>ব্যাটিং অর্ডারে যেখানে ইমরুলের নাম, সেটি আরও একটা বড় প্রশ্ন তুলে দিল। ইমরুলকে যদি মিডল অর্ডারেই খেলানো হবে, তাহলে ওপেনিং নিয়ে এত ‘কান্নাকাটি’ করা হলো কেন? প্রশ্ন আছে আরেকটাও—ইমরুলকে উড়িয়ে এনে যদি মিডল অর্ডারেই খেলানো হবে, তাহলে মুমিনুল হক কী দোষ করলেন?
সমস্যাটা না ওপেনিংয়ে ছিল! যা নিয়ে মহা শোরগোল! তামিম ইকবাল নেই। লিটন দাস আর নাজমুল হোসেন পারছেন না। এ কারণেই সব ক্রিকেটীয় প্রথা ভেঙে টুর্নামেন্টের মাঝপথে দেশ থেকে উড়িয়ে আনা দুই ওপেনারকে।
নির্বাচকেরা কিচ্ছু জানেন না, অধিনায়কও দুই-দুইজন ওপেনার আসার খবর শুনেছেন সাংবাদিকদের কাছ থেকে। শুনে মহা বিস্মিত হয়েছেন। এই নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা! সবার মনে কত প্রশ্ন—দলের ‘ত্রাতা’ হয়ে উড়ে আসা সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েস দুজনই কি তাহলে খেলছেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে? তাহলে তো আগের দুই ওপেনারই বাদ পড়ছেন, তাই না? যদি ইমরুল ও সৌম্যর মধ্যে একজন খেলেন, তাহলে কে বাদ পড়বেন—লিটন না নাজমুল? খুলনা থেকে ঢাকা, ঢাকা থেকে দুবাই—গভীর রাতে দুবাই পৌঁছানোর পর সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাসে দেড় ঘণ্টা দূরত্বের আবুধাবি গিয়ে এই গরমে ম্যাচ খেলার মতো ফিটনেস থাকবে ইমরুল-সৌম্যর?
আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা যখন ম্যাচের আগে আড়মোড়া ভাঙছেন, প্রেসবক্স থেকে সাংবাদিকেরা তাঁদের নিবিষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ করে খুঁজে পেতে চাইলেন এসব প্রশ্নের উত্তর। যে যাঁর মতো খুঁজেও নিলেন। টস হওয়ার সময় এই ম্যাচে বাংলাদেশের ১১ খেলোয়াড়ের নাম যখন জানা গেল, সেসব অনুমিত উত্তর বিদ্রূপের হাসি হাসছে সবার দিকে চেয়ে।
যদিও সেটি অন্যায়। মানুষ তো কোনো কিছু অনুমান করার সময় যুক্তি-বুদ্ধিকেই কাজে লাগায়। আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশ যে সেসবকে রীতিমতো বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিল! দুই ওপেনারকে নিয়ে এমন হাহাকার, অথচ দেখা গেল লিটন ও নাজমুল দুজনই দলে আছেন! সবাইকে অবাক করে বাংলাদেশের ইনিংস ওপেন করতেও নামলেন তাঁরা দুজনই। তাহলে এত সব নাটকের অর্থ কী!
