ফিঞ্চের রানখরায় ভুগছেন অনেকদিন ধরেই
ফিঞ্চের রানখরায় ভুগছেন অনেকদিন ধরেই

অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ফিঞ্চ, অস্ট্রেলিয়ার বড় বোঝাও ফিঞ্চ

টেস্টে তিনি সুযোগই পান না। সেই ২০১৮ সালে ৫টি টেস্ট খেলেছেন, তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারও এখন পর্যন্ত পাঁচ টেস্টেরই। তবে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কত্ব তাঁর হাতে। কিন্তু সেই অধিনায়কত্বের কারণেই কি অস্ট্রেলিয়ার বোঝা হয়ে উঠছেন অ্যারন ফিঞ্চ?

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন তেমন হুঁশিয়ারিই দিচ্ছেন। ব্যাট হাতে বেশ রানখরায় ভুগছেন ফিঞ্চ, এমন অবস্থায় শুধু অধিনায়ক বলেই তাঁকে দলে নেওয়া ঠিক হবে না বলে মনে হচ্ছে ওয়াটসনের। এমন ফর্মের ফিঞ্চ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাঁকে অস্ট্রেলিয়ার বড় বোঝা বানিয়ে রাখবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন ওয়াটসন।

আইপিএলে মোস্তাফিজের দল দিল্লির সহকারী কোচ ওয়াটসন

১২ মাস ধরেই ফিঞ্চের ফর্ম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে অনেক। অস্ট্রেলিয়ার সর্বশেষ সফরে পাকিস্তানের মাটিতে একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে যদিও ৫৫ রানের ইনিংস খেলেছেন, সেই ইনিংস দিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১৩ ইনিংসের ফিফটি-খরা কেটেছে ফিঞ্চের।

তার চেয়েও বড় ব্যাপার, সর্বশেষ ১৪ ইনিংসে একটি ফিফটি পাওয়া ফিঞ্চের স্ট্রাইকরেট এই ১৪ ইনিংসে ১০০ পেরিয়েছে মাত্র ৫ বার। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ফিঞ্চের এমন ফর্ম অস্ট্রেলিয়াকে শুরুতেই পিছিয়ে দিচ্ছে, গত অক্টোবর-নভেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ভুগিয়েছে শিরোপাজয়ী অস্ট্রেলিয়াকে।

এমন ফর্মের কারণেই কি না, এবারের আইপিএলে শুরুতে নিলামে অবিক্রীত থেকে গেছেন ফিঞ্চ। পরে অ্যালেক্স হেলস চোটে পড়ায় কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর) দলে টানে ফিঞ্চকে। কিন্তু যোগ দিয়েও কী-ই বা করতে পেরেছেন ‘ফিঞ্চি?’ ৫৮ রানের দারুণ ইনিংসে শুরু, কিন্তু এরপর চার ম্যাচে আর তেমন রানই পাননি। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৫ ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৫২ রান।

আমার মতে ও যদি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে রানে ফিরতে না পারে, কেকেআরে যেভাবে খেলেছে সেভাবেই চলতে থাকে, তাহলে ওকে দলে নেওয়া যাবে না।
ফিঞ্চকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অস্ট্রেলিয়া দলে নেওয়া নিয়ে শেন ওয়াটসন

আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিট্যালসের সহকারী কোচ ওয়াটসন তো সেসব কাছ থেকেই দেখেছেন। দ্য গ্রেড ক্রিকেটার ওয়েবসাইটে তাই অস্ট্রেলিয়ান সাবেক অলরাউন্ডার বলছেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, এই মুহুর্তে ও যেভাবে ব্যাট করছে, আইপিএলে ওর ব্যাটিং যেমন দেখেছি, তাতে বলতে পারি ও নিজের সেরা ছন্দের ধারেকাছেও নেই। যা-ই হচ্ছে, ও নিজের টেকনিক আর মানসিকতা নিয়ে যা কাজই করছে, সেগুলো ওর নিজের সেরা সময়ের চেয়ে অনেক আলাদা।’

গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হাঁটুর চোট নিয়ে খেলেছিলেন ফিঞ্চ। সেটি তাঁর রানখরার আলোচনায় তাঁর অজুহাত হয়ে দাঁড়ায়। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পথে তাঁর অধিনায়কত্বও প্রশংসা কুড়ায়। অস্ট্রেলিয়ার নতুন প্রধান কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড ও জাতীয় নির্বাচক জর্জ বেইলিও সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন ফিঞ্চকে। তাঁদের চোখে ফিঞ্চের অধিনায়কত্ব, নেতৃত্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু ওয়াটসনের দ্বিমত, ‘আমার মতে ও যদি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে রানে ফিরতে না পারে, কেকেআরে যেভাবে খেলেছে সেভাবেই চলতে থাকে, তাহলে ওকে দলে নেওয়া যাবে না। এই মুহূর্তে ও ছন্দে ফেরার অবস্থার চেয়ে এত দূরে আছে যে, ওর অধিনায়কত্ব যতই ভালো হোক, যেভাবে ব্যাট করছে এভাবে করে যেতে থাকলে ও দলের বড় বোঝা হয়ে উঠবে। বিশেষ করে একজন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে।’

এবারের আইপিএলেও নিজের প্রথম ম্যাচের পর রানের দেখা পাননি ফিঞ্চ

অধিনায়ক বলেই ফিঞ্চকে নেওয়া উচিত হবে না, সে তো আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর চোখে দল নির্বাচনের আদর্শ পদ্ধতি কী হতে পারে, সেটিও ব্যাখ্যা করেছেন ওয়াটসন, ‘দলকে ঝোড়ো একটা শুরু এনে দিতে এই (উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের) ভূমিকাটা এত গুরুত্বপূর্ণ। ও সেখানে অসাধারণ করেছে—রোজ বোলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওর ১৫০ রানের ইনিংসের সময় আমি ওর সঙ্গেই ব্যাটিং করেছি। ও বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান, ছোট সংস্করণের ক্রিকেটে দারুণ একজন। তবে এখন ওর খেলা যে পর্যায়ে গেছে, সেটা ওই পর্যায় থেকে অনেক দূরে। আমার মতে প্রক্রিয়াটা এমন হওয়া উচিত যে, আপনি আগে একাদশ ঠিক করবেন, তারপর সেখান থেকে অধিনায়ক বেছে নেবেন। বিশেষ করে এমন একজনের ক্ষেত্রে যেখানে সে কিনা সেরা ছন্দ থেকে অনেক দূরে আছে।’

সেরা ছন্দে খুঁজে পেতে ফিঞ্চের সামনে অবশ্য বেশ কয়েকটি সুযোগ আছে। শ্রীলঙ্কায় আগামী মাসে সফরে যাওয়ার কথা অস্ট্রেলিয়ার, এরপর থেকে বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড, ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও টি-টোয়েন্টি সিরিজ আছে অস্ট্রেলিয়ার।