অশ্বিনই ঠিক, সীমা লঙ্ঘন করেছেন ধোনি

বাটলারকে মানকাড আউট করে বিতর্কের জন্ম দেন অশ্বিন। ছবি: টুইটার
বাটলারকে মানকাড আউট করে বিতর্কের জন্ম দেন অশ্বিন। ছবি: টুইটার
>আইপিএলে অশ্বিনের ‘মানকাড’ আউট এবং ধোনির মাঠে ঢুকে পড়া নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। এ নিয়ে নিজের মতামত দিলেন সাবেক বিশ্বসেরা আম্পায়ার সাইমন টফেল

আইপিএলে এবার জমজমাট ম্যাচের সঙ্গে বিতর্কিত ঘটনাও ঘটেছে। টুর্নামেন্টের শুরুতে পাঞ্জাব-রাজস্থান ম্যাচে জস বাটলারকে ‘মানকাড’ আউট করে তুমুল আলোচনার জন্ম দেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তাঁর পক্ষে-বিপক্ষে শুরু হয় তর্কযুদ্ধ। এরপর টুর্নামেন্টের মাঝপথে ম্যাচ চলাকালে মাঠে ঢুকে আম্পায়ারের একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে তর্ক করে বিতর্কের জন্ম দেন চেন্নাই অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। দুটি ঘটনা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে এখনো আলোচনা চলছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে। সংবাদমাধ্যম ক্রিকইনফোয় লেখা কলামে এ দুটি বিতর্কিত ঘটনা নিয়ে নিজের মতামত জানিয়েছেন এক সময়ের খ্যাতনামা আম্পায়ার সাইমন টফেল।

২০১২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ারিং থেকে অবসর নেওয়া টফেলকে বিবেচনা করা হয় তাঁর সময়ের সেরা আম্পায়ার হিসেবে। ৪৮ বছর বয়সী এই অস্ট্রেলিয়ানের মতে, অশ্বিন ‘মানকাড’ আউট করে ক্রিকেটের চেতনাবিরোধী কোনো কাজ করেননি। তবে ধোনি ওভাবে মাঠে ঢুকে সীমালঙ্ঘন করেছেন। টফেলের লেখা কলাম সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো—

বাটলারের রানআউটের সঙ্গে ক্রিকেটীয় চেতনার কোনো সম্পর্ক নেই
ঘটনার সময় আমি ভারতে ছিলাম এবং টিভিতে তা দেখেছি। পরে এমসিসি সাবকমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি মনে করি, এই ঘটনার সঙ্গে ক্রিকেটীয় চেতনার কোনো সম্পর্ক নেই। আলোচনার সময় আমরা ক্রিকেটীয় আইনের ৪১.১৬ ধারার বিস্তৃতি নিয়ে কথা বলেছি। বল ছাড়ার আগে বোলিং প্রান্তে ননস্ট্রাইকারের ক্রিজ ছাড়া উচিত নয়—এটাই আইনটির উদ্দেশ্য। আর ঠিক এ কারণেই আইসিসি নিয়মটির মধ্যে বলেছে, হাত ঘোরানোর সময় হাত উঁচুতে (ছাড়ার আগমুহূর্তে) পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত ননস্ট্রাইকারকে ওই বোলার রানআউট করতে পারবে।

এমসিসিকে আমি যা বলেছি, এই আউটের সঙ্গে ক্রিকেটীয় চেতনার যে কোনো সম্পর্ক নেই, তা বুঝতে সবাইকে আমরা সাহায্য করতে পারি। রানআউটের এই আইন (৩৮ নম্বর আইন) করা হয়েছে ভবিষ্যতে কেউ যেন অনৈতিক সুবিধা নিতে না পারে, সে জন্য।

ম্যাচ চলাকালে মাঠে ঢুকে পড়েছিলেন ধোনি। ছবি: এএফপি

৪১.১৬ ধারায় ফিরে আসি। বল ছাড়ার আগ পর্যন্ত ননস্ট্রাইকার যেন তার ক্রিজে থাকে, তা নিশ্চিত করতেই এই আইন করা হয়েছে। ননস্ট্রাইকার তা না করলে সে আইনভঙ্গ করছে। অনৈতিক সুবিধাটাও কিন্তু সে–ই পাচ্ছে।

অশ্বিন আম্পায়ারের কাছে রানআউটের আবেদন করেছে। বল ছাড়ার আগে সে থেমেছে এবং ডেলিভারি সুইং (হাত ঘোরানো) শেষ করেনি। এ জন্য তার প্রচুর সমালোচনা করেছেন অনেকেই। কিন্তু আইনটি যেভাবে প্রণয়ন ও প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে, সে অনুযায়ী কাজটি অন্যায্য।

মাঠের এবং তৃতীয় আম্পায়ার কিন্তু মনে করেননি, সে (অশ্বিন) স্টাম্প ভাঙার আগে বেশি সময় অপেক্ষা করে ননস্ট্রাইকারের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তাঁদের (আম্পায়ার) কাছে মনে হয়েছে, বলটা খেলার ধারার মধ্যেই ছিল।

ধোনি সীমা লঙ্ঘন করেছে
মাঠে ঢুকে আম্পায়ারের সঙ্গে ধোনির কথা বলা দেখে আমার প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বিস্মিত হয়েছি। কারণ, বছরের পর বছর ধরে ধোনিকে যেভাবে দেখেছি, তার সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাপার হলো সে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আত্মসংবরণ করে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

বুঝতে পারছি, ম্যাচে তখন অনেক চাপ ছিল। অনেক বিষয় জড়িত ছিল ম্যাচের সঙ্গে। অনেক টাকা-পয়সা এবং আবেগ জড়িত ছিল মাঠ ও মাঠের বাইরে। আইপিএল ফাইনাল পরিচালনার কারণে এই পরিবেশ আমার পরিচিত। তবে মাঠে নেই—এমন খেলোয়াড় তো বটেই, এমনকি কোচ-ম্যানেজারদের মাঠে ঢুকে আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলার বিষয়টি অনুচিত। ধোনি দোষ স্বীকার করেছে এবং আইপিএল ম্যাচ অফিশিয়ালদের জরিমানা মেনে নিয়েছে।

আম্পায়াররা যদি তার সঙ্গে কথা না বলে মাঠ থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিতেন, সেটি ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করতাম। খেলোয়াড়–পরিবেষ্টিত না হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা আম্পায়ারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যে দৃশ্যটি চোখে পড়েছে, ধোনি বোলারের প্রান্তে আম্পায়ারকে দেখিয়েছে, ‘নো বল’-এর সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। হ্যাঁ, বোলারের প্রান্তের আম্পায়ারই সিদ্ধান্ত নেবেন, তবে নিখুঁত সিদ্ধান্ত নিতে সহকর্মীর দ্বারস্থ হতে পারেন। পরিষ্কার কথায়, স্কয়ার লেগ অঞ্চলের আম্পায়ারের সাহায্য নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বোলারের প্রান্তের আম্পায়ার। ম্যাচ চলাকালে ব্যাটিং দলের অধিনায়কের মাঠে ঢুকে ওই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা চাওয়ার কোনো যুক্তি নেই। ধোনি সীমা লঙ্ঘন করেছে।