বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কারা খেলবে, সেটা জানা হয়ে গেলেও শীর্ষে কোন দল থাকবে, সেটা এখনো দেখার বাকি। বর্তমান ফর্ম অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ারই আজ দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শীর্ষে থাকার কথা। এটা তাদের ভারতের চেয়ে ১ পয়েন্ট এগিয়ে রাখবে। ইংল্যান্ড নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ১২ পয়েন্ট পাওয়ার আগপর্যন্ত শ্রীলঙ্কাও সেমিফাইনালের লড়াইয়ে ছিল। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শ্রীলঙ্কাও জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করতে চাইবে। দুই দলেই প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছে কিন্তু দল হিসেবে একজোট হয়ে বেশি বেশি জয় পেতে ব্যর্থ হয়েছে।
লঙ্কানরা সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যাটিং করতে পারেনি। তাদের বোলিংই বারবার তাদের সমস্যা থেকে উদ্ধার করেছে। তাদের বুড়ো সৈনিক লাসিথ মালিঙ্গা লঙ্কানদের জেতাতে অবিশ্বাস্য কিছু ওভার করেছে। শ্রীলঙ্কার এই দলে জয়াবর্ধনে ও সাঙ্গাকারার সেই ধারাবাহিকতা নেই, আবার জয়াসুরিয়া, কালুভিতারানা ও দিলশানরা যে উড়ন্ত সূচনা এনে দিত, সেটাও অনুপস্থিত। হ্যাঁ, কুশল পেরেরা অসাধারণ। কিন্তু কুশল মেন্ডিসের মতো সে-ও অধারাবাহিক। এখানেই লঙ্কানরা ভুগেছে। আভিস্কা ফার্নান্দো দারুণ একটা সেঞ্চুরি করেছে। লঙ্কানরা আশা করবে, ভারতের বিপক্ষেও যেন সে একই রকম ফর্মে থাকে।
ভারতেরও মিডল অর্ডারে সমস্যা রয়েছে। তাদের মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা এখনো ঠিক ছন্দে আছে বলে মনে হচ্ছে না। ধাওয়ানের চোটের কারণে রাহুলকে ওপরে উঠে আসতে হয়েছে। এটা ভারতের ব্যাটিং অর্ডারকে ঝামেলায় ফেলেছে। শঙ্কর সুযোগটা লুফে নিতে পারেনি। পন্তকেও চার নম্বরে জায়গা পাকা করতে হলে ঝোড়ো ইনিংসের চেয়ে ভালো কিছু করতে হবে। তার বাঁহাতি হওয়াটা একটা বড় সুবিধা। সে যদি তার ৩০ ও ৪০ রানের ইনিংসগুলোকে বড় করতে পারে, তাহলে অনেক দিনের জন্য ভারতকে ৪ নম্বর পজিশন নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। পাঁচ ও ছয় নম্বর পজিশনও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধোনি আর পান্ডিয়া ম্যাচের মোড় ঘোরানোর মতো কিছু করতে পারছে না।
বুমরা ছাড়া ভারতের বাকি বোলাররাও অধারাবাহিক। শামি ও চাহাল খুব ব্যয়বহুল বোলিং করছে। সেমিফাইনালে ভারত এ কারণে সমস্যায় পড়তে পারে। ভুবনেশ্বর এখনো নিজের পুরো ছন্দটা খুঁজে পায়নি। ভারতের কাপ জেতার জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কুলদীপকে বাদ দেওয়া ওর আত্মবিশ্বাসে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকার হারানোর কিছু নেই। তারা যদি মাঠে শুধু আনন্দের জন্য খেলতে যায়, তাহলে চমকে দিতে পারে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া যেন প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এই টুর্নামেন্টে এসেছে। গত বছর তাদের সেরা দুই খেলোয়াড় নিষিদ্ধ হওয়ায় তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেট জিতে অস্ট্রেলিয়ার মানুষের আস্থা অর্জন করতে চায় আবার, এটা তাদের আরও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করেছে। তাদের খুব সংঘবদ্ধ মনে হচ্ছে। মনে হয় না দক্ষিণ আফ্রিকাকে তারা হালকাভাবে নেবে।
অস্ট্রেলিয়া অবশ্য আগেই জেনে ফেলবে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কার ফলাফল কী হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী খেলতে পারবে। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের একটা দারুণ সমাপ্তিই হওয়া উচিত।