অস্ট্রেলিয়ায় আলো ছড়ানো বুলবুল-পুত্রের স্বপ্নজুড়ে বাংলাদেশ

মাহদির হাতে সাফল্যের স্মারক। ছবি সংগৃহীত
মাহদির হাতে সাফল্যের স্মারক। ছবি সংগৃহীত

‘এবার সেরা পারফরম্যান্স ও শৃঙ্খলার জন্য জুনিয়র অ্যাম্বাসেডর পদক নিতে আসবেন মাহদি ইসলাম শুনেই গর্বে আর আনন্দে বুকটা ভরে গেল’—উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ৬ অক্টোবর নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল অনূর্ধ্ব-১৫ জুনিয়র ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড সিরিজ। সেই সিরিজের শিরোপা জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলীয় জুনিয়রদের এই সাফল্যে ভাগ আছে বাংলাদেশেরও! বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুলের ছেলে মাহদি যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে অস্ট্রেলিয়ার এ শিরোপা জয়ে।

ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৩৪ রান করে অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব–১৫ দলটি। অস্ট্রেলিয়ার দুর্দান্ত বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে ৭২ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব–১৫ দল। অস্ট্রেলিয়ার এই সাফল্যের গল্পে যার নাম ঘুরেফিরে আসছে, আমিনুলের ছেলে মাহদি। টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত অলরাউন্ডার হিসেবে দেখা গেছে তাকে। দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানও মাহদির।

যে খেলায় নিজের পরিচয় খুঁজে পান, সেই ক্রিকেটেই ছেলের সাফল্যে আনন্দের কমতি নেই আমিনুলের, ‘পুরো সিরিজজুড়ে মাহদি অসাধারণ খেলেছে। বাবা নয়, বরং পুরো সিরিজ মাঠে বসে একজন খেলোয়াড়ের চোখে দেখেছি। দেখেছি আর মুগ্ধ হয়েছি।’ এই অর্জন মাহদিকে সামনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে বলেই বিশ্বাস সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়কের, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন দেশের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা মাহদির বয়সের ছেলেমেয়েদের জন্য অনেক বড় পাওয়া। এই অভিজ্ঞতা আত্মবিশ্বাস তৈরিতে অনেক কাজে দেবে। আমার কাছে এটাই একটা সাফল্য।’ যে খেলা বাবার রক্তে, সেটিতে সাফল্য পেয়েছে। বাবার মুখে হাসি ফোটাতে পেরে উচ্ছ্বাসটা মাহদিরই বেশি, ‘ভালো লাগছে দলের জয়ে অবদান রাখতে পেরেছি। বাবাকে খুশি করতে পেরেছি সেটাই আমার কাছে বেশি আনন্দের।’

বাবার সঙ্গে সাফল্য ভাগাভাগি। ছবি: সংগৃহীত

মাহদির মাত্রই শুরু, তাকে যেতে হবে বহুদূর। সাফল্যের একেকটি বাঁক পেরিয়ে যদি এগিয়ে যেতে পারেন, তার চূড়ান্ত গন্তব্য হবে কোথায়? প্রশ্নটা আসছে এ কারণে, তাঁর শিকড় যে বাংলাদেশে। লাল–সবুজ জার্সিতে নিজেকে জড়ানোই কি তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্য? হ্যাঁ, আমিনুলের স্বপ্ন সেটাই, ‘প্রায়ই খুব মন খারাপ হয় এটা ভেবে যে ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এত অর্জনের পরেও বোর্ড এখনো ক্রিকেটার তৈরির দিকে তেমন মনোযোগ দিচ্ছে না। জাতীয় দলের ক্রিকেটার হওয়ার পর তাঁকে নিয়ে যত মাতামাতি, যেমন—মোস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু একজন ক্রিকেটারের বেড়ে ওঠার সুযোগটা আমার দেশে এখনো সেভাবে দেওয়া হয় না। মাহদি একজন খেলোয়াড় হিসেবে তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলার মতো যোগ্যতা অর্জন করার জন্য এখনো শিখে যাচ্ছে সে। আমি মনে-প্রাণে চাই, আমার দেশ একজন ভালো খেলোয়াড় পাক।’

আমিনুলের স্বপ্ন তো জানা হলো। মাহদি কী চায়? বাবার কথারই প্রতিধ্বনি ছেলের কণ্ঠে, ‘আমি অস্ট্রেলিয়ায় বেড়ে উঠেছি বলে এ দেশের কোনো দলের হয়ে খেলা শিখছি। ইংল্যান্ডে থাকলে সেখানে খেলতাম, বাংলাদেশে বাস করলেও সেখানে খেলতাম। আমি কোন দেশের খেলোয়াড়, এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমি কেমন খেলোয়াড়। পরিশ্রম করছি আরও ভালো খেলতে। তবে অবশ্যই বড় হয়ে বাংলাদেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখি।’

বিদেশ–বিভুঁইয়ে একটা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন আমিনুল। ধীরে ধীরে তৈরি করছেন ছেলেকে। স্বপ্ন পূরণের ব্যাপারটি সব সময় নির্ভর করে সময়ের ওপর। তবে পিতা-পুত্রের স্বপ্নযাত্রার শুরুটা হলো অসাধারণ।