অধিনায়কের দুর্ব্যবহারে দল ছাড়লেন ভারতীয় ক্রিকেটার

ক্রুনাল পান্ডিয়ার বিপক্ষে বড় অভিযোগ উঠেছে।
ছবি: টুইটার

আজই শুরু হলো সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফি। ভারতের ঘরোয়া এই টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট দেশটিতে তরুণ ক্রিকেটারদের প্রতিভা প্রকাশের দারুণ এক মঞ্চ। ছয়টি গ্রুপে ভাগ হয়ে ৩৮টি দল অংশ নিচ্ছে এই টুর্নামেন্টে। ‘সি’ গ্রুপের খেলায় আজ উত্তরাখণ্ডের বিপক্ষে মাঠে নেমেছে বরোদা।

ম্যাচটা রীতিমতো ‘ওয়ানম্যান শো’ বানিয়ে নিয়েছেন ক্রুনাল পান্ডিয়া। জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪২ বলে ৫ চার ও ৫ ছক্কায় ৭৬ রান তুলেছেন। আর বোলিংয়েও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩ ওভারে ২ উইকেট তুলে নিয়েছেন।

অবশ্য ক্রুনালের উপায়ও নেই। এমনিতেই অনেক বড় ঝামেলার মধ্যে আছেন। আজ এমন পারফরম্যান্স করে যদি ঝড় সামলানো যায়! ক্রুনালের বিপক্ষে অভিযোগ উঠেছে, অনুশীলনে এমন দুর্ব্যবহার করেছেন যে দল ছেড়ে চলে গেছেন এক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।

বরোদা দলে তারকা বলতে ক্রুনাল পান্ডিয়াই আছেন। দলটির অধিনায়কও এই অলরাউন্ডার। এ দলে দ্বিতীয় কোনো তারকা যদি থাকেন, সেটা দীপক হুদা। জাতীয় দলে খেলতে না পারলেও গত পাঁচ-ছয় বছর ধরেই আইপিএলের পরিচিত মুখ। করোনার সময়টায় জৈব নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টি করে তবেই দল নির্বাচন ও অনুশীলন করেছে দলগুলো। এমন অবস্থায় হঠাৎ হুদা প্রস্তুতি ক্যাম্প ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছেন। কারণ হিসেবে জানিয়েছেন অধিনায়ক ক্রুনাল পান্ডিয়ার বাজে আচরণের কথা।

এমনই পরিস্থিতি যে ২২ সদস্যের দলে হুদার বদলি হিসেবেও কাউকে নেওয়া যাচ্ছে না। প্রতিটি দল জৈব সুরক্ষাবলয়ে আছে। এমন অবস্থায় ২১ দিন লম্বা এই টুর্নামেন্টের মাঝপথে নতুন কোনো ক্রিকেটারকে বলয়ের মধ্যে আনা সম্ভব নয়। বরোদা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন তাই এ ব্যাপারে দলের ম্যানেজারের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছে। টিম হোটেল থেকে হুদার চলে যাওয়ার বিষয়টি বরোদা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএস) এক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন। আর বোর্ড সচিব অজিত লেলে বলেছেন, ‘সে বরোদা দল থেকে নাম সরিয়ে নিয়েছে এবং হোটেল থেকে চলে গেছে। ক্রুনাল পান্ডিয়ার সঙ্গে বড় ঝগড়া হয়েছে তার। আপাতত ম্যানেজারের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি।’

বরোদা দলকে বিপাকে ফেলেছে পান্ডিয়া-হুদা দ্বন্দ্ব।

অ্যাসোসিয়েশন এখনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারলেও হুদা বেশ ভেবেচিন্তেই নিজের পরবর্তী পদক্ষেপ ফেলছেন। ৪৬টি প্রথম শ্রেণি ও ৬৮ আইপিএল ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হুদা বিসিএর কাছে একটি ই-মেইল পাঠিয়েছেন। বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের সুবাদে সেটি সবার কাছে ছড়িয়ে পড়েছে।

মেইলে হুদা লিখেছেন, ‘এ মুহূর্তে আমি খুবই হতাশ, বিষণ্ন এবং চাপের মধ্যে আছি। গত কয়েক দিন ধরেই আমার দলের অধিনায়ক জনাব ক্রুনাল পান্ডিয়া সতীর্থদের সামনে আমাকে গালাগালি করেছেন। এমনকি ভাদোদারা রিলায়েন্স স্টেডিয়ামে খেলতে আসা অন্য সব রাজ্য দলের খেলোয়াড়দের সামনেও আমাকে অপমান করা হয়েছে।’

কোন ঘটনায় দল থেকে বেড়িয়ে এসেছেন, সেটাও জানিয়েছেন হুদা। গতকাল ম্যাচের আগে শেষ অনুশীলন ছিল। সে সময়ই নাকি ধৈর্যের বাধ ভেঙেছে হুদার, ‘আজ আমি নেটে অনুশীলন করছিলাম এবং প্রধান কোচ জনাব প্রভাকরের অনুমতি নিয়ে আগামীকালের ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। এরপর ক্রুনাল নেটে এলেন এবং আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে শুরু করলেন।’

আইপিএলে নিজের শেষ ম্যাচে অপরাজিত ফিফটি ছিল হুদার।

মেইলে আরও বলা হয়েছে, ‘আমাকে বললেন, “আমিই অধিনায়ক, কোচ আবার কে? বরোদা দলের আমিই সর্বেসর্বা।” এরপর দাদাগিরি দেখিয়ে আমার অনুশীলন থামিয়ে দিলেন। আমি জীবনে কখনো কোনো অধিনায়কের কাছ থেকে এমন আচরণের শিকার হইনি। আমি দলের জন্য খেলি এবং সব সময় দলের ভালোটা দেখি। আমি খুবই দুঃখ পেয়েছি। কারণ, এ খেলাকে আমি শ্রদ্ধা করি। আমার জীবনে শিক্ষার মূল্য আছে। এ অবস্থায় আমি খেলতে পারব না এবং নিজের সেরাটা দিতে পারব না। কারণ, দলের অধিনায়ক সুযোগ পেলেই আমাকে খোঁচা দিচ্ছেন এবং আমার অনুশীলনে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন।’

ম্যাচের আগে এ অভিযোগের কোনো জবাব দেননি পান্ডিয়া।