আগের ম্যাচের একাদশে দুটিই পরিবর্তন। রুবেল হোসেনের বদলে নাজমুল হোসেন অপুকে নেওয়াটা ট্যাকটিক্যাল সিদ্ধান্ত। উইকেট এবং আফগানিস্তানের শক্তি বিবেচনা করে একজন পেসার কমিয়ে একজন স্পিনার বাড়ানো। ১৩টি টি-টোয়েন্টি খেলার পর ওয়ানডে অভিষেক হলো বোলিংয়ের চেয়ে ‘নাগিন’ নাচের কারণে বেশি বিখ্যাত এই বাঁহাতি স্পিনারের। এটি নিয়ে বড় কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু অন্য যে পরিবর্তন—মোসাদ্দেকের বদলে ইমরুল কায়েস? দুই ওপেনারকে উড়িয়ে এনে আগের তিন ম্যাচের ৭ নম্বর ব্যাটসম্যানকে বাদ দেওয়ার কী যুক্তি? সমস্যা না শুধু ওপেনিংয়েই ছিল।
এখানেই তো চমকের শেষ নয়। ইমরুল যেহেতু ওপেন করলেন না, নিশ্চয়ই তিনি ৩ নম্বরে নামবেন। ওয়ানডেতে আগের ৭০টি ইনিংসে মাত্র নয়বারই ওপেন করেননি। প্রতিবারই খেলেছেন ৩ নম্বরে। সেটি নিয়ে নিজের অস্বস্তির কথাও গোপন করেননি। অথচ ইমরুল আজ ৩ নম্বরও নন। লিটন আউট হওয়ার পর ৩ নম্বরে ব্যাটিং করতে নামলেন মিঠুন এবং খুব দ্রুতই আউট হয়ে প্রশ্নবোধক চিহ্নটাকে আরও বড় করে দিলেন। মিঠুনকে দলে নেওয়ার সময় কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, স্পিনটা তিনি খুব ভালো খেলেন। তা-ই যদি হয়, তাহলে কেন তাঁকে আগেই নামিয়ে দেওয়া? ৩ নম্বরে যাঁকে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসাবে ভাবা হচ্ছিল, সেই সাকিব আল হাসানকে ব্যাটিং অর্ডারে নামিয়ে দেওয়ারই বা কী যুক্তি?
ব্যাটিং অর্ডারে যেখানে ইমরুলের নাম, সেটি আরও একটা বড় প্রশ্ন তুলে দিল। ইমরুলকে যদি মিডল অর্ডারেই খেলানো হবে, তাহলে ওপেনিং নিয়ে এত ‘কান্নাকাটি’ করা হলো কেন? প্রশ্ন আছে আরেকটাও—ইমরুলকে উড়িয়ে এনে যদি মিডল অর্ডারেই খেলানো হবে, তাহলে মুমিনুল হক কী দোষ করলেন? তিনি কেন সুযোগ পাবেন না?
গতকাল হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে সাকিব আল হাসানের সংবাদ সম্মেলনের সারথি হয়ে আসা বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ যা বললেন, তা সত্যি হলে হাথুরুসিংহে চলে যাওয়ার পরও মুমিনুলের ওয়ানডে-ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। নতুন কোচ স্টিভ রোডসও নাকি মুমিনুলকে ওয়ানডের জন্য উপযুক্ত মনে করেন না। তাই যদি হয়, তাহলে মুমিনুলকে ওয়ানডে দলে নেওয়া হলো কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে মাহমুদ যা বললেন, সেটির কোনো মানে হয় না। আসলে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন যা হচ্ছে, তার অনেক কিছুর মানে খুঁজতেই গলদঘর্ম হতে হচ্ছে।
শঙ্খ ঘোষ অবশ্য সেই কবেই তাঁর কবিতায় লিখেছেন, ‘কোনো যে মানে হয় না, এটাই মানে।’ বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে নিশ্চয়ই না। তবে এই এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের কাণ্ডকীর্তি দেখে মনে হচ্ছে, কবিতার এই চরণেই বোধহয় আশ্রয় খুঁজতে হবে। মানে খুঁজতে গিয়ে যেমন শঙ্খ ঘোষ আসছেন, লেখাটার শিরোনাম দিতে গিয়ে উঁকি দিচ্ছেন শামসুর রাহমান। এরশাদ জমানায় তাঁর বিখ্যাত কবিতার লাইনটা একটু অদল-বদল করলেই চলছে। ঘটনাস্থল মরুর দেশ সেটি বলে খুব প্রাসঙ্গিকও হচ্ছে।
অদ্ভুত উঠের পিঠে চলেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট!