ‘তুমি একটু প্রভাব খাটিয়ে ব্রিটিশ সরকারকে কোহিনুর ফেরত দেওয়ার বিষয়ে সাহায্য করতে পারো।’
গাভাস্কার-উইলকিনসের এই রসিকতা উপভোগ করেছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। একজনের মন্তব্য, ‘শুধু গাভাস্কারই জাতীয় টিভিতে ইংরেজ ধারাভাষ্যকারদের কাছে ভারত থেকে তাদের সরকারের চুরি করা কোহিনুর হীরা ফেরত চাইতে পারেন। আমার সন্ধ্যা সার্থক।’ আরেকজনের মন্তব্য, ‘উইলকিনস মেরিন ড্রাইভকে রানির কণ্ঠহারের সঙ্গে তুলনা করার পর সুনীল গাভাস্কার ব্রিটিশদের নিয়ে যাওয়া কোহিনুর ফেরত চেয়েছেন। অসাধারণ।’
ষোড়শ শতাব্দীতে মালওয়ার রাজাদের কাছ থেকে মোগলদের হাতে আসে কোহিনুর হীরা। সেখান থেকে আফগানিস্তানের সম্রাটের হাত ঘুরে কোহিনুর পান পাঞ্জাবের রাজা রণজিৎ সিং। কোহিনুর খচিত হয়েছে ব্রিটেনের রানির মুকুটে। ভারত সরকার ২০১৬ সালের এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্টকে বলেছিল, যুক্তরাজ্য কোহিনুর হীরা চুরি করেনি অথবা জোর করে নেয়নি। তৎকালীন পাঞ্জাবে ক্ষমতায় থাকা মহারাজা রণজিৎ সিংহের উত্তরাধিকারীরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে এটি উপহার দিয়েছিলেন।
তবে সরকারের এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই)। তাঁরা দাবি করেন, ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়াকে কোহিনুর দিতে বাধ্য হয়েছিলেন লাহোরের মহারাজা। এএসআই বলেছে, লর্ড ডালহৌসি ও মহারাজা দুলিপ সিংহের মধ্যে ১৮৪৯ সালে লাহোর চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী লাহোরের মহারাজা ওই কোহিনুর হীরা ইংল্যান্ডের রানিকে দিতে বাধ্য হন।
সে যা-ই হোক, কোহিনুর বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কাটা হীরা। এই নামের অর্থ ‘আলোর পাহাড়’। ওজন ১০৫ দশমিক ৬ ক্যারেট।