অনেক কষ্ট আর সংগ্রামের পর ওয়ানডে বিশ্বকাপের টিকিট। উচ্ছ্বাসটা তাই বাঁধভাঙাই তাদের
অনেক কষ্ট আর সংগ্রামের পর ওয়ানডে বিশ্বকাপের টিকিট। উচ্ছ্বাসটা তাই বাঁধভাঙাই তাদের

অনেক সংগ্রামের পর মেয়েদের এ অর্জন

‘এবার না হলে আবার ২০২৬ পর্যন্ত অপেক্ষা। ততদিন খেলতে পারব কি না, কে জানে’—বাংলাদেশ নারী ওয়ানডে দলের তারকা জাহানারা আলম মাসছয়েক আগে এমনটিই বলেছিলেন। ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কোয়ালিফাই করতে পারবে কি না, জাহানারার মন্তব্যটা ছিল সে প্রসঙ্গেই।

জাহানারা ও বাংলাদেশ নারী দলকে ২০২৬ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি। ২০২২ ওয়ানডে বিশ্বকাপেই প্রথমবারের মতো অংশ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশের মেয়েরা। জিম্বাবুয়েতে বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার করোনার আক্রমণে বাতিল হওয়ায় র‍্যাঙ্কিংয়ের হিসাবে এগিয়ে থাকায় বিশ্বকাপের টিকিট পেয়ে গেছে বাংলাদেশের মেয়েরা।

অর্জনটা প্রাণভরেই উপভোগ করছেন মেয়েরা

গতকাল আইসিসির প্রেস বিজ্ঞপ্তির পর নারী দলের উল্লাসের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দলের অপেক্ষাকৃত নবীন ক্রিকেটাররা যেখানে হইচই করে উল্লাস করছিলেন, তাঁদের মাঝেই সালমা খাতুন ও রুমানা আহমেদের চোখ দিয়ে ঝরছিল আনন্দাশ্রু। মুহূর্তের জন্য হয়তো গত এক দশকের ত্যাগ, নিবেদন, পরিশ্রমের গল্পগুলো মনে পড়ছিল বাংলাদেশে নারী ক্রিকেটের এই দুই পথপ্রদর্শকের। দুজনকে যিনি সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন, তিনি জাহানারা আলম। দুজনকেই জড়িয়ে ধরে বারবার বলছিলেন, ‘কেঁদো না! আমরা পেরেছি। আমরা সবাই মিলেই এটি সম্ভব করেছি।’

বাছাইপর্বে পাকিস্তানকে হারিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা

দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা অবশ্য এ প্রজন্মের ক্রিকেটার। নারী ক্রিকেটের কঠিন পথটা পাড়ি দিয়ে আসা অভিজ্ঞদের মতো আবেগ হয়তো তাঁকে খুব একটা স্পর্শ করেনি। কাল বিসিবির পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলছিলেন, ‘আমরা যে উদ্দেশ্যে এসেছিলাম, তাতে সফল হয়েছি। এই সফলতা এখানেই শেষ নয়। আমাদের এই সফলতা বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে। পুরো বাংলাদেশ আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে আমরা বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছি।’

ধারাবাহিকতাটা আগামী জানুয়ারির নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপেও ধরে রাখার আশা সালমার, ‘আমরা আসলে বিশ্বকাপে যেতে পেরে অনেক বেশি আনন্দিত। বলে বোঝানো যাবে না, এটা কত আনন্দের। আশা করব বিশ্বকাপে আমরা ভালো করব।’

অনেক দিনের চেষ্টায় পাওয়া ফলাফলের আনন্দটা যে কত মধুর হতে পারে, সেটি বোঝা গেল রুমানার কথায়, ‘এটা আমাদের অনেক দিনের চেষ্টার ফল। আমরা এখন বিশ্বকাপে। আমরা এখন আবেগটা ধরে রাখতে পারছি না। আনন্দের কথা, উচ্ছ্বাসের কথা বলে বোঝাতে পারব না। আমাদের পুরো দল অনেক আনন্দিত। আশা করি, সামনে বিশ্বকাপেও ভালো করতে পারব।’

অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে সালমা–রুমানাদের

নারী দলের কোচ মাহমুদুল ইমনের আবেগটা বাকিদের থেকে আলাদা। সিলেট বিভাগীয় কোচের পদ থেকে কিছুদিন আগেই নারী দলের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। বিদেশি কোচ খুঁজে খুঁজে হয়রান বিসিবি বাধ্য হয়ে একজন স্থানীয় কোচকেই নারী দলের সবচেয়ে কঠিন অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে পাঠিয়েছিল জিম্বাবুয়েতে। সেই মাহমুদুলের কোচিংয়েই নারী দল অর্জন করল আরেকটি ‘প্রথম’। কাল তিনি বলছিলেন, ‘আমার কোচিং ক্যারিয়ারের সেরা দিন এটি। আমাদের যে পরিকল্পনা ছিল গত এক বছরে, সেটিতে আমরা সফল। সবার চেষ্টা ছিল যেন মেয়েদের ক্রিকেট দল ভালো অবস্থানে যায়। যেন বিশ্বদরবারে অনন্য উচ্চতায় যেতে পারি। আমরা সেটা করতে পেরেছি।’

বাছাইপর্বের এই বৈতরণী পার করে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ দল পাচ্ছে আরও একটি পুরস্কার। দ্রুতই আইসিসির ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনায় জায়গা করে নিতে পারবে নিগার সুলতানার দল। ফলে বাড়বে নারী দলের ম্যাচ সংখ্যা। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো নারী ক্রিকেটের বড় দলের সঙ্গে নিয়মিত ম্যাচ খেলার সুযোগও বাড়বে।