অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে অমাবস্যার আঁধার। দলটির বর্তমান সময়ের খেলা দেখলে স্টিভ ওয়াহ কিংবা রিকি পন্টিংয়ের সেই স্বর্ণযুগ মনে পড়ে আক্ষেপ জাগাই স্বাভাবিক। অথচ চার বছর আগেও ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাবান ট্রফি বিশ্বকাপ কাউকে নিতে দেয়নি অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু গত দুই বছরের পারফরম্যান্স? আঁধার, স্রেফ অমাবস্যার আঁধার—কথাটা বলাই যায় ওয়াহ-পন্টিংদের সেই স্বর্ণযুগ বিচারে।
সর্বশেষ সাত ওয়ানডে সিরিজেই হেরেছে অস্ট্রেলিয়া। টেস্ট আর টি টোয়েন্টিতেও করুণ হালে নিমজ্জিত দলটি। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি টোয়েন্টি—ক্রিকেটের কোনো সংস্করণেই শীর্ষ তিনে নেই অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডের বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা এই সংস্করণে র্যাঙ্কিংয়ের ছয়ে! টেস্টে পাঁচে এবং টি টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে চারে। অথচ এই অস্ট্রেলিয়া দলই কয়েক বছর আগে বিদ্যুৎ-গতির ক্রিকেট খেলেছে। কী টেস্ট, কী ওয়ানডে, কী টি-টোয়েন্টি—সব সংস্করণেই বজ্রের দাপটে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করেছে তাঁরা। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে চলমান এই আঁধারের যখন কোনো ব্যাখ্যা মিলছে না, ঠিক তখনই ঘটল এক অদ্ভুত প্রতীকী ঘটনা।
অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া টি টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট বিগ ব্যাশে পরশু খেলা চলছিল সিডনি থান্ডার্স ও ব্রিসবেন হিটের মধ্যে। সিডনি থান্ডার্স আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪ উইকেটে ১৮৬ রান তোলে। ১৮৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩ ওভারে ২ উইকেটে ১০ রান তুলেছিল ব্রিসবেন হিট। এমন সময় নিভে গেল ফ্লাড লাইট! তাও, একটি নয় দু-দুটি ফ্লাড লাইট। এ যেন অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের পারফরম্যান্স। ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ দুটি সিরিজেই তো হেরেছে স্বাগতিকেরা—টেস্টের পর ওয়ানডেও। জাতীয় দলের আলোহীন এমন পারফরম্যান্সকেই তো মনে করিয়ে দেয় নিভে যাওয়া দুটি ফ্লাডলাইট।
ফ্লাড লাইট নিভে যাওয়ায় পূর্ণ পয়েন্ট পায়নি কোনো দল। পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়েছে। তাতে রাগ হওয়ারই কথা সিডনি থান্ডার্সের। কারণ জয়ের পথে এগিয়ে ছিল দলটি। আর পূর্ণ পয়েন্ট পেলে তালিকার দুইয়েও উঠে যেত ফ্র্যাঞ্চাইজি দলটি। ক্ষোভটা তাই ঢেকে রাখেননি সিডনি থান্ডার্সের ক্যালাম ফার্গুসন, ‘এটি খুবই হতাশাজনক। আমরা ২৩ ওভার প্রাধান্য বিস্তার করে খেললাম আর বিদ্যুৎ চলে গেল! অবশ্যই এটা জানা কথা যে, এ নিয়ে সামনে অনেক জল গড়াবে।’
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকেও বিষয়টি নজরে রাখা হয়েছে। তাদের ওয়েবসাইটে জানানো হয়, এই ঘটনা বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। অগ্রগতি সময়মতো জানিয়ে দেওয়া হবে। সে না হয় হলো। কিন্তু জাতীয় দলের পারফরম্যান্সেও তো আঁধার জমেছে। এখান থেকে দল আলোর পথে ফিরবে কবে? প্রতীকী অর্থে বলা যায়, বিশ্বকাপের আগে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ঘরে ‘কারেন্ট’ আসবে কবে?