অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আফগানিস্তানের অস্ট্রেলিয়া সফর
অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আফগানিস্তানের অস্ট্রেলিয়া সফর

অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট খেলতে হলে মেয়েদের ক্রিকেট খেলতে দিতে হবে আফগানিস্তানকে

করোনার কারণে গত বছর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট খেলতে পারেনি আফগানিস্তান। দেরিতে হলেও সেই স্বপ্নটা এবার পূরণ করার অপেক্ষায় ছিল আফগানরা। কিন্তু দেশটির রাজনৈতিক অদলবদল আবারও ধূসর করে দিয়েছে সেই স্বপ্ন। তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর রাতারাতি পাল্টে গেছে পরিস্থিতি।  তালেবানের সংস্কৃতিবিষয়ক কমিশনের উপপ্রধান আহমাদুল্লাহ ওয়াসিক এক সাক্ষাৎকারে বলে দিয়েছেন মেয়েদের ক্রিকেট খেলতে দেওয়া হবে না।

ওয়াসিকের কথা শোনার পর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড জানিয়ে দিয়েছে তালেবান নারীদের ক্রিকেট খেলতে না দিলে বাতিল করা হবে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় দুই দলের প্রথম টেস্টটি। ২৭ নভেম্বর থেকে তাসমানিয়ার হোবার্টে শুরু হওয়ার কথা ম্যাচটি।

আফগানিস্তানে মেয়েরা ক্রিকেট খেলতে পারবে না, সংবাদমাধ্যমে আসা এই খবর সত্যি হলে হোবার্টে অনুষ্ঠেয় আফগানিস্তানের টেস্ট বাতিল করে দেওয়া ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প থাকবে না
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া

আজ এক বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। সিএ মেয়েদের ক্রিকেট কতটা গুরুত্ব দেয় তা তুলে ধরা হয়েছে বিবৃতিতে, ‘ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কাছে মেয়েদের ক্রিকেটকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। ক্রিকেট নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো এটা সবার খেলা। আমরা যেকোনো পর্যায়ের মেয়েদের ক্রিকেটের পাশে আছি।’

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এরপরই জানিয়ে দিয়েছে আফগানিস্তানে মেয়েরা ক্রিকেট না খেলতে পারলে কী হবে সেটি, ‘আফগানিস্তানে মেয়েরা ক্রিকেট খেলতে পারবে না, সংবাদমাধ্যমে আসা এই খবর সত্যি হলে হোবার্টে অনুষ্ঠেয় আফগানিস্তানের টেস্ট বাতিল করে দেওয়া ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প থাকবে না।’

শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ চেয়ে কাবুলে বিক্ষোভ করেছে আফগান নারীরা

এই বিষয়ে আগেই নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার ও তাসমানিয়ার রাজ্য সরকার। গত সোমবার রাজ্যের এক বাজেট শুনানিতে বক্তব্য দেওয়ার সময় তাসমানিয়ার সরকারপ্রধান গুটউইন বলেন, ‘এ রাজ্যের ম্যাচটা আয়োজন করা উচিত কি না, সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন আমি। সে দেশে মেয়েদের খেলার ভবিষ্যৎ কী, সে ব্যাপারে পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই আমাদের এখনো।’

ক্রিকেট অস্ট্রেলীয় ওই সময়েও বিবৃতি দিয়েছিল মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে, ‘মেয়েদের ক্রিকেট বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া নিজেদের নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় দেখে। আমাদের লক্ষ্য হলো ক্রিকেটকে সবার খেলা হিসেবে দাঁড় করানো। এ খেলার প্রতি পর্যায়েই ছেলে ও মেয়েদের আমরা সর্বাত্মক সমর্থন দিতে চাই।’

অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আফগান নারী ক্রিকেটের ভাগ্য

গতকাল অস্ট্রেলিয়ার এসবিএস নিউজকে সাক্ষাৎকার দেন তালেবানের সংস্কৃতিবিষয়ক কমিশনের উপপ্রধান আহমাদুল্লাহ ওয়াসিক। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয় না মেয়েদের ক্রিকেট খেলতে দেওয়া উচিত। কারণ, মেয়েদের ক্রিকেট খেলার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।’

আফগানিস্তানে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়ে আহমাদুল্লাহ ওয়াসিক বলেন, ‘ইসলাম ও ইসলামিক আমিরাত (আফগানিস্তান) ক্রিকেট কিংবা এমন কোনো খেলা, যেখানে তাঁদের শরীরের কোনো অংশ দৃশ্যমান হয়ে পড়ে, এমন কোনো খেলা খেলতে মেয়েদের অনুমতি দেয় না।’

ওয়াসিকের এই বক্তব্যের পর অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের ক্রীড়া মন্ত্রী সিনেটর রিচার্ড কোলবেক আইসিসিকে অনুরোধ করেন তালেবানের বিরুদ্ধে কথা বলতে। আফগানিস্তানের সদস্য পদ রাখা না রাখা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেও আইসিসিকে অনুরোধ করেন তিনি। অস্ট্রেলীয় মন্ত্রী জানিয়ে দেন আফগানদের বরণ করে নিতে তাঁদের কোনো সমস্যা নেই, তবে তালেবানের পতাকা নিয়ে যাওয়া কাউকে স্বাগত জানাবেন না তাঁরা।