হ্যামিল্টনে সেদিন অভিষেক হয়েছিল চারজনের। বাংলাদেশের নাসুম আহমেদ ও শরীফুল ইসলাম, নিউজিল্যান্ডের উইল ইয়াং ও ফিন অ্যালেন। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের অভিষেক ইনিংসেই গোল্ডেন ডাক পেয়েছিলেন অ্যালেন, বোল্ড হয়েছিলেন আরেক অভিষিক্ত নাসুমের বলে। অ্যালেনের জন্য স্মৃতিটা নিশ্চয়ই সুখকর নয়। তবে নাসুমের কাছে অ্যালেনের উইকেট বরাবরই বিশেষ কিছু—প্রথম আউট করা ব্যাটসম্যান বলে কথা!
চলমান টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ভালো একটা শুরু এনে দিয়েছিলেন অ্যালেনই। করোনা পজিটিভ হয়ে আইসোলেশনে থাকার কারণে তিনি খেলেননি প্রথম দুটি ম্যাচ। গত ম্যাচে মেহেদী হাসানের প্রথম ওভারে দুটি চারের পর নাসুম আহমেদকে আরেকটি মেরেছিলেন অ্যালেন। এরপর অবশ্য মোস্তাফিজুর রহমানের বলে আউট হয়ে যান।
মিরপুরে আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে অ্যালেন শুরুটা করেছিলেন সাকিব আল হাসানকে রিভার্স সুইপে ছয় মেরে, তবে থেমেছেন আগেভাগেই। নাসুম আহমেদকে রিভার্স করতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছেন নিউজিল্যান্ড ওপেনার। অভিষেক উইকেট যাঁর, সেই অ্যালেনকে ফিরিয়ে খুশিটা একটু বেশিই নাসুমের। তবে এ বাঁহাতি বলছেন, অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর পরামর্শ ‘না মেনেই’ অ্যালেনের উইকেটটা পেয়েছেন তিনি।
সাকিবকে রিভার্স সুইপে ছয় মারার পরই নাসুমকে সে পরামর্শ দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। চতুর্থ ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নাসুম বিসিবির দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় শুনিয়েছেন সে ঘটনা, ‘ফিন যখন রিভার্স সুইপ করছিল, তখন (মাহমুদউল্লাহ) রিয়াদ ভাই আমাকে বললেন, “ও রিভার্স করলে তুই আরেকটু আস্তে বল করবি”। তবে আমি যখন বলটা করছি, তখন দেখলাম, ও একটু আগেই ঘুরে গেছে। ওটা দেখে আমি জোরে বল করেছি। আর তাতেই মিস টাইমিংয়ে উইকেটটা পেয়ে গেছি।’
আগেভাগেই রিভার্স সুইপে উদ্যত অ্যালেনকে নাসুম বলটা করেছিলেন শর্ট লেংথে। সেখান থেকে শটে যেমন শক্তি দরকার, অ্যালেন পাননি সেটা। অ্যালেনের উইকেটের দিকে অবশ্য আগের ম্যাচ থেকেই নজর ছিল নাসুমের, ‘আমার কাছে ফিন অ্যালেনের উইকেটটা পেয়েই সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। আর (কলিন ডি) গ্র্যান্ডহোমকে তো আমি আজ নিয়ে তিনবার আউট করলাম। তবে অ্যালেনের উইকেটটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। এর আগের ম্যাচেও আমার লক্ষ্য ছিল, যেন ওর উইকেটটা পাই আমি। আমার অভিষেক উইকেটটা তো ওরই ছিল।’
অ্যালেন, ডি গ্র্যান্ডহোম ছাড়াও নাসুম আজ নিয়েছেন রাচিন রবীন্দ্র ও হেনরি নিকোলসের উইকেট। ৪ ওভারে দুটিই করেছেন মেডেন, টি-টোয়েন্টিতে যে কীর্তি এর আগে বাংলাদেশের হয়ে ছিল শুধু নাজমুল ইসলামের। আর নাসুমের ১০ রানে ৪ উইকেটের বোলিং ফিগার—বাংলাদেশের হয়ে শুধু সাকিব আল হাসানের এর চেয়ে কম রান দিয়ে এত উইকেট নেওয়ার রেকর্ড আছে (৪/৯)।
এমন বোলিংয়ের পর আজকের ম্যাচের সেরা নাসুম ছাড়া আর কে হতে পারতেন! এ নিয়ে ১৩ ম্যাচের ক্যারিয়ার দুবার ম্যাচসেরা হলেন নাসুম। এ বাঁহাতি স্পিনার বলছেন, আত্মবিশ্বাসটা ক্রমেই বাড়ছে তাঁর, ‘আসলে (দলের) গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়েছি কি না জানি না। তবে দলের কাছ থেকে অনেক সমর্থন পাচ্ছি। বিশেষ করে অধিনায়ক ও অভিজ্ঞরা আমাকে অনেক সমর্থন করছেন। আর এতে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাচ্ছে। কোচও আমাকে নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করেন। তাঁর সঙ্গে আমি অনেক কিছু শেয়ার করি, তিনিও আমার সঙ্গে করেন। কাল অনুশীলনে কোচ বলছিলেন, এ উইকেটে আরেকটু আস্তে বোলিং করলে ভালো হয়। কাল ওটাই অনুশীলন করছিলাম, আর আজ সেটা ম্যাচে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছি।’
এমন স্পিন সহায়ক উইকেটে বোলিংয়ের ক্ষেত্রে নিজের কৌশলের কথাও জানিয়েছেন নাসুম, ‘মানিয়ে নেওয়া বলতে, (আজ) সিমে একটু হিট করেছি বেশি। মাঝেমধ্যে দুই-একটা ক্রস সিমেও বল করেছি। উইকেটে বাঁক ছিল, চেষ্টা ছিল একটা জায়গায় বোলিং করে যাওয়ার।’
ক্যারিয়ারে এ নিয়ে ১৩ ম্যাচের ১১টিতেই বোলিং ওপেন করলেন নাসুম। পাওয়ার প্লে-তে বোলিং তাই এখন আর নতুন কিছু নয় তাঁর কাছে, ‘বোলিং করে করে এখন আমি পাওয়ার প্লে-তে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। (আর) ওই সময় বল দিয়ে আমাকে বলা হয় না যে উইকেট এনে দিতে বা এ রকম কিছু। শুধু আমার মতো করে বোলিং করে যেতেই বলা হয়। আমি চেষ্টা করি যতটা সম্ভব কম রান দেওয়ার।